দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গ প্রধানত কৃষিপ্রধান রাজ্য হলেও বাংলার কুটির শিল্প জগৎ সেরা। বাংলার কুটির শিল্পের সাথে বাংলার গ্রমীন মহিলারা অতোপ্রতো ভাবে যুক্ত রয়েছেন বহু দিন যাবৎ। বাংলার কুটির শিল্পে মহিলাদের এই সংযুক্তি শুরুর দিকে প্রচারের আলোতে না আসতে পারলেও, বর্তমানে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের দ্বারা তাদের এই অগ্রগতি এবং সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভদের কথা জানতে পারছে লক্ষ লক্ষ মানুষ, যা আর্থ সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পরা বহু মহিলার সাবলম্বী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে পাথেয় হয়ে উঠছে। তেমনই এক সাবলম্বী সত্তা হলেন পুরুলিয়া জেলার তামনা গ্রামের রীতা মাহাতো। রীতা মাহাতোর অক্লান্ত পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় পুরুলিয়ার ছোট্ট গ্রাম তামনা ও তার মহিলাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ২০১০ সালে ব্লক অফিসের আধিকারিকদের কাছ থেকে রীতা দেবী অনুপ্রেরণা পান। তিনি "দ্রুতগামী মহিলা সংঘ" নামে একটি ছোট্ট সমষ্টি তৈরী করে গুটি কয়েক মহিলাদের নিয়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে খাদ্য সরবরাহের কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ ৭ বছরের পরিশ্রমের পর ২০১৭ সালে সরকারি ভাবে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে এই সংঘটি সমবায় রুপে পথ চলা শুরু করে, এবং এর নাম হয় "দ্রুতগামী মহিলা সংঘ বহুমুখী প্রাথমিক সমবায় সমিতি লিমিটেড"।
সমবায় রুপে কাজ শুরু করার পর এই সমিতিটি নিজেদের কর্ম পরিসরের ক্রমশ বিস্তার করতে থাকে। শুধু মাত্র স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে খাদ্য সরবরাহ নয়, তার সাথে যুক্ত হয় পরিশোধিত পানীয় জল, সরকারি বিদ্যালয়ের পোশাক তৈরির মতো বিভিন্ন কাজ। শুধু তাই নয় রীতা মাহাতো ও তার সমিতি স্বচ্ছ ভারত মিশনে যোগদান করে তার গ্রামের প্রায় ১৬৫ টি বাড়িতে পাকা শৌচালয় বানানোর মতো কাজ করেছে। এছাড়া ও "ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস" (ICDS) কর্মসূচীতে রীতা মাহাতো ও তার সমিতি যোগদান করে তার গ্রাম তামনাতে স্বাস্থ্যশিক্ষা ,জীবন শৈলী শিক্ষা, টিকাকরনের গুরুত্ব ও সুষম আহার ও পুষ্টি সম্পর্ক মানুষের মধ্যে সচেতনতা উজাগরনের কাজ করেছে।
উল্লেখ্য পুরুলিয়া লালমাটির দেশ সেখানে জলের সমস্যা খুবই সাধারন সমস্যা গুলির মধ্যে একটি। আবহাওয়া ও ভৌগলিক অবস্থানের দরুন এখানে জলের অপ্রতুলত এবং বৃষ্টিপাতের খামতির জন্য বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে এখানে খরার পরিস্থিতি তৈরী হয়। সেই সময় পানীয় জলের সমস্যায় ভুগতে হয় হাজার খানেক মানুষকে। শুধু তাই নয় স্বচ্ছ ভারত মিশনে কাজ করতে গিয়ে রীতা দেবী অনুভব করেন শৌচালয় যেমন সমাজে স্বচ্ছতা আনতে পারে, তেমন পরিশুদ্ধ পানীয় জল সুস্বাস্থ্য প্রদান করতে পারে।
এই প্রকল্পে কাজ করার জন্য একটি দল জেলা প্রশাসনের কাছে পরামর্শ গ্রহনের জন্য যায় এবং সেখান থেকে একটি জল ভেন্ডিং মেশিন সম্পর্কে বলেন যা দিয়ে কম খরচে জল বিশুদ্ধ করা যায় এবং যা ব্যবসায়িক ভাবে ব্যবহার যোগ্য। প্রকল্পটি নিয়ে জেলা গ্রামীণ উন্নয়ন সেল (ডিআরডিসি)-এ আলোচনা করা হলে প্রশাসন তরফ থেকে সবুজ সংকেত মেলে, শুধু তাই নয় ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক তপন বন্দোপাধ্যায় মহাশয়ের সহযোগিতায় রীতা মাহাতোর এই স্বনির্ভর সমিতিটি সরকারি তরফ থেকে অর্থিক সহায়তা পায়।
রীতা দেবীর ৫.৫ লক্ষ টাকার জীবন ধারা প্রজেক্ট, যা বিগত তিন বছর ধরে ওয়াটার ভেন্ডিং মেশিনের সাথে জলের পাইপলাইন স্থাপন করে পানীয়জল পরিশোধনের কাজ করছে । প্রথমে জল পরিশোধন করে পরে তা স্যানিটাইজড বোতলে প্যাক করে বিক্রি করা হছে বর্তমানে।
বর্তমানে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সাথে ২০ জন মহিলা যুক্ত রয়েছেন। এই ব্যবসায় যুক্ত হয়ে প্রতিদিন কম করে ১২০ টাকা প্রত্যহ রোজগার করেন রীতা মাহাতো সহ তার এই গোষ্ঠীর প্রতি সদস্য। এছাড়াও খাদ্য সরবরাহ ব্যবসার মধ্যমেও এই গোষ্ঠী মাসে ৫০০০/- টাকার অধিক রোজগার করে থাকে। রীতা মাহাতোর এই কর্মকান্ড তার তামনা গ্রামের আরো মহিলাদের স্বাবলম্বী হবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।