দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ 'আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।' ... বাংলার মায়েদের এই চিরন্তন প্রার্থনাই ধরা পড়ে নীল ষষ্ঠীর ব্রতয়। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সারাদিন নির্জলা উপবাস করে সন্তানের মঙ্গল প্রার্থনা করে থাকেন মায়েরা। তবে পঞ্জিকা অনুসারে ষষ্ঠী তিথি না হলেও নীল ষষ্ঠী পালন করা হয় এদিন। বাংলার বারো মাসের তেরো পার্বনের অন্যতম নীল ষষ্ঠীর ব্রত। এই ব্রতর বিশেষত্ব হল এই ষষ্ঠী দেবী নন, পূজিত হন মহাদেব। কেন নীল ষষ্ঠীতে শিবের পুজো করা হয়, তা জেনে নিন এখানে।
নীল ষষ্ঠীর পরের দিন চৈত্র সংক্রান্তি। আর এর পরের দিন পয়লা বৈশাখ। গ্রাম বাংলায় চৈত্র সংক্রান্তিতে চরক পুজো করা হয়। চরক উপলক্ষ্যে গাজনের মেলা বসে গ্রাম বাংলার অনেক স্থানে। পুরাণ অনুসারে নীল ষষ্ঠীর এই বিশেষ দিনেই মহাদেবের সঙ্গে নীল চণ্ডিকা বা নীলাবতীর বিয়ে হয়েছিল। মহাদেব নিজে হলেন নীলকণ্ঠ। আর তাঁর সঙ্গে এদিন নীল চণ্ডিকা বা নীলাবতীর বিবাহ হয়েছিল বলেই এই দিনটি নীল ষষ্ঠী নামে পরিচিত। এদিনের পুজোকে নীল পুজো বলা হয়ে থাকে।
দক্ষযজ্ঞে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করেছিলেন শিবের পত্নী সতী। তারপর নীলধ্বজ রাজার ঘরে নতুন করে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। নীলাবতী নামের এই কন্যার শিবের বিয়ে দেন রাজা নীলধ্বজ। সেই কারণে নীল ষষ্ঠী, চৈত্র সংক্রান্তি ও গাজন শিব দুর্গার বিয়ের উত্সব হিসেবেও পালিত হয় অনেক জায়গায়। গাজনের সময় শিব ও পার্বতী সেজে অনেকে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে ঘুরে ভিক্ষা সংগ্রহ করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রাচীন কাল থেকেই এদিন মহাদেব ও নীলচণ্ডিকার বিবাহের দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে নীলষষ্ঠীতে সন্তানের মঙ্গল কামনা করে উপবাস রাখার প্রথা অনেক পরে শুরু হয়। এক ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণীর বারবার সন্তান জন্মেই মারা যাচ্ছিল। মনের দুঃখে তাঁরা সংসার ত্যাগ করে তীর্থ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। বারাণসীতে আসার পর সেখানে এক বৃদ্ধা এসে ওই ব্রাহ্মণীকে চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন নীল পুজো করার পরামর্শ দেন। সন্তান লাভ করতে সারাদিন নির্জলা উপবাস থেকে সন্ধেয় শিবের ঘরে বাতি জ্বালিয়ে জল খাওয়ার উপদেশ দেন তিনি। এভাবেই শুরু হয় নীল ষষ্ঠীতে মায়েদের সন্তানের মঙ্গল কামনায় ব্রত রাখার প্রথা।