গুয়াহাটি, ৯ মাৰ্চ : অসমের সৰ্ব্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কারপ্রাপকদের নাম ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। এছাড়া আজ ক্যাবিনেট বৈঠকে গৃহীত আরও কয়েকটি সিদ্ধান্তের তথ্য দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রবিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে ক্যাবিনেটে সিদ্ধান্তের তথ্য দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা জানান, অসমে বিজেপি জোট সরকার প্রচলিত অসমের সৰ্ব্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার যথাক্ৰমে ‘অসম বৈভব’, ‘অসম সৌরভ’ এবং ‘অসম গৌরব’-প্ৰাপকদের নামের তালিকায় সিলমোহর মেরেছে মন্ত্রিসভা।
সে অনুযায়ী অবসরপ্ৰাপ্ত লেফ্টেন্যান্ট জেনারেল রাণাপ্ৰতাপ কলিতাকে প্রদান করা হবে ‘অসম বৈভব’ পুরস্কার। অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাজ্যের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ অসামরিক সম্মান ‘অসম বৈভব’ পুরস্কারের প্রাপক হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে রাণাপ্রতাপ কলিতাকে। এই পুরস্কার সেই ব্যক্তিকে দেওয়া হয় যার কাজ অসম এবং তার বাইরেও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলে।
এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্ব অর্জনকারী ব্যক্তিদের সম্মানে 'অসম সৌরভ’ পুরস্কার ছয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে প্রদান করা হবে। তাঁরা (১) আইটি শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান ড. এস রামাদোরাই, (২) অসমিয়া সংগীতে অবদানের জন্য প্রশংসিত নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী দ্বিপেন বরুয়া। (৩) গবেষণায় কৃতিত্বের জন্য ভাটনগর পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ড. পূরবী শইকিয়া। (৪) শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. বাপ্পি পাল। (৫) অসমিয়া থিয়েটারের প্রচারে তাঁর প্রচেষ্টার জন্য বিশিষ্ট নাট্যশিল্পী হেমন্ত দত্ত এবং (৬) উদীয়মান ক্রিকেট তারকা, ভারতীয় মহিলা দলের সদস্য উমা ছেত্রীকে তার অসাধারণ ক্রীড়া সাফল্যের জন্য।
সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘অসম গৌরব’ পুরস্কার বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে প্রদান করা হবে। তাঁরা যথাক্রমে : (১)পরিবেশ সংরক্ষণে নিবেদিতপ্রাণের জন্য ফুলেশ্বরী দত্ত, (২) সামাজিক কল্যাণ প্রচারের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক বাইকার মীনাক্ষী দাস, (৩) ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদানের জন্য প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবলার পার্থিব গগৈ, (৪) ধুবড়ির একজন নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবক ধীরেন্দ্রনাথ পাল এবং (৫) ঐতিহ্যবাহী ঘণ্টা ধাতু শিল্পে অবদানের জন্য সর্থেবাড়ির কারিগর হরিদাস দাস।
অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন কারবি আংলং থেকে বিনং তেরন, শ্রীভূমি থেকে নজরুল হক, যোরহাট থেকে বিশ্বজিৎ বরা, বজালির দুগ্ধ খাতে তাঁর ভূমিকার জন্য ভারত কলিতা, বড়ো সাহিত্য প্রচারের জন্য বারলাংফা নার্জারি, ঝুমুর নৃত্য সংরক্ষণের জন্য রাম সাসোনি, চা শিল্পে অবদানের জন্য উপমন্যু বরকাকতি ইট তৈরিতে উদ্ভাবনী স্টার্টআপ উদ্যোক্তা ডেভিড প্রতিম গগৈ।
রাজ্যের অগ্রগতিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রথমবারের মতো ‘অসম গৌরব’ পুরস্কার বিভাগে যে সব প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেগুলি :
(১) শোরান আহেম-কে আদিবাসী খাবার প্রচারের জন্য কাজিরঙার একটি ঐতিহ্যবাহী খাদ্য উদ্যোগ, শোরান আহেম। (২) পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য তিনসুকিয়ার বারেকুড়ি ইকো ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি এবং (৩) হাতি বন্ধু এনজিও, নগাঁও ভিত্তিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে, বিশেষ করে হাতি সুরক্ষায় কাজ করার জন্য।
এদিকে এদিনের ক্যাবিনেট বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেগুলির তথ্যও সাংবাদিকদের জানান মুখ্যমন্ত্ৰী। তিনি জানান, রাজ্য বিধানসভার চলতি অধিবেশনে আসাম কোচিং ইনস্টিটিউট কন্ট্ৰোল অ্যান্ড রেগুলেশন অ্যক্ট নামের একটি আইন আনা হবে। এর মাধ্যমে অসমে চলমান কোচিং ইনস্টিটিউটগুলিকে এক ব্যবস্থার মধ্যে আনা হবে। কারণ বহু ইনস্টিটিউট কারণ-অকারণে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে। এগুলিকে নিয়ন্ত্ৰণের জন্য এই আইন আনা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, কোকরাঝাড় বিশ্ববিদ্যালয় আইনেও সামান্য সংশোধন করা হবে। আজ দুটি মেগা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পাৰ্কের জন্য ক্যাবিনেট উদ্যোগ বিভাগকে কামরূপ এবং মরিগাঁওয়ে কিছু জমি আবন্টন করেছে। ভেটেরিনারি এবং ফিশারি আইনেও সামান্য সংশোধন আনা হচ্ছে। ডিটিও অফিসগুলি থেকে গাড়ির লাইসেন্স প্রদানের ক্ষমতা রদ করে অ্যাক্ৰিডেটেড ড্ৰাইভার ট্ৰেনিং সেন্টার এবং অটোমেটেড ড্ৰাইভিং টেস্টিং ট্ৰ্যাক করতে চাইছে সরকার। রাজ্যের ১২৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে খোলা হবে ১২৬টি ড্ৰাইভিং ট্ৰেনিং ইনস্টিটিউট। প্ৰত্যেক জেলায় অটোমেটেড ড্ৰাইভিং ট্ৰ্যাক থাকব। ড্রাইভইং লাইসেন্সের জন্য এখন আর ডিটিও অফিসে দৌড়তে হবে না।
এছাড়া শ্ৰীমন্ত শংকরদেব বিশ্ববিদ্যালয় আইনেও আজ এক বিশেষ সংশোধন আনা হয়েছে। অসমে এখন থেকে নাৰ্সিং কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, ফাৰ্মাসি ইনস্টিটিউট খোলার জন্য রাষ্ট্ৰীয় নিরাপত্তার দৃষ্টিতে এই সব ইনস্টিটিউট রাষ্ট্ৰের প্ৰতি হুমকি নয় বলে গৃহবিভাগকে দিতে হবে প্ৰমাণপত্ৰ। এছড়া প্ৰত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ সব ইনস্টিটিউট ধৰ্মান্তরণের সঙ্গে জড়িত হতে পারবে না। অসমের মেডিক্যাল কলেজ এন্ট্ৰেন্স পরীক্ষা এখন কেবল সরকারি বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং বায়োমেট্ৰিক টেস্ট দিয়ে পরীক্ষাত বসতে হবে। এদিকে বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্ৰের স্বীকৃতির জন্য দুটি পৃথক ক্যাটাগরিতে মাজুলি এবং শিবসাগরের নাম পাঠানো হবে বলেও সাংবাদিক সম্মেলনে জানান মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।