Festival and celebrations

1 week ago

Rath Yatra origins:রথযাত্রার সূচনা কোথা থেকে? জানুন জগন্নাথ রথযাত্রার পৌরাণিক উৎস

mythological origins of the Jagannath Rath Yatra
mythological origins of the Jagannath Rath Yatra

 

দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃজগন্নাথ রথযাত্রা এই বছর ২৭ জুন, শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে। প্রতি বছর, ওড়িশার পুরীতে আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রা বের করা হয়। ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রায় তাঁর সঙ্গে তাঁর ভাই বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রা উপস্থিত থাকেন। এই বছর ২০২৫ সালে, পুরীতে ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রা ২৭ জুন শুরু হবে। আসুন জেনে নিই ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রা সম্পর্কে বিশেষ কিছু বিষয়। 

ভগবান জগন্নাথের দর্শন করার পর, ভক্তদের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। তারা তাদের জীবন ভালোভাবে কাটাতে পারে এবং অবশেষে মোক্ষ লাভ করতে পারে। একই সঙ্গে, অনেক ভক্ত তাদের ইচ্ছা পূরণের আকাঙ্ক্ষায় ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রায় যোগ দেন। ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রার সঙ্গে যুক্ত আরেকটি ধর্মীয় বিশ্বাস হল, রথযাত্রায় দান করলে অক্ষয় ফল লাভ হয়।

ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রায় বিশেষ ভাবে রথ সাজানো হয়। রথযাত্রার সময় ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রা তিনটি ভিন্ন রথে বসেন। ভগবান জগন্নাথের নন্দিঘোষ নামক রথটি লাল এবং হলুদ রঙের। এটি প্রায় ৪৫.৫ ফুট উঁচু। এই রথ তৈরিতে পেরেক বা ধাতু ব্যবহার করা হয় না। এটি শুধুমাত্র নিম কাঠ দিয়ে তৈরি। এর প্রস্তুতি শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়া থেকে। রথটিতে ১৬টি চাকা রয়েছে। এটি বলভদ্র এবং সুভদ্রার রথের চেয়ে কিছুটা বড়। 

বলরামের রথের নাম তালধ্বজ, যার উচ্চতা প্রায় ১২.৯ মিটার। সুভদ্রার রথের নাম দেবদলন, যার উচ্চতাও প্রায় ১২.৯ মিটার। রথ তৈরি করার জন্য ফাসি এবং ধৌসা গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়। রথ তৈরি করেন দাসপল্লার প্রাক্তন রাজ্য থেকে আসা ছুতোঁরদের একটি বিশেষ দল, যাদের এই কাজ করার বংশগত অধিকার রয়েছে। 

ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রার পৌরাণিক কাহিনি: পদ্মপুরাণের কাহিনি অনুসারে, একবার আষাঢ় মাসে, সুভদ্রা ভগবান জগন্নাথের কাছে শহর দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এরপর ভগবান জগন্নাথ তাঁর বড় ভাই বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রাকে রথে বসিয়েছিলেন। তিনি তাদের শহর দেখানোর জন্য রওনা হন। ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রা, তাদের মাসির বাড়ি গুন্ডিচায় গিয়েছিলেন। এই তিনজন তাদের মাসির বাড়িতে সাত দিন বিশ্রাম নেন। ৮ দিন এর দিন ভগবান জগন্নাথ আবার তাঁর আবাসে ফিরে আসেন। বিশ্রামের পর তাদের বাসভবনে ফিরে আসার সময়ও অনেক জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই স্মৃতির প্রতীক হিসেবেই প্রতিবছর এই রথযাত্রার আয়োজন করা হয়।

তবে শুধু পৌরাণিক বিশ্বাস নয়, ইতিহাস বলছে রথযাত্রার অস্তিত্ব খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতেও ছিল। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের সময় এই উৎসবের প্রচলন করেছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। সেই থেকেই শুরু এই বিশাল ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা আজ আন্তর্জাতিক গুরুত্ব লাভ করেছে।

বিশ্বাস করা হয়, যাঁরা রথের দড়ি টানেন, তাঁদের পাপক্ষয় হয় ও পুন্যলাভ ঘটে। এই ধর্মীয় আস্থাই লক্ষ লক্ষ ভক্তকে টেনে আনে পুরীতে। শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই নন, নানা দেশের, নানা সংস্কৃতির মানুষও এই রথযাত্রায় অংশ নিয়ে থাকেন।

সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তি ও সম্প্রচারের মাধ্যমে আজ সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে জগন্নাথের রথযাত্রার মাহাত্ম্য। কিন্তু উৎসবের মূলে রয়েছে সেই চিরকালীন বিশ্বাস, সেই প্রাচীন পৌরাণিক গল্প—যা আজও মানুষকে আবেগে, বিশ্বাসে ও ভক্তিতে একত্র করে।


এই ভাবেই রথযাত্রা হয়ে উঠেছে আধ্যাত্মিকতা, ঐতিহ্য ও ঐক্যের প্রতীক।


You might also like!