দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: সাল ছিল, ২০১৫।
শ্রীয়া সেখসারিয়া(Shriya Sekhsaria), ভারতের কিছু প্রত্যন্ত গ্রামে বিরল রোগে আক্রান্ত কিছু শিশুর চিকিৎসার
খরচ যোগানের উদ্যেশ্য নিয়ে একটি বই লেখা শুরু করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই বই প্রকাশিত
হওয়ার আগেই বেশ কয়েকজন শিশু মারা যায়। শ্রিয়া তখন ঠিক করেন সেই সকল শিশুদের পরিবারের
পাশে দাঁড়ানোর। সেই সকল শিশুদের স্মৃতি, ছবি, কাঁচের খালি জারে এঁকে তিনি পরিবারগুলিকে
দেন। ফলাফল আসে চমকপ্রদ। মাত্র ৫ মিনিটের এই গল্প, সেই পরিবারগুলির কষ্ট কিছুটা কাটিয়ে
উঠতে সাহায্য করে।
শ্রীয়া বলেন “শিশুদের সাথে আমার কাজ এবং তাদের
স্মৃতি সাজিয়ে রাখার এই উদ্যোগই “মেমোরি জার” এর প্রাথমিক ধাপ ছিল।“ আস্তে আস্তে শ্রিয়া বুঝতে পারেন এই “মেমোরি জার”
মানুষের ৬টি প্রধান মনস্তাত্ত্বিক বিভাগকে প্রেরণা যোগাচ্ছে। স্বায়ত্তশাসন, পরিবেশগত
আয়ত্ত, ব্যক্তিগত বৃদ্ধি, অন্যদের সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক, জীবনের উদ্দেশ্য এবং আত্ম-গ্রহণ
।
কোয়েম্বাটুরে ২০১৮ সালে তিনি “লামহা(Lumhaa)”, একটি ডিজিটাল মেমোরি জার এর প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রীয়া বলেন, “আমি সেই সমস্ত মানুষদের কদর করি যারা নিজেদের স্বাধীন স্বত্বা নিয়ে খুশি, যা প্রধানত আসে নিজেদের প্রতিচ্ছবি কল্পনা করার মধ্যে দিয়ে। এই প্রতিচ্ছবি কল্পনা আনন্দের এবং মজার করে তোলার জন্য আমরা সেটিকে নিজেদের প্রিয়জনের সাথে ভাগ করে নি, ঠিক সেইভাবেই দুজন প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরের সম্পর্কের ব্যপারে লিখতে চাইলে “কাপেল মেমোরি জার” অথবা পরিবারের সকলে তাদের প্রিয় সন্তানের উদ্যেশ্যে “বেবি মেমোরি জার” এ নিজেদের গল্প ভাগ করে নিতে পারবেন।
ছবি সৌজন্যেঃ Lumhaa.com
সহজ এবং মজাদার
এই
প্রতিচ্ছবিগুলিই লামহা অ্যাপে মেমোরি জার, অথবা প্রতিচ্ছবি-কেন্দ্রিক কার্ড গেমের মাধ্যমে
আমরা প্রত্যেকের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে উদ্দত হয়েছি।
এই পাঁচটি ধাপে লামহা অ্যাপ/ওয়েবসাইটে আপনি
আপনার ডিজিটাল মেমোরি জার বানিয়ে নিতে পারবেনঃ
ধাপ ১- একটি মেমোরি জার বানান
ধাপ ২- মেমোরি যোগ করুন (বিশেষ ক্ষেত্রে সাহাজ্যের
জন্য গাইড উপলব্ধ আছে, মেমোরি গুলি যে কোনো ফাইল ফরম্যাটে হতে পারে)
ধাপ ৩- নতুন মেমোরি দেখতে/যুক্ত করতে অন্যদের আমন্ত্রণ
জানাতে পারবেন।
ধাপ ৪- নতুন মেমোরি যুক্ত করার জন্য রিমাইন্ডার
যুক্ত করতে পারেন (এটি সরাসরি ই-মেল/ওহাটসঅ্যাপের থেকে নিয়ে নিতে পারে)
এটির একটি পঞ্চম ধাপও আছে যেটি অপশনালঃ আপনি
আপনার পছন্দের কোনো জিনিস পছন্দের মতন ডিজাইনে সাজাতে পারবেন। যেমন ব্রাস ফ্যামিলি
ট্রি, টিশার্ট, বই, জার, ইত্যাদি। এটি আপনার পছন্দের মেমোরির সাথে বদলানো যাবে। সেই
সামগ্রীগুলি টেকশই উপকরণ দিয়ে এবং স্থানীয় আর্ট ফর্ম অনুযায়ী তৈরি হয়।
