দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ প্রভিডেন্ট ফান্ডের(Provident Fund) কার্যকারিতা সম্বন্ধে জানতে গেলে অবশ্যই আগে আপনাকে জানতে হবে প্রভিডেন্ট ফান্ড(Provident Fund) আসলে কি। প্রভিডেন্ট ফান্ড (Provident Fund) হল একটি বিনিয়োগ মূলক তহবিল যা নিয়োগকর্তা এবং কর্মচারীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং তাদের স্বেচ্ছায় প্রতিষ্ঠিত যেখানে কর্মচারী তার সঞ্চিত অর্থ ভবিষ্যতে রিটায়ারমেন্টের পর ব্যবহার করতে পারবেন।
মূলত
এই ফান্ডের উৎস দুটিঃ
১.
কর্মচারীর অবদান(Employee’s contribution): কর্মচারীর বেতন থেকে
২%-১৫% হারে কাটা অংশ।
২.
নিয়োগকর্তার অবদান(Employer’s contribution): নিয়োগকর্তাকে সাধারণ
বেতন প্রদানের পাশাপাশি, একজন নিয়োগকর্তা, কর্মচারীর বেতনের ২%-১৫% অংশ এই তহবিলে
প্রদান করবেন।
প্রভিডেন্ট ফান্ডে(Provident Fund) বিনিয়োগ করা অর্থ পরিচালিত হবে একটি ‘ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট কম্পানি’ দ্বারা একটি নির্দিষ্ট বিনিয়োগ নীতি অনুসারে যাতে ভবিষ্যতে রিটার্ন সর্বাধিক আসে।
প্রভিডেন্ট
ফান্ডের ৫টি সুবিধা যা আপনার জানা উচিতঃ
আয়কর আইনের(Income Tax
Act) ধারা ৮০সি অনুসারে, একজন কর্মচারী একটি আর্থিক বছরে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত PF(Provident
Fund) অবদানের উপর আয়কর ছাড় পেতে পারেন।
১.
প্রভিডেন্ট ফান্ডের পরিবর্তে লোন(Loan
against PF): প্রভিডেন্ট ফান্ডে সঞ্চিত অর্থের বিপরীতে গ্রাহক লোন নিতে পারবেন।
জরুরী অবস্থার ক্ষেত্রে সেই গ্রাহকের লোনের ইন্টারেস্ট রেট সর্বনিম্ন ১% পর্যন্ত হতে পারে। লোন পাওয়ার ৩ বছরের মধ্যে গ্রাহককে সেই লোন পরিশোধ করতে হবে।
২.
বিনামূল্যে জীবনবীমা(Free Insurance): ইডিএলআই আইনের(EDLI
Scheme) অধিনে, কর্মরত অবস্থায় কোনো PF অ্যাকাউন্ট গ্রাহকের মৃত্যু হলে ৭ লক্ষ টাকার
বিনামূল্যে বিমার সুবিধা দেওয়া হয়।
৩.
গৃহ ঋণ এবং গৃহ ঋণ পরিশোধ(Home Loan & Home Loan Repayment): EPFOর
নিয়ম অনুযায়ী নতুন বাড়ি কেনা বা বাড়ি নির্মাণের জন্য কেউ PF ব্যালেন্সের ৯০ শতাংশ
পর্যন্ত তুলে নিতে পারেন। PF অ্যাকাউন্ট হোম লোন পরিশোধের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে
এবং PF ব্যালেন্সের মাধ্যমে কেউ জমিও কিনতে পারেন।
৪.
