Editorial

1 year ago

The Geeta : গীতা ও পাশ্চাত্য ব্যাক্তিত্ব

The Gita and Western Personality
The Gita and Western Personality

 

 -:ড: সূর্য শেখর পাঠক:-

শ্রী মদভগবত গীতার উপদেশ সর্বকালের সর্ব দেশের ও সর্বজাতির জন্য উপযোগী, গীতা তে বলা হয়েছে কীভাবে গৃহস্থ ধর্ম পালন করেও কোনো ব্যক্তি সন্ন্যাসী বা যোগী হতে পারে। মহাকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন আমেরিকা গেছিলেন তখন শিকাগো ইউনিভার্সিটি তে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়। কবি সেখানকার সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থাগার - এর লাইব্রেরিয়ান এর কাছে লাইব্রেরির সবচেয়ে বৃহৎ গ্রন্থটি দেখবার ইচ্ছে প্রকাশ করলে সেই লাইব্রেরিয়ান রেশমের রুমালে বাঁধা একটি ছোট্ট বই কবির সামনে রেখে বলেন, ' আমি এইটিকে সংসারের সবচেয়ে মহান গ্রন্থ বলে মনে করি ।' রবীন্দ্রনাথ রুমাল খুলে দেখেন সেটি ভগবত গীতার ইংরেজি অনুবাদ । 

কিনিয়ার স্বর্গীয় রাষ্ট্রপতি জমো কেন্যাটা প্রতিদিন সকালে ' গীতা ' পাঠ করতেন । সংযুক্ত রাষ্ট্রের সেক্রেটারী জেনারেল স্বর্গীয় শ্রী হৈমর শোল্ড ' গীতা ' সর্বদা নিজের পকেটে রাখতেন । যখন তিনি আফ্রিকাতে বিমান দুর্ঘটনাতে মারা যান তখন তাঁর পকেট থেকে ভগবদগীতা পাওয়া যায়।

সংস্কৃতের জার্মান বিদ্বান জে. ডবলিউ. হোঅর যিনি বহু বছর হিন্দুস্থানে খ্রিস্টান মিশনারীর কাজ করে অবশেষে হিন্দু ধর্মের প্রতি প্রভাবিত হয়ে ' গীতা ' সম্পর্কে মন্তব্য প্রকাশ করতে গিয়ে লেখেন ------- ' জার্মানীর কল্পনার কেন্দ্রে গীতা স্থান লাভ করেছে, এর মহত্ব কোনো দিন শেষ হবার নয়। এটি প্রতিটি কালের জন্য সত্য । গীতা ইন্ড - জার্মান ইতিহাসের মহত্বপূর্ণ কালাবধিকে প্রস্তুত করে ------ গীতা আমাদের জীবনের প্রতিটি রহস্য কে বোঝাবার চেষ্টা করে এবং আমাদের কর্তব্য কি তাঁর উপদেশ দেয় । কর্ম করলে আমরা আপনা আপনি জানতে পারবো জীবনের রহস্য কি ।' 

হিন্দুস্তান এর প্রথম ইংরেজ গভর্নর লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস হিন্দুধর্ম আর ভগবদগীতার কতটা প্রসংশক ছিলেন তা তাঁর সেই ভূমিকা থেকে স্পষ্ট হয় যেটি তিনি স্যর চার্লস বিল্কিন্সের ' গীতা ' র ইংরেজী অনুবাদের গ্রন্থটির জন্য  লেখেন । এই অনুবাদটি ১৭৮৫ শতাব্দীতে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়। ওয়ারেন হেস্টিংস লেখেন ---- ' আমার ' গীতা ' র সম্পর্কে অভিমত  

প্রকাশ করতে বিন্দু মাত্র সংকোচ নেই । এটি একটি স্বতন্ত্র মহান কলাকৃতি । এর আদর্শ মহান ও আশ্চর্যজনক । তর্ক এবং দর্শন গ্রন্থ রূপে এর জুড়ি নেই। এর মৌলিক সিদ্ধান্ত অত্যন্ত শক্তিশালী ।'

 আমেরিকার সুপ্রসিদ্ধ দার্শনিক মহাত্মা থোরো এই গ্রন্থের মহিমা বর্ণনা করে লেখেন ---- ' আমি প্রতিদিন সকালে উঠে আপন হৃদয় ও মস্তিষ্ককে গীতার পবিত্র জলে স্নান করায় । গত দুনিয়ার সমস্ত স্মৃতির মধ্যে গীতার চেয়ে অধিক আশ্চর্যজনক আর কিছু নেই ।'

  মহাত্মা গান্ধী বলতেন - ' গীতা আমার মা । যখন কখনো কোন জটিল ------ আধ্যাত্মিক বা রাজনৈতিক সমস্যা আমার সামনে এসে উপস্থিত হয় তখন আমি গীতা মায়ের স্বরণ নিয়ে থাকি । আর কোন - না - কোন রাস্তা দেখতে পেয়ে যায়। '

  গীতার মৌলিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে নিষ্কাম কর্মের । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন -সংসারের কোনো জীব কর্ম ছাড়া থাকতে পারে না । কোন জীব এ থেকে মুক্তি পেতে পারে না । চোখ কান নাক বন্ধ করে নিলেও, মুখে তালা এঁটে নিলেও, হাত পা চলা ছেড়ে দিলেও কর্মকে কেও পরিত্যাগ করতে পারে না। এটি প্রকৃতির এমনি অপরিহার্য নিয়ম যে , মানুষ কিছু না কিছু কর্ম করতে বাধ্য হয়ে যায়। কেননা কর্মের সম্পূর্ণ ত্যাগই মৃত্যু । কোন মানুষ গেরুয়া ধারন করে দূর দূরান্তের জঙ্গলে বা কোন পাহাড়ের গুহায় গিয়ে বসলেও তাকে সত্যিকারের সন্ন্যাসী বলা যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে নিজের মন থেকে সমস্ত কামনাকে দূর করে দিতে পারে । তুমি যে কর্মই ফলের ইচ্ছা না করেই করো, যা কিছু অপরের মঙ্গলের জন্য কর । নিজের কর্মের ফল ঈশ্বরের উপরে ছেড়ে দাও-নিস্বার্থ  কর্মই হচ্ছে কর্মের ত্যাগ ।'  




You might also like!