Breaking News
 
Droupadi Murmu : রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর দীপাবলির শুভেচ্ছা Subhendu Adhikari: দুর্গাপুরকাণ্ডে আইনি লড়াই! ধর্নার অনুমতি চেয়ে হাই কোর্টে বিজেপি, পালটা জমায়েত সরাতে আদালতের দ্বারস্থ মেডিক্যাল কলেজ Arjun Singh: 'কঠোর পদক্ষেপ নয়'! এফআইআর-এর বিরুদ্ধে অর্জুন সিংকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত রক্ষাকবচ দিল কলকাতা হাই কোর্ট Jagadhatri Puja:চন্দননগরে আর 'সাট ডাউন' নয়! বিদ্যুৎ পরিষেবা সচল রেখেই এবার শোভাযাত্রা, বড় ঘোষণা প্রশাসনের Amit Shah: আর নয় বিলম্ব! বঙ্গ বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ক্ষোভ মেটাতে কড়া বার্তা দিতে পারেন অমিত শাহ Google: ১.৫ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ! অন্ধ্রপ্রদেশে AI হাব গড়তে চলেছে Google, ঐতিহাসিক পদক্ষেপ ভারতের ডিজিটাল যাত্রায়

 

Editorial

2 years ago

Rabindra philosophy & Modern Society: আধুনিক সমাজ গঠনে রবীন্দ্র দর্শনের ভূমিকা ও প্রভাব

Rabindra philosophy & Modern Society
Rabindra philosophy & Modern Society

 

বাঙালির মননে , শিক্ষণে, সহবতে তাঁর প্রভাব সর্বোত্র, তিনি আর কেউ নন তিনি বাঙালির প্রানের ঠাকুর রবি ঠাকুর। তাঁর লেখনিতে সমসাময়িক সময়ের পাশাপাশি আধুনিক সময়ের ধ্যান-ধারণা, সংকট, সমাধান , মনোস্তত্বের নানা দিক উঠে এসেছে। রবীন্দ্রনাথের লেখা  তার ধ্যান-ধারণা বরাবরই বুঝিয়ে দিয়েছে তিনি চলতি হাওয়ার পন্থী ছিলেন না। তাঁর লেখা বরাবরই স্পর্ধা দেখিয়েছে , উঠে এসেছে সমাজ ও মানব মনের সেই সব দিকগুলি, যা সম্পর্কে আজ হয়ত আমরা খোলাখুলি কথা বলতে সক্ষম কিন্তু সেই সময়ই মনের কথা জানানো, নিজের মতামত সমাজের সামনে তুলে ধরা সে এক বিষম ব্যাপার ছিল। পুরুষ শাসিত সমাজে নারী মনের কথা বা তার ইচ্ছার প্রকাশ তৎকালীন সময়ে ব্যাভিচারিতার নামান্তর ছিল। কিন্তু কবি গুরুর লেখনী সেই স্পর্ধা,ব্যাভিচারিতাকেই প্রশ্রয় দিয়েছেন বারে বারে। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেবল কবি ছিলেন না , একাধারে তিনি ছিলেন লেখক ,শিল্পী, সমাজ সংস্কারক,সঙ্গীতজ্ঞ এবং দার্শনিক। তার দর্শন আধুনিক সমাজের অগ্রগতির জন্য পথপ্রদর্শকের কাজ করে চলেছে। তিনি আজও আমাদের সমাজের জন্য যেমন প্রসঙ্গিক তেমনি ওতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। তাঁর চিন্তন, ভারতীয় ও বিশ্ব সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল। তাঁর দর্শন, সমাজের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক এবং ব্যক্তিবাদ ও সৃজনশীলতার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে, এবং আধুনিক সমাজকে নানা ভাবে প্রভাবিত করে চলেছে। 

অধুনা কলকাতায় ১৮৬১ সালে ৭ই মে , তিনি তৎকালীন বঙ্গ সমাজের শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। ঠাকুর বাড়ির ১৩ জন সন্তানের তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। ছোট থেকেই তিনি ছিলেন সবার থেকে আলাদা, স্বতন্ত্র। চলতি ছক ভেঙ্গে নতুন কিছু করার জন্যই যেন তাঁর আগমন। প্রথাগত শিক্ষা তাঁর কাছে এক বিষম ব্যাপার হয়ে উঠছিল দিন প্রতিদিন , সে কারনে বাড়িতেই তার শিক্ষা গ্রহন শুরু হয়। শিক্ষা গ্রহনের পাশাপাশি তিনি অল্প বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন এবং ষোল বছর বয়সে তার প্রথম কবিতার বই প্রকাশ করেন। সাহিত্যিক কর্মজীবন ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত। কবিতা, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং ছোট গল্পগুলির মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং আধ্যাত্মিক বিষয়ের পাশাপাশি প্রেম , প্রকৃতি , রোমান্টিসিজম ধরা পড়েছে। একজন লেখক হবার পাশাপাশি তিনি একজন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মীও ছিলেন।তৎকালীন ব্রিটিশ শাসিত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গেও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত  ছিলেন তিনি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী রবি ঠাকুর প্রায় দুই হাজারেরও বেশি গান লিখেছেন ও এইগুলির অনেক কটির সুর ও তাঁর নিজের করা। এক কথায় ভারতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদান অপরিসীম, তার উত্তরাধিকার বিশ্বজুড়ে লেখক, শিল্পী এবং চিন্তাবিদদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে। 