জরুরি অবস্থায় আংশিক প্রত্যাহার(Partial withdrawal in case of any emergency): কয়েকটি
শর্ত সাপেক্ষে, চিকিৎসা অথবা জরুরী পরিস্থিতিতে PF-এর সঞ্চিত অর্থ থেকে কিছু অঙ্ক তুলে
নেওয়া যায়।
৫. পেনশনের সুবিধা(Pension Provision): একজন PF-গ্রাহক ৫৮ বছর বয়সে পেনশনের সুবিধার আয়ত্যে চলে যান। সেক্ষেত্রে একজন গ্রাহককে টানা ১৫ বছর তার প্রদেয় অংশ PF-কে জমা করতে হবে। পেনশনের সুবিধাটি নিয়োগকর্তার অবদান থেকে আসে কারণ এর ৮.৩৩ শতাংশ (১২ শতাংশের মধ্যে) PF অ্যাকাউন্টধারীর EPS অ্যাকাউন্টে যায়।
প্রভিডেন্ট
ফান্ডের প্রকারভেদ এবং ট্যাক্সের গুরুত্ব (Typs of Provident Funds and Importance
of Taxes):
বিভিন্ন ট্যাক্স শর্ত এবং
তাদের প্রভাবের ভিত্তিতে, চার রকমের প্রভিডেন্ট ফান্ড(Provident Fund) রয়েছে
·
সংবিধিবদ্ধ প্রভিডেন্ট ফান্ড (Statutory
Provident Fund)
·
স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড (Recognized
Provident Fund)
·
অস্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড (Unrecognized
Provident Fund)
·
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (Public
Provident Fund)
সংবিধিবদ্ধ
প্রভিডেন্ট ফান্ড (Statutory Provident Fund):
·
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সরকারী সংস্থা, রেলওয়ে,
বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি দ্বারা এই প্রভিডেন্ট ফান্ড পরিচালনা করা হয়।
·
এই কার্যক্রিয়া ১৯২৫ সালের বীমা তহবিল(Insurance
Funds Act) আইনের আওতায় পড়ে।
·
নিয়োগকর্তাদের অবদানের উপর কর মকুব করে দেওয়া
হতে পারে, যখন ৮০সি-এর অধীনে কর্মচারীদের অবদান(Contribution) করযোগ্য।
·
প্রদত্ত সুদের জন্য কোন ট্যাক্স দিতে হবেনা
কারণ এটি আয়ের অংশ হিসাবে বিবেচিত করা হয় না।
·
অবসর গ্রহণের পরে আপনি যদি পুরো অর্থ তুলে
নিতে চান তবে সেক্ষেত্রেও আপনাকে ট্যাক্স দিতে হবে না।
·
যদি কোনো ব্যক্তি তার PF অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয়
করে দিতে চান, সেক্ষেত্রে জমা হওয়া অর্থ প্রত্যাহার প্রক্রিয়া চলাকালীন কোনো অতিরিক্ত
ট্যাক্স জমা করতে হবেনা।
স্বীকৃত
প্রভিডেন্ট ফান্ড (Recognized Provident Fund):
·
এটি সবথেকে জনপ্রিয় বিভাগ। এই বিভাগে কোনো
প্রতিষ্ঠানের ২০র বেশি সংখ্যক কর্মচারীকে PF-এ অবদান (Contribute)করতে হয়।
·
কর্মচারীরা তাদের নিজস্ব পিএফ ট্রাস্টে তাদের
অবদানের জন্য স্কিম সেট আপ করতে পারেন বা পিএফ কমিশনার সিস্টেম অনুসরণ করতে পারেন,
তবে সিআইটি (আয়কর কমিশনার) অবশ্যই সেই সমস্ত স্কিম অনুমোদন করাতে হবে।
·
কর্মচারীর অবদান(contribution) ১২%এর বেশি
হলে, যে বছর অবদান করা হয়েছিল তার জন্য সেটি ট্যাক্স করা হবে।
·
ধারা ৮০বি এর অধিনে কর্মচারীর অবদান(contribution)
শেয়ার বিবেচনা করে ট্যাক্স কাটা হয়।
·
পুরো টাকা তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র
তার ট্যাক্স মকুব করা হবে যিনি ৫ বছর নিয়মিত কাজ করেছেন।
অস্বীকৃত
প্রভিডেন্ট ফান্ড (Unrecognized Provident Fund)
·
আয়কর কমিশনার, অর্থাৎ CTI, এই প্রভিডেন্ট
ফান্ড স্বীকৃতি দেয় না।
·
এই বীমা তহবিলে, আর্থিক বছরে প্রদত্ত অবদানগুলির(Contribution)
উপর কর বসানো হয়না।
·
কর্মচারীদের জন্যও কোনো ট্যাক্স বিরতি দেওয়া
হয় না, অর্থাৎ ধারা ৮০বি উহ্য নয়।
·
সুদের উপর কোনো কর দিতে হয়না।
·
আয় হিসাবে এই টাকা তোলার ক্ষেত্রে সেটি কর
ধার্য করা হবে। যদিও কর্মচারীদের অবদানগুলির উপর ধারা অনুসারে ট্যাক্সের আওতায় পড়েনা
তবে, অন্যান্য ট্যাক্সের আওতায় পরে।
পাবলিক
প্রভিডেন্ট ফান্ড (Public Provident Fund)
·
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের এই স্কিমটি সাধারণত
প্রত্যেকের জন্য উপলব্ধ, তারা কর্মরত বা বেকার যাই হোক না কেন
·
এই স্কিমের সর্বনিম্ন হার হয় ৫০০টাকা থেকে
এবং এটি সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে।
·
এই স্কিমে ১৫ বছর পরে টাকা দেওয়া হয়।
·
এটি ভবিষ্যতের সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের জন্য
সবচেয়ে লাভজনক প্রোগ্রামগুলির মধ্যে একটি।
· প্রদত্ত পরিমাণের সুদও করমুক্ত।
প্রভিডেন্ট
ফান্ডে অ্যাকাউন্ট খোলার পর টাকার পরিমাণ কি করে দেখবেন(How to check PF balance)?
