Editorial

1 year ago

Book Fair : মোবাইল আসক্তি দূর করে বইয়ের পাঠক তৈরি করা প্রয়োজন

necessary to eliminate mobile addiction and create book readers
necessary to eliminate mobile addiction and create book readers

 

-:রবীন্দ্র কুমার শীল:-   

বই পাঠক তৈরি করে, সেটা উপলব্ধি করে, বিমল মিত্র ‘আসামি হাজির’ বইটি লিখলেন| সেই বইটিও পাঠক তৈরি করেছে| বিশাল লেখার সমাহারে বইটি তৈরি হয়েছে| এই বিশাল বইটির গল্পের মধ্যে একটি ছন্দ রয়েছে| সেই লেখার ছন্দই পাঠকদের বই পড়ার আগ্রহ বৃদ্ধি করেছে| বিমল মিত্রের আর একটি বই রয়েছে তার নাম হচ্ছে ‘বেগম মেরি বিশ্বাস’| মহাভারত আকারে বই বলা যেতে পারে| বাংলার নবাবের পতন এবং ইংরেজ শাসনের সূচনার পটভূমিকায় বইটি লেখা হয়েছে| বইটি পড়তে শুরু করলে একেবারে শেষ না করে ওঠা একেবারে অসম্ভব| বিশাল আকারের লেখা উপন্যাসটি পড়তে একেবারে বিরক্ত লাগবে না| তখন বই পড়ার একটা নেশা ছিল| আবার উল্লেখযোগ্য লেখকেরাও ছিলেন| তারা প্রত্যেকেই উন্নতমানের বই লিখতে পারতেন| শংকরের লেখা ‘কত অজানারে’ বইটি কতগুলি সংস্করণ হয়েছে তা বোধ হয় কেউ জানে না| প্রতি বছরই এই বইটি সংস্করণ হয়েছে| বাঙলিরা প্রত্যেকেই এই বইটি পড়েছেন| আবার তাঁর লেখা আর একটি বই ‘চৌরঙ্গী’ বইটিও খ্যাতি অর্জন করেছে| বাঙালি জীবনে ‘স্যাটা বোস’ চরিত্রকে নিয়ে আসেছিলেন লেখক শংকর| ফার্ন রোডে আর একজন গোয়েন্দা লেখক থাকতেন| তিনি ছিলেন ডাক্তার নীহারঞ্জন রায়| তিনি গোয়েন্দা উপন্যাস গল্প লিখতেন| তাঁর গোয়েন্দা চরিত্র ছিল কিরীটী রায়| ‘কালো ভ্রমর’ বিখ্যাত গোয়েন্দা বই| দস্যু কালো ভ্রমরের সঙ্গে কিরীটা রায়ের গ্রেফতারের গল্প| দস্যু কালো ভ্রমরকে ধরতে পারছে না গোয়েন্দা কিরীটি| দস্যুকে ধরতে বর্মা পর্যন্ত ছুটে গিয়েছে| চোখে ধুলো দিয়ে দস্যু কালো ভ্রমর ঘুরে বেড়াচ্ছে| আর কিরীটী তাকে ধরতে পিছু ধাওয়া করেছে| এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো গল্প| আসলে বই লেখা হবে একেবারে সরস করে| সরস বই লেখক হতে পারলে তাকে আর বই ছাপানোর কথা চিন্তা করতে হবে না| পাঠকেরা প্রকাশদের বিরক্ত করে ছাড়বে|প্রকাশ নিজেদের বাঁচার তাগিদে লেখকের বইটি প্রকাশ করবে| প্রকাশ হয়ে বইটি অপেক্ষামান পাঠকদের হাতে পড়তে দুটো পয়সার মুখ দেখতে পারে প্রকাশকেরা| কার্টুন শিল্পী নায়ারণ দেবনাথ নিজে ছবি আঁকতেন এবং গল্প লিখতেন| তিনি নিজেই সেই গল্প তৈরি করতেন| তাঁর সৃষ্টি