দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ষষ্ঠীর সকাল পুজামন্ডপের পাশেই বেল গাছের একটি শাখা আর সেখানেই ষষ্ঠীপুজোর জন্য সমবেত হয়েছেন অঞ্চলের এয়ো নারীর দল। বেল বরণ পর্ব শেষে হবে মায়ের বোধন।
কখনো কী ভেবে দেখেছেন কেন এই বোধন?কেন বোধন অনুষ্ঠান করা হয় পূজারম্ভের আগে?সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ব্যপি বিরাট কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন পূজা বলে ‘বোধন’ হিসেবে পরিচিত।বলে রাখা ভাল বোধন কথা টি আদপে চলিত ভাষা মূল শাস্ত্রীয় শব্দটি হল ‘কল্পারম্ভ’! কল্প অর্থাৎ বৈদিক প্রথাগত ধর্মগঠিত ক্রিয়া এবং উৎসব। আরম্ভ মানে সূত্রপাত।
এই বোধন বা কল্পারম্ভের অর্থ হল দেবতার ঘুম ভাঙানো। শাস্ত্রকরেরা বলছেন, আমাদের বৎসর হল দেবতাদের অহোরাত্র। অর্থাৎ ছয় মাস দিন, ছয় মাস রাত্রিকাল। মাঘ থেকে আষাঢ় মাস হল দিন এবং শ্রাবণ হতে পৌষ হল রাত্রি। রাত্রি কাল মানেই হচ্ছে ঘুমের সময়, সেই সময় তাদের ঘুম ভাঙানো নিষ্ঠাভরে হওয়া উচিত হঠাৎ করে হাঁকডাক করে তার ঘুম ভাঙ্গালে, তিনি ক্রুদ্ধ হতে পারেন। তাই এই কল্পারম্ভ বা বোধন পূজার অবতারণা করা হয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে ধীর লয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করে একটু একটু করে ঘুম ভাঙাতে হবে দেবীর।
তবে এই বোধনের ভাগ আছে। ১. নবম্যাদি কল্পারম্ভ এবং ২. প্রতিপদাদি কল্পারম্ভ
নবম্যাদি কল্পারম্ভ হল ১৩ দিনের পূজা। কৃষ্ণপক্ষের নবমী থেকে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী পর্যন্ত ১৩ দিনের পূজার্চনা। প্রতিপদাদি কল্পারম্ভ হল ৬দিনের পূজা। মহালয়ার অমাবস্যার পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে ষষ্ঠীর দিন।
আরেকটি বোধনের বিধান দেওয়া আছে বারোয়ারি মন্ডপ বা সর্বজনীন পূজাগুলির জন্য। কারণ সেখানে দেবীর বোধন ১৩ দিন বা ৬ দিন ধরে করা সম্ভব নয়। তাই ষষ্ঠীর দিনেই সারা হয় বোধন। সেই বোধনের নাম ‘ষষ্ঠ্যাদি বোধন’।
উল্লেখ্য, সকল যত বারোয়ারি পূজামণ্ডপ সবাই এই রীতিকে অনুসরণ করে মায়ের নিদ্রা ভাঙান। মন্ত্রে বলা হয় হে উষা, হে মা, হে ধরিত্রি দুহিতা মাতা তুমি উদয় হও, প্রকাশ হও। শস্য দাও, প্রাণ দাও, আলো দাও।
(তথ্যসূত্রঃ বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পঞ্জিকা ও পুরোহিত দর্পণ)