এখানে কিছু পদ্ধতির উল্লেখ
করা হল যেখান থেকে আপনি আপনার PF-এ সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ দেখতে পারবেন।
·
গ্রাহকরা EPFOর পোর্টালে ঢুকে নিজের পাসবুক
দেখতে পারবেন। সেখানে আপনাকে আপনার “ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর” টি দিয়ে আপনি
EPF পাসবুকটি প্রিন্ট করতে বা দেখতে পারবেন।
প্রভিডেন্ট
ফান্ডে সঞ্চিত অর্থ আপনি দকারের সময় তুলবেন কি করে(How to withdraw PF amount)?
·
EPF
২০২২ এর নিয়ম অনুসারে ১০টি ক্ষেত্রে আপনি আপনার সঞ্চিত অর্থ তুলতে পারবেনঃ
1.
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পরিবর্তে চাকরির থাকাকালীন
আপনি EPF অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারবেন না। EPF হল একটি দীর্ঘমেয়াদী অবসরকালীন
সঞ্চয় প্রকল্প। কেবলমাত্র অবসরের পরই টাকা তোলা যাবে।
2.
EPF অ্যাকাউন্ট থেকে আংশিক টাকা তোলার অনুমতি
দেওয়া হয় শুধুমাত্র জরুরী অবস্থার ভিত্তিতে যেমন মেডিকেল ইমার্জেন্সি, বাড়ি কেনা
বা নির্মাণ, এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে। আংশিক প্রত্যাহার কারণের উপর নির্ভর করে সীমা
সাপেক্ষে। এক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টধারী টাকা তোলার জন্য অনলাইনে আবেদন পত্র জমা করে অনুরোধ
করতে পারেন।
3.
যদিও ইপিএফ মূলধন শুধুমাত্র অবসর গ্রহণের পরেই
প্রত্যাহার করা যেতে পারে, তবে ব্যক্তি ৫৫ বছর বয়সে না পৌঁছানো পর্যন্ত আগাম অবসর
নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হয় না। EPFO অবসর গ্রহণের ১ বছর আগে EPF মূলধনের ৯০%
প্রত্যাহারের অনুমতি দেয়, যদি ব্যক্তির বয়স ৫৪ বছরের কম না হয়।
4.
লক-ডাউন বা ছাঁটাইয়ের কারণে অবসর নেওয়ার
আগে যদি কোনও ব্যক্তি চাকরি ছেড়ে দেন তবে ইপিএফ মূলধন প্রত্যাহার করা যেতে পারে।
5.
ইপিএফ গ্রাহককে ইপিএফের পরিমাণ প্রত্যাহার
করার জন্য সবার পূর্বে বেকারত্ব ঘোষণা করতে হবে।
6.
নতুন নিয়ম অনুসারে, EPFO ১ মাসের বেকারত্বের
পরে EPF মূলধনের ৭৫% তোলার অনুমতি দেয়। অবশিষ্ট ২৫% নতুন কর্মসংস্থান লাভের পরে একটি
নতুন EPF অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা যেতে পারে।
7.
পুরানো নিয়ম অনুসারে, ২ মাস বেকার থাকার পরেও
১০০% EPF মূলধন তোলার অনুমতি দেওয়া হয়।
8.
EPF মূলধন প্রত্যাহার করমুক্ত হয় তবে বেশকিছু
শর্তের অধীনে। EPF মূলধনের উপর ট্যাক্স ছাড় শুধুমাত্র তখনই অনুমোদিত হয় যদি একজন
কর্মী টানা ৫ বছর ধরে EPF অ্যাকাউন্টে অবদান(Contribution) রাখে। তা না হলে EPF মূলধনের
পরিমাণ করযোগ্য। সেক্ষেত্রে, সম্পূর্ণ EPF পরিমাণ সেই আর্থিক বছরের জন্য করযোগ্য আয়
হিসাবে বিবেচিত হবে।
9.
EPF মূলধনের অকাল প্রত্যাহারের উপর উৎসে কর
কাটা হয়। যাইহোক, যদি সম্পূর্ণ পরিমাণ ৫০,০০০ টাকার কম হয়, তাহলে TDS প্রযোজ্য নয়।
মনে রাখবেন, যদি কোনও কর্মচারী আবেদনের সাথে প্যান প্রদান করে, তাহলে প্রযোজ্য TDS
হার ১০%। অন্যথায়, এটি ৩০% সাথে ট্যাক্স যুক্ত হবে। ফর্ম ১৫এইচ/১৫জি হল একটি ঘোষণাপত্র,
যা বলে যে একজন ব্যক্তির মোট আয় করযোগ্য নয় এবং এইভাবে, TDS এড়ানো যায়।
একজন কর্মচারীকে তার নিজের
EPF টাকা তোলার জন্য নিয়োগকর্তার অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এটি সরাসরি
EPFO থেকে করা যেতে পারে, যদি কর্মচারীর UAN এবং Aadhaar লিঙ্ক করা থাকে এবং সেটি যদি
নিয়োগকর্তা দ্বারা অনুমোদিত হয়ে থাকে। EPF উত্তোলনের স্থিতি অনলাইনে পর্যবেক্ষণ করা
যেতে পারে।