নয়াদিল্লি, ২৮ অক্টোবর : আয়ুষ্মান ভারত পিএম-জেএওয়াই প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৭০ বছর এবং তার বেশি বয়সী প্রবীণ নাগরিকদের বীমা প্রকল্পে যুক্ত করার কর্মসূচির সূচনা করবেন। স্বাস্থ্যক্ষেত্রের পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত যেসব প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন, সেগুলো হল— * প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রথম অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদের দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন,
* স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারকে আরও উদ্ভাবনমূলক করে তুলতে ১১টি সহায়ক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ড্রোন পরিষেবার সূচনা,
* ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার প্রয়োগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের মানোন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী U-WIN পোর্টালের সূচনা করবেন, যার ফলে গর্ভবতী মহিলা ও সদ্যোজাতদের টিকাকরণের প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা,
* মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচির আওতায় পাঁচটি প্রকল্পের উদ্বোধন, যেগুলি চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সরঞ্জাম এবং প্রচুর পরিমাণে ওষুধ উৎপাদনের জন্য উৎসাহ-ভিত্তিক উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় গড়ে উঠেছে
* স্বাস্থ্যক্ষেত্রের গবেষণা ও উন্নয়ন এবং বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য আরও শক্তিশালী পরিকাঠামো গড়ে তুলতে একগুচ্ছ প্রকল্পের সূচনাএ কথা জানিয়ে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো লিখেছে, “বেলা ১২-৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদ-এ স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত এই ১২,৮৫০ কোটি টাকার একগুচ্ছ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের ফ্ল্যাগশিপ আয়ুষ্মান ভারত পিএম-জেএওয়াই প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী ৭০ বছর এবং তার বেশি বয়সী প্রবীণ নাগরিকদের এই বীমা প্রকল্পে যুক্ত করার কর্মসূচির সূচনা করবেন। ফলে, সমস্ত প্রবীণ নাগরিক স্বাস্থ্য পরিষেবার সুবিধা পাবেন, তাঁদের আয়ের পরিমাণ এই পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।দেশজুড়ে উন্নতমানের স্বাস্থ্য পরিষেবা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী বদ্ধপরিকর। তাই, স্বাস্থ্যক্ষেত্রের পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য তিনি বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন।
মোদী ভারতের প্রথম অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদের দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন করবেন। নতুন এই অংশে একটি পঞ্চকর্ম হাসপাতাল, আয়ুর্বেদ ওষুধ তৈরির জন্য একটি কেন্দ্র, ক্রীড়াক্ষেত্রে ব্যবহৃত ওষুধ, একটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, তথ্যপ্রযুক্তি ও স্টার্ট-আপ-এর জন্য ইনকিউবেশন সেন্টার এবং একটি ৫০০ আসনবিশিষ্ট প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে। তিনি মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌর, নীমুচ এবং সেওনিতে তিনটি মেডিকেল কলেজের উদ্বোধন করবেন। এছাড়াও, হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুরে, পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীতে, বিহারের পাটনায়, উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে, মধ্যপ্রদেশের ভোপালে, আসামের গুয়াহাটিতে এবং নতুন দিল্লির এইমস-এ বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবার উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যে জন ঔষধি কেন্দ্র রয়েছে। তিনি ছত্তিশগড়ের বিলাসপুরে সরকারি মেডিকেল কলেজে একটি সুপার স্পেশালিটি ব্লক এবং ওড়িশার বরগড়-এ একটি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ব্লক উদ্বোধন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী মধ্যপ্রদেশের শিবপুরী, রতলম, খান্ডোয়া, রাজগড় এবং মন্দসৌরে পাঁচটি নার্সিং কলেজের শিলান্যাস করবেন। এছাড়াও হিমাচল প্রদেশে, মণিপুর, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু এবং রাজস্থানে আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো প্রকল্পের আওতায় ২১টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ব্লকের শিলান্যাস করা হবে। মোদী হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুর এবং নতুন দিল্লির এইমস-এ বেশ কিছু পরিষেবার সূচনাও করবেন।
প্রধানমন্ত্রী মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে একটি ইএসআইসি হাসপাতালের উদ্বোধন করবেন। এছাড়াও হরিয়ানার ফরিদাবাদ, কর্ণাটকের বোম্মাসান্দ্রা ও নরসাপুর, মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর, উত্তরপ্রদেশের মীরাট এবং অন্ধ্রপ্রদেশের অচ্যুতপুরমে বেশ কয়েকটি ইএসআইসি হাসপাতালের শিলান্যাস করবেন তিনি। এই প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হলে ইএসআই প্রকল্পের ৫৫ লক্ষ সুবিধাভোগী উপকৃত হবেন।
