দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ কলকাতাসহ হাওড়ার যে কটি উল্লেখযোগ্য বনেদি বাড়ির পুজো রয়েছে তার মধ্যে হাওড়া শিবপুরের বটকৃষ্ণ পালের বাড়ির দুর্গা পুজো উঠে আসে। এই বাড়ির পুজোর রয়েছে এক ইতিহাস। পুজোর সূচনালগ্ন প্রায় সারে তিনশো বছর আগে।
তবে যার নামে এই পুজো, সেই বটকৃষ্ণ পাল সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া আবশ্যিক। শিবপুরের পাল বাড়িতে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি মাতুরালয়ে চলে আসেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১২ বছর। এই বটকৃষ্ণ পালই পরবর্তীকালে ব্যাবসা শুরু করেন এবং সেটি পরবর্তীকালে যথেষ্ট খ্যাতি লাভ করে। খ্যাতনামা ওষুধ ব্যবসায়ী ও প্রস্তুতকারক হিসেবে বটকৃষ্ণ পালের নাম দিকে দিকে সম্প্রসারিত হয়। প্রতিষ্ঠা হয় বটকৃষ্ণ পাল এন্ড কোম্পানির। এই কোম্পানির তৈরী ওষুধ সেই সময় বিদেশেও প্রাধান্য পায়।
হাওড়ার যেকয়টি বাড়ির পুজো রয়েছে তাঁর মধ্যে পাল বাড়ির পুজো যথেষ্ট বিখ্যাত। এবং এই পুজোর রমরমা বটকৃষ্ণ পালের হাতে পড়ে বহুগুণ বেড়ে যায়। এবার এই বাড়ির পুজোর অভিনবত্বের দিকে আসা যাক। এই বাড়িতে দেবী অভয়া দুর্গারূপে পুজিতা। তাঁর দুইটি হাত, তিনি সিংহবাহিনী। দেবীর হাতে নেই কোনো অস্ত্র। একচালার মাতৃ প্রতিমার পাশে অবস্থান করছেন লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্ত্তিক, ও গণেশ। দেবীর সাথে মহিষাসুর থাকেন না।
লোকমুখে প্রচারিত, শিবপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গা ও পাল বাড়ির দুর্গা নাকি দুই ভগিনী। এই পরিবারেন দেবী অভয়া রূপেই পুজিতা, কিন্তু পুজোর রীতি সম্পন্ন হয় সম্পূর্ণ শাক্ত মতে।
কৃষ্ণানবমী তিথিতে বাড়ির চন্ডীমন্ডপে হয় বোধন। সপ্তমীতে ঠাকুরদালানে নবঘটের জল দিয়ে নবপত্রিকা স্নান করানো হয়। পাল বাড়িতে পুজোর তিনদিনই বলিদান হয়। সপ্তমীতে পাঁঠাবলি এবং সন্ধিপূজোয় ফল বলি এই বাড়ির রীতি। এছাড়াও মহিষ বলির প্রথাও আছে এই বাড়িতে। পাল বাড়ির পূজোয় দেবীকে অন্নভোগ দেওয়ার রীতি নেই। লুচি নানারকম মিষ্টি ও ফল সহযোগে দেবীকে ভোগ দেওয়া হয়।
পাল বাড়ির পূজোয় বিসর্জ্জনের রীতিও কিছুটা ভিন্ন। দশমীর দিন বাড়ির ছেলেরা কাঁধে করে মাকে নিরঞ্জনের জন্য গঙ্গার ঘাটে নিয়ে যান। পাল বাড়িতে প্রতিবছর একই কাঠামোয় পূজো হয় এবং কয়েকশো মানুষকে ভোগ খাওয়ানো হয়।