ছবি সৌজন্যেঃ siblinijournal.com
খুব ছোট বয়েস থেকেই শ্রীয়া সিখসারিয়ার(Shriya Sekhsaria) সাফল্যের মুকুটে একটার পর একটা পালক যুক্ত হয়। তিনি যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তেন তখন তিনি একটি ডিজাইন প্রতিযোগিতা জেতেন যার আয়োজক ছিল রিবক। রিবক তার সেই ডিজাইনগুলি পরবর্তীকালে জার্সিতে ব্যবহার করে। তারপর তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়েসে প্রথম উপন্যাস লেখেন। তিনি সাইকোলজিতে স্নাতক হন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড স্টেটস থেকে এবং তারপর তিনি একটি টেক প্ল্যাটফর্মের কাজে মনোনিবেশ করেন যার উদ্দেশ্য ছিল, “নিজেদের সম্পর্কে ভালো বোধ করা”। তিনি এক বছর গোল্ডম্যান সাচ এ কাজ করেন, যেখানে তিনি একটি স্টার্টআপ তৈরি করেছিলেন যা সমস্ত শিল্পাঞ্চল জুড়ে বৈজ্ঞানিকভাবে এই বৈধ পরীক্ষামুলক সার্ভের মাধ্যমে জ্ঞানীয় মাত্রাগুলি মূল্যায়ন করে যা সেই শিল্পের কর্মক্ষমতা পরিমাপ, ব্যাখ্যা এবং পূর্বাভাস দিত। শ্রিয়া একজন ভালো ক্রীড়াবিদও ছিল এবং তিনি তীরন্দাজে জাতীয় স্তরে স্বর্ণ পদক অর্জন করেছিলেন।
নিজের জন্যঃ একটি জার শুরু করুন যা জানুয়ারি
মাসে কোনো স্মরণীয় মুহূর্ত দিয়ে তৈরি, এরকম একটি একটি করে মুহূর্ত যোগ করতে করতে বছরের
শেষে আপনার একটি সমগ্র মেমোরি জার পেয়ে যাবেন যা আপনাকে উদ্বুদ্ধ করবেই।
প্রিয়জনের জন্যঃ একটি শিশুর জন্ম থেকে বড় হওয়া
পর্যন্ত নানান স্মরণীয়, আনন্দের অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হন বা পরিবারের সাথে উদযাপন করেন।
সেই বিশেষ মুহূর্ত গুলি দিয়ে একটি জার বানান এবং সেই ছোটো থেকে বড় হওয়ার যাত্রাপথ তাকেই
উপহার দিন যখন সে বড় হয়ে যাবে।
আত্মীয় পরিজনের জন্যঃ একটি ফ্যামিলি ট্রি বানান অথবা
স্কুলের স্মৃতি নিয়ে মেমোরি জার বানাতে পারবেন।
বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্যঃ একটি জন্মদিনের কার্ড
বানান যেখানে বন্ধুবান্ধব/পরিবারের সকলের শুভেচ্ছাবার্তা সারাজীবন থেকে যাবে।
১৯০ টির ও বেশি দেশে লামহা অ্যাপের ইউসার আছে এবং এটি ৯০টির ও বেশি দেশে অ্যাপেল(Apple) টপ সোশ্যাল অ্যাপ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে। এই জানুয়ারিতে UK(United Kingdom) তে এর জনপ্রিয়তা ফেসবুকের থেকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। কারণ এই অ্যাপের ব্যাবহারকারি ৪ বছর থেকে শুরু করে ৯৯ বছর বয়সী পর্যন্ত, এবং বেশিরভাগ ব্যবহারকারি ২০ বছর বয়সসীমার আমেরিকান, ভারতীয় বা ব্রিটিশ মহিলা। কম্পানি গত লক ডাউন সময় বিশেষ প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল। গ্রাহকরা পারিশ্রমিক দিতে পাড়ছিলেন না এবং গ্রাহকদের কাছে জিনিস পৌঁছে দিতে সমস্যা হচ্ছিল।
শ্রীয়া বলেন, “সারা বিশ্বকে সুখকর এবং আত্মসন্তুষ্ট
স্থান করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য”