দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :হিন্দু ধর্মে প্রতিটি দেবতার নিজস্ব বাহন রয়েছে, যার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে এক বিশেষ কাহিনি। অনেক ক্ষেত্রে সেই বাহনকেও পুজো করা হয়। আর শীঘ্রই শুরু হচ্ছে দুর্গাপুজো। মা দুর্গা মনে পড়লেই চোখে ভেসে ওঠে সিংহের উপর আসীন তাঁর মহিমাময়ী মূর্তি। কিন্তু কি কখনও ভেবেছেন, মা দুর্গার বাহন হিসেবে সিংহ কেন বেছে নেওয়া হয়েছে? এর পিছনেও আছে এক রহস্যময় পৌরাণিক কাহিনি।
দেবী দুর্গার শক্তির প্রকাশ তাঁর বিভিন্ন রূপের মতোই তাঁর বাহনেও নিহিত। সাধারণত আমরা মা দুর্গাকে সিংহবাহিনী রূপেই দেখে থাকি। ক্ষেত্রবিশেষে অবশ্য তিনি শার্দুল বাহিনী। আবার কেউ কেউ মনে করেন, অসুরও তাঁর বাহন।
পুরাণ মতে, মহাদেবকে স্বামী রূপে পাওয়ার জন্য দেবী দীর্ঘ তপস্যায় মগ্ন হন। তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব দেবীকে বিবাহ করেন। ওদিকে হাজার বছরের এই তপস্যায় মগ্ন থাকার ফলে দেবী অন্ধকারে মিশে গিয়েছিলেন। তাই মহাদেব তাঁকে ‘কালী’ বলে সম্বোধন করেন। তখন দেবী অভিমানে কৈলাস ত্যাগ করেন। এবং আবারও তপস্যায় মগ্ন হন। এই সময় এক ক্ষুধার্ত সিংহ পার্বতীকে শিকারের উদ্দেশ্যে তাঁর দিকে এগিয়ে যায়। দেবীকে ধ্যানমগ্ন দেখে সেখানেই চুপচাপ অপেক্ষা করতে থাকে সিংহটি। তপস্যা শেষে এই সিংহকেই দেবী কৌশিকীর অবতারে বাহন রূপে গ্রহণ করলেন।
অপরদিকে শ্রী শ্রী চণ্ডী অনুসারে, অসুর বধের সময় সকল দেবতারা যখন তাঁদের অস্ত্র দিয়ে দেবীকে সাজিয়ে তুলছিলেন, তখন গিরিরাজ হিমালয় দেবীকে দান করেন তাঁর বাহন সিংহকে। শক্তি, সাহস, পরাক্রম ও রাজকীয়তার প্রতীক ছিল এই সিংহ।
কোথাও কোথাও দেবীকে শার্দুলবাহিনী হিসেবেও বর্ণনা করা হয়ে থাকে। শার্দুল বলতে বোঝায় বাঘ। সিংহ ও বাঘের মধ্যে যদিও পার্থক্য রয়েছে। তবে উভয়েরই শক্তি ও সাহস একই রকম। কিছু তন্ত্র বা আঞ্চলিক সংস্কৃতিতে দেবী দুর্গার এই শার্দুল রূপটি বিশেষ প্রাধান্য পায়।
কেউ কেউ মনে করেন, অসুরও দেবীর বাহন হতে পারে। এই ধারণাটি প্রচলিত না হলেও এর একটি গভীর প্রতীকী অর্থ রয়েছে। এই ভাবনাটি সাধারণত তান্ত্রিক মতবাদ বা লোককথার মধ্যে দেখা যায়, যেখানে দেবীর ক্ষমতা এমন স্তরে পৌঁছায় যে তিনি তাঁর শত্রুকেও বশে আনতে পারেন।