গুয়াহাটি, ২২ জুন : বৃহস্পতিবার ভোররাত ২-টা ৩২ মিনিটে প্রবৃত্তি হবে মা কামাখ্যাদেবীর অম্বুবাচি। নিবৃত্তি হবে ২৬ জুন। এদিন দিবা ২-টা ৫৬ গতে নিবৃত্তির পর মন্দিরের মূল পুরোহিত তাঁর অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে মা কামাখ্যার বিশেষ পুজোর পর সম্পন্ন করবেন নিত্যপূজা। নিত্যপূজার পর মন্দিরের দরজা ভক্তবৃন্দের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
কামাখ্যা ধামের অম্বুবাচি মহাযোগ পরিচালন সমিতির পদাধিকারীরা জানিয়েছেন, মায়ের প্রবৃত্তির পর ২৩, ২৪ এবং ২৫ জুন মন্দিরের দরজা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। দরজা খোলা হবে ২৬ তারিখ বিকেলে প্রায় সাড়ে তিনটার পর।
অম্বুবাচি উপলক্ষ্যে অসমের রাজধানী গুয়াহাটির নীলাচল পাহাড়ে অবস্থিত কামাখ্যা মন্দিরে জপতপ করে সাধনা-সিদ্ধির জন্য দেশ ও বিদেশের লক্ষাধিক ভক্ত, সন্ন্যাসী, সাধুসন্ত, নাগাসাধু, মহাপুরুষ এসে ভিড় জমিয়েছেন। তাঁরা দেবীর প্রবৃত্তির আগে গতকাল রাত পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দিরে প্রবেশ করে পূজা-অর্চনা করেছেন।
প্রত্যেক বছর তিনদিন বিশেষভাবে মন্দিরের দরজা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকে। এ সময় পূজা-পার্বণ সমস্ত কিছু বন্ধ থাকে। বলা হয়, মা কামাখ্যা এ সময় রজঃস্বলা হন। এ সময় শক্তিপীঠ কামাখ্যা ধামে আধ্যাত্মিক শক্তি অনেক বেড়ে যায়। তাই এই সময় আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক সাধুসন্ত এসে উপস্থিত হন কামাখ্যা ধামে। অম্বুবাচি উৎসব কৃষির সঙ্গেও যুক্ত। ফলে এই উৎসবকে এখানকার মানুষজন খুব শুদ্ধাচারে নিয়মনীতির মাধ্যমে উৎসাহের সঙ্গে পালন করেন।
অম্বুবাচি মেলা উপলক্ষ্যে ফুলের মালা ও আলোকসজ্জায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে কামাখ্যাধামকে। ইতিমধ্যে অম্বুবাচিতে পুণ্যার্জন করতে এসেছেন সুদূর ইউরোপ, মস্কো থেকে কয়েকজন ভক্ত। তাঁদের কেউ পরেছেন সাদা কুর্তা-পাজামা, আবার কেউ গৈরিক বসন। এসেছেন হিমালয়, বিন্ধ্যাচল ও সংলগ্ন এলাকার বহু সন্ন্যাসীও।
বেণারস থেকে মন্দির চত্বরে এসে ধ্যানাসনে বসেছেন ১২৬ বছর বয়সি পদ্মশ্রী ডা. শিবানন্দ বাবাও। মোদ্দা কথায়, দেশ-বিদেশ থেকে আগত সাধুসন্তরা বিধি অনুযায়ী ঈশ্বর সাধনায় মগ্ন থাকবেন এই কয়দিন। সময় সময় তাঁরা মন্দির প্রদক্ষিণও করবেন। ইতিমধ্যে কামাখ্যায় মস্কো থেকে মহিলা সন্ন্যাসিনীরও আগমন ঘটেছে।
আগমন ঘটেছে বেশ কয়েকজন কিন্নর (তৃতীয় লিঙ্গ) সন্ন্যাসীরও। প্রতিবছরের মতো এবারও এসেছেন কিন্নর আখড়ার মহামন্ত্ৰী মা ভবানী। ওই সকল সাধুসন্তদের চরণস্পর্শ করে বহু দর্শনার্থী ধর্মালোচনার পাশাপাশি আশীর্বাদও যাচ্ঞা করছেন।
এদিকে, মেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত পূর্ত বিভাগ, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিদ্যুৎ কোম্পানি, গুয়াহাটি পুর নিগম, পুলিশ, চিকিৎসকের দল, পরিবহণ, এনডিআরএফ-এসডিআরএফ, এনসিসি, স্কাউট অ্যান্ড গাইডস প্রভৃতি বিভাগের বহু কর্মকর্তা নিজের নিজের দায়িত্ব পালন করতে মাঠে নেমে পড়েছেন। মেলাকে সর্বাঙ্গসুন্দর ও নির্ঝঙ্ঝাট করতে সকল বিভাগের কর্তাদের সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন জেলাশাসক এবং অম্বুবাচি মহাযোগ পরিচালন সমিতির পদাধিকারীরা।