শিল্পী হিসাবে তিনি চিরকাল অদ্বিতীয় হয়ে থাকবেন, তবে তাঁর দর্শন সমাজ গঠন ও তার অগ্রগতিতে  যে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে সে বিষয় তেমন করে ওয়াকিবহাল নয় অনেকেই। বর্তমান সময়ে শিক্ষায় তাঁর দর্শনের প্রভাব যে যুগান্তর এনেছে তা নিয়ে দ্বিমত নেই। তাঁর দর্শনের অনুপ্রেরনায় শান্তিনিকেতন গড়ে ওঠে যা শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। বর্তমানে তাঁর চিন্তনের আধারে গুরুকুল প্রথার মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষাদান সম্পাদিত হয় বিশ্বের অন্যত্তম বহুল চর্চিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শান্তিনিকেতনে। এই প্রতিষ্ঠানে কেবল প্রথাবহির্ভূত প্রথাগত শিক্ষাদান করা হয় তাই নয় এর পাশাপাশি গান্ধীজির বুনিয়াদি শিক্ষার অনুপ্রেরনায় এখানে নানা বিধ হাতের কাজ তথা শৈল্পিক শিক্ষাদানও হয়ে থাকে। যা কেবল বাংলা বা ভারতেরই নয় বরং বিশ্বের দরবারের এক উদাহরণস্বরূপ। এক কথায় শান্তিনিকেতন বিশ্বব্যাপী এক প্রগতিশীল তথা বিকল্প শিক্ষার মডেল হয়ে উঠেছে। 


তিনি মননে চিন্তনে যে কতদূর প্রগতিশীল তা তাঁর সৃষ্টিতে ধরা পড়েছে বারে বারে। কাব্য, কবিতা , উপন্যাসে আজকের আধুনিক নারীর মনোস্তত্বের প্রকাশ ঘটেছে। তাঁর সৃষ্ট প্রতিটি নারী চরিত্র হয়ে উঠেছে আধুনিকা। সে তাঁর উপন্যাস "চোখের বালি"-র  বিনোদিনী ই হোক অথবা 'ঘরে বাইরের' নায়িকা বিমলা প্রতিটি নারী চরিত্রের মধ্যে প্রগতিশীলতার ছাপ রেখেছেন তিনি। অর্থাৎ তাঁর সুপ্ত হৃদয় আজকের আধুনিক নারীর কল্পনা করেছে, যে নারী হবে স্বয়ং সম্পূর্ণা ,অন্দর মহল থেকে বাহির মহলে যার অবাধ চরাচর হবে , সে নারী শিক্ষার আলোয় হবে সমস্ত সংস্কার থেকে মুক্ত। 


 কেবলমাত্র সমাজের ক্ষেত্রেই নয় তাঁর দর্শন পরিবেশ সংরক্ষনের ক্ষেত্রে ও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য তিনি একজন দৃঢ় প্রবক্তা ছিলেন। তাঁর "সোনার তরী" কাব্য গ্রন্থ অথবা "ছিন্ন পত্র"-র নানা লেখায় প্রকৃতি ও পরিবেশের নানা কথা নানা মনোগ্রাহী বর্ণনা ও তার প্রতি তাঁর প্রেম ও ভালবাসা প্রতিফলিত হয়েছে। প্রকৃতিকে ভালোবাসলে সে যে সেই ভালোবাসাই ফিরিয়ে দেবে, এই দর্শন লেখকের বহু লেখনীতে বারে বারে ফুটে উঠেছে। কখন তিনি কলোরব করে দুর্বার গতিতে বয়ে চলা পদ্মার মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করেছেন, তো কখনো আবার বর্ষার প্রথম বারি ধারায় সিক্ত মাটিতে যে প্রথম প্রাণের সঞ্চার তাকে কবি মানবিক রূপ দিয়ে প্রকৃতির মধ্যে যে প্রাণের সুধা লুকিয়ে রয়েছে তা তুলে ধরেছেন সকলের কাছে। তাঁর লেখার মধ্যে এহেন বর্ণনার দ্বারা তিনি পাঠক মনকে আলোড়িত করে এই বোধের উন্মেষ করতে চেয়েছিলেন প্রকৃতি এবং প্রাণ অভিন্ন। প্রকৃতির মধ্যে যে প্রাণ তার সঠিক লালন পালনের মধ্য দিয়ে ক্রমেই সে পরিবেশ ও প্রকৃতিতে বসবাসকারী সকলকে পরিপুষ্ট করবে। বর্তমান সময়ে তাঁর এই ধারণা আজও পরিবেশ কর্মী ও চিন্তাবিদদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে।  


সামগ্রিকভাবে, তাঁর দর্শন কেবল ভারতবর্ষ নয় বিশ্ব সমাজে ও প্রভাব বিস্তার করেছে। তাঁর প্রগতিশীল চিন্তা সাহিত্য থেকে সমাজ সকল ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছে।তিনি আধুনিক ভারতের শ্রষ্ঠা না হলেও তিনি আধুনিক ভারত গঠনের অন্যতম পথপ্রদর্শক ছিলেন। তাঁর লেখনী জীবন দর্শন আধুনিক সমাজ সংস্কারক থেকে দার্শনিক, কবি লেখক সকলকে নতুন পথের মার্গ দর্শন করিয়েছে। এক কথায় তাঁর ধারণাগুলি জীবন ও সমাজের  সর্বস্তরের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে এবং তাঁর উত্তরাধিকার ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়েছে। তাঁর জীবন সীমিত কিন্তু তাঁর কর্ম, তাঁর চিন্তন, তাঁর দর্শন মানুষের জীবনব্যাপী অসীম তার বিস্তার, তার অন্ত নেই। প্রতি প্রজন্মেই তাঁর নব বিস্তার প্রতি প্রজন্মেই তিনি প্রাসঙ্গিক।

You might also like!