চরিত্রগুলির মধ্যে বিখ্যাত হয়েছে ‘বাঁটুল দি গ্রেট’ এবং ’হাঁদা ভোঁদা’| এই সব কার্টুন এক সময়ে পাঠক সৃষ্টি করেছিল| শিশু পাঠক তৈরি হয়েছিল| এখন শিশুরা মোবাইল দিয়ে কার্টুন দেখে| কিন্তু যখন মোবাইল ছিল না তখন ছিল ‘শুকতারা’ এবং ‘শিশুসাথী’ বা ‘মৌচাক’ এর মতো শিশুদের মাসিক পত্রিকাগুলি| শিশুদের বহু বইও ছিল পড়ার মতো| ‘ঠাকুমার ঝুলি’, ‘রাক্ষস খোকস’, ‘ঠাকুরদার ঝুলি’| এই সব বইগুলি শিশুদের পড়তে উৎসাহ দিত বাড়ির অভিভাবকেরা| কিন্তু আজকে সেই অভিভাবকেরা নেই| তারা কোথায় হারিয়ে গিয়েছে| ‘নবকল্লোল’ পত্রিকা ছিল| ছিল ‘দেশ’ পত্রিকা| দেশ পত্রিকা তো লেখক এবং পাঠক সৃষ্টি করতো| তারা যেসব গল্প উপন্যাস এবং প্রবন্ধ প্রকাশ করতে তা বই আকারে বের করতে প্রকাশকেরা লেখকের দ্বারে গিয়ে উপস্থিত হতো| আজকে সেই জগৎটা একেবারে উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করে দিয়েছে| এখন লেখকদের প্রকাশক খুঁজে বের করতে হয়| প্রকাশকেরা লেখক খুঁজতে বের হয় না| তার কারণ বোধ হয় ভালো লেখক সৃষ্টি হচ্ছে না| জন্প্রিয় লেখকদের বয়স হয়ে গিয়েছে| ফলে তারা আর লিখতে ইচ্ছা প্রকাশ করছে না| আবার নতুন শক্তিশালী লেখক বা কবি তৈরি হচ্ছে না| তবে যেভাবে এর মধ্যে বইমেলা ক্রমশ আকর্ষন বৃদ্ধি করতে শুরু করে দিয়েছে তাতে বাংলার সংস্কৃতি রক্ষা পাচ্ছে| বাংলার হারিয়ে যাওয়া যে মানসিকতা তাকে ফিরিয়ে দিতে পারছে বইমেলা| বইমেলাতে শুধু প্রকাশকেরা আসছে তা নয়| বইমেলাকে ঘিরে সঙ্গীত় শিল্পী থেকে শুরু করে চিত্রশিল্পীরাও এসে উপস্থিত হচ্ছে| লিটল ম্যাগাজিনকে বইমেলার কর্তৃপক্ষ স্টল করার অনুমতি দিয়েছে| তার ফলে গ্রাম বাংলা থেকে শুরু করে শহর বাংলায় যেসব ক্ষুদ্র পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে তার সঙ্গে পাঠকেরা পরিচিত লাভ করতে পারছে| শহরের কোলাহল থেকে দূরে নির্জন স্থানে বইমেলা হওয়়াতে সবাই খুশি| শহরের কোলাহল বইমেলার পরিবেশটাকে নষ্ট করতে শুরু করে ছিল| সই কারণে এমনক একটি স্থানে বইমেলাকে উপস্থাপিত করা হল যেখানে কোনও উটকো ঝামেলা থাকবে না| মন দিয়ে বই ্প্রেমিরা তাদের ইচ্ছা মতো বই দেখতে পারবে এবং কিনতে পারবে| আবার বিনোদন করতে পারবে| বইকে বিনোদন বলা যেতে পারে| মানসিক বিনোদন| গল্পের বা উপন্যাসের বই মানসিক বিনোদন দান করে থাকে| আর প্রবন্ধের বইগুলি মানুষের চিন্তার উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করে|  

You might also like!