প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারকে আরও উদ্ভাবনমূলক করে তোলার পক্ষে সর্বদাই আগ্রহ প্রকাশ করেন। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পরিষেবাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে তিনি ১১টি টার্শিয়ারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ড্রোন পরিষেবার সূচনা করবেন। এই কেন্দ্রগুলি হল – উত্তরাখণ্ডের ঋষিকেশ, তেলেঙ্গানার বিবিনগর, আসামের গুয়াহাটি, মধ্যপ্রদেশের ভোপাল, রাজস্থানের যোধপুর, বিহারের পাটনা, হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুর, উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি, ছত্তিশগড়ের রায়পুর এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মঙ্গলগিরির এইমস ও মণিপুর ইম্ফল রিমস। এছাড়াও, ঋষিকেশ এইমস থেকে হেলিকপ্টারের সাহায্যে জরুরি চিকিৎসা পরিষেবার সূচনাও করা হবে।
ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার প্রয়োগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের মানোন্নয়নের জন্য শ্রী মোদী U-WIN পোর্টালের সূচনা করবেন। এর ফলে গর্ভবতী মহিলা ও সদ্যোজাতদের টিকাকরণের প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার আওতায় আসবে। ফলস্বরূপ, গর্ভবতী মহিলা এবং ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত প্রত্যেক নাবালক ১২টি টিকাকরণ প্রকল্পের আওতায় আসবে। নতুন এই পোর্টাল তাদের সঠিক সময়ে টিকাদান নিশ্চিত করবে। এছাড়াও, স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত পেশাদার ও প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য আরও একটি পোর্টালের সূচনা করা হবে। এই পোর্টালে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে সমস্ত তথ্য সঞ্চিত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যক্ষেত্রের গবেষণা ও উন্নয়ন এবং বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য আরও শক্তিশালী পরিকাঠামো গড়ে তুলতে একগুচ্ছ প্রকল্পের সূচনা করবেন। এর আওতায় ওড়িশার ভুবনেশ্বরের গোঠাপাটনায় একটি সেন্ট্রাল ড্রাগস টেস্টিং ল্যাবরেটরির উদ্বোধন করা হবে।
মোদী ওড়িশার খোরদায় এবং ছত্তিশগড়ের রায়পুরে যোগ ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চিকিৎসার জন্য দুটি কেন্দ্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিলান্যাস করবেন। এছাড়াও তিনি চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য গুজরাটের আমেদাবাদ নাইপার, বিপুল পরিমাণের্ ওষুধ উৎপাদনের জন্য তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদ নাইপার, ফাইটোফার্মাসিউটিক্যালের জন্য আসামের গুয়াহাটি নাইপার এবং ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধী, ভাইরাল প্রতিরোধী ওষুধের উদ্ভাবন ও গবেষণার জন্য পাঞ্জাবের মোহালি নাইপারে উৎকর্ষ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী চারটি আয়ুষ উৎকর্ষ কেন্দ্রের সূচনা করবেন। এগুলি ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স-এ ডায়াবেটিস সংক্রান্ত রোগ চিকিৎসাকেন্দ্র, দিল্লি আইআইটি-তে আয়ুষ সংক্রান্ত গবেষণা, স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সহায়তাদান এবং রসৌষধির জন্য কেন্দ্র, লক্ষ্ণৌ-এ সেন্ট্রাল ড্রাগ রিসার্চ ইনস্টিটিউটে চিরায়ত আয়ুর্বেদ ওষুধের গবেষণা কেন্দ্র এবং নতুন দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়ুর্বেদ সংক্রান্ত ওষুধ কেন্দ্রে গড়ে উঠেছে।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সরঞ্জাম এবং প্রচুর পরিমাণে ওষুধ উৎপাদনের জন্য উৎসাহ-ভিত্তিক উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় এই কেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছে। এই কেন্দ্রগুলি গুজরাটের বাপি, তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদ, কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু, অন্ধ্রপ্রদেশের কাঁকিনাড়া এবং হিমাচল প্রদেশের নালাগড়ে অবস্থিত। এখান থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন এবং জটিল অসুখে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উৎপাদন করা হবে। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলিতে নানা ধরনের ওষুধ প্রস্তুত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী দেশজুড়ে ‘দেশ কা প্রকৃতি পরীক্ষণ অভিযান’-এর সূচনা করবেন। নাগরিকদের মধ্যে স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলাই এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও, বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের উপযোগী জলবায়ু পরিবর্তন এবং জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত একগুচ্ছ প্রকল্পের সূচনা করা হবে।”