West Bengal

4 months ago

Flash Flood At Alipurduar: হড়পা বানে ভেসে গিয়েও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আশা

Panchayat Samiti President Asha came back from the face of death
Panchayat Samiti President Asha came back from the face of death

 

দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ জলদাপাড়ার জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ঘন অন্ধকারে হড়পা বানে খড়কুটোর মতো ভেসে যাচ্ছেন দু’টো মানুষ। সেই অবস্থাতেও হাতের ছাতাটা রক্ষা করতে মরিয়া মহিলা। কেন? বোঝা গেল একটু পরেই। ছাতায় মোড়া ছিল দু’টো মোবাইল। কোনও রকমে একটা মোটা গাছের ডাল আঁকড়ে প্রায় অবিশ্বাস্য ভাবেই বেঁচে গেলেন দু’জনে। বান থেকে বাঁচলেও জঙ্গল থেকে বাঁচাবে কে?

সেখানেই ত্রাতা মোবাইল। যা জান বাজি রেখে রক্ষা করেছেন মহিলা অর্থাৎ মাদারিহাট-বীরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আশা এস বোমজান। স্রেফ উপস্থিত বুদ্ধির জোরে নিজে বেঁচেছেন, বাঁচিয়েছেন গাড়িচালক বিমল কার্জিকেও। তবে এই প্রথম নয়, ঠিক এক বছর আগে মে মাসের এমন শেষ সপ্তাহেই তিতি নদীর হড়পা বানে ভেসে গিয়েও বরাতজোরে বেঁচেছিলেন আশা, তখন টোটোপাড়া-বল্লালগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তিনি।

মঙ্গলবার বিকেল চারটে নাগাদ আকাশ কালো করে আসায় মনে কু ডেকেছিল তাঁর। মনে পড়ছিল সেই স্মৃতি। আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কবার্তা জানা ছিল। তাই কাজ মিটিয়ে ফেরার তোড়জোড় করছিলেন আশা। কিন্তু হঠাৎই এক ব্যক্তি জরুরি কাজ নিয়ে আসায় আটকে যান তিনি। সব শেষ করে বেরোলেন যখন, ততক্ষণে সন্ধে সাড়ে ৬টা বেজে গিয়েছে। মাদারিহাট থেকে টোটোপাড়ায় তাঁর বাড়িতে ফেরার ২৭ কিলোমিটার দুর্গম পথে পড়ে তিতি, বাঙরি, হাউরি নদী আর ১৩টি পাহাড়ি ঝোরা। সেগুলিই চিন্তার কারণ।

ততক্ষণে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। পাল্লা দিয়ে বাজ পড়ছে। গাড়ির চালককে সঙ্গী করে টোটোপাড়ার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন আশা। চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অনায়াসে তাঁরা পার করে ফেলেন প্রায় শুকনো বাঙরি ও হাউরি নদী। কিন্তু সামনের দয়ামারা ঝোরায় যে, মরণফাঁদ তৈরি হয়ে আছে, তা ঠাহর করতে পারেননি আশা অথবা বিমল কেউই। পাহাড়ি ঝোরা দয়ামারার দুই ফুট জল অন্য দিন অনায়াসেই পার করেন ২৭ বছরের গাড়িচালক বিমল।

মঙ্গলবার রাতেও পাঁচশো মিটার প্রস্থের ওই ঝোরায় এসইউভিটি নামিয়ে দেন তিনি। কিন্তু খানিকটা এগোতেই ছুটে আসে হড়পা বান। হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে গাড়িতে। চোখের নিমেষে অর্ধেক ডুবে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। হড়পা বানে এর পরে খোলামকুচি মতো ভেসে যেতে শুরু করে গাড়িটি। ফোনে কাঁপা গলায় সেই অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছিলেন আশা।

তিনি বলেন, ‘গাড়িটা ভেসে যেতে শুরু করলে ভাবলাম, মৃত্যু তো নিশ্চিত, তবু শেষ চেষ্টা করে দেখি। বিমল ভাইয়া ততক্ষণে কাঁদতে শুরু করেছে। ও জানলার কাচ দিয়ে বেরোতে চাইছিল, আমি বারণ করি।’ আগের বছরের অভিজ্ঞতা থেকেই হয়তো মাথা ঠান্ডা রেখে ভাবতে পেরেছেন আশা। তাই সেই অবস্থাতেও খেয়াল করেন জল কোন দিকে বইছে।

তাঁর কথায়, ‘দেখলাম, ঝোরার জল পশ্চিম থেকে পুবে বইছে। মাথায় এল, মোবাইল দু’টোর যাতে ক্ষতি না হয়। যদি বেঁচে যাই, সাহায্যের জন্য খবর দিতে হবে তো।’ সঙ্গে থাকা ছাতার ভিতরে দু’টি মোবাইল ঢুকিয়ে গাড়ির ডান দিকের দরজা খুলে ভেসে যান দু’জনে। যতক্ষণ জলে ছিলেন, ছাতা উপরে তুলে রেখেছিলেন, যাতে মোবাইলে জল না ঢোকে। এ যেন অনেকটা ‘বাহুবলী’ সিনেমার সেই দৃশ্য। 

যেখানে খরস্রোতা নদীতে ভেসে যেতে যেতেও রাজবংশের উত্তরসূরিকে হাতে তুলে জলের উপরে রেখে দেন রাজমাতা শিবগামী দেবী।আশা জানিয়েছেন, গাড়ি থেকে বেরোনোর আগে বিমল ভাইয়াকে পইপই করে বলে দিয়েছিলেন হাত ছাড়া যাবে না। কারণ হাত ধরে যদিও বা রক্ষা পাওয়ার চান্স আছে, একবার হাত ছেড়ে গেলে জলের স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে তোর্সা নদীতে ফেলবে।

তাহলে বাঁচার আর কোনও পথ থাকবে না। এ বার কেঁদে ফেলে আশা বলেন, ‘ভেসে আসা বড় বড় পাথরে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিল সারা শরীর। ছিঁড়ে ফালা ফালা হয়ে যায় পরনের চুরিদার। তখন লজ্জা হারিয়েছি জীবন রক্ষার দায়ে। এক ঝটকায় ভেসে যাই প্রায় আশি মিটার।’ জলদাপাড়ার জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ভেসে যেতে যেতে হঠাৎই চোখে পড়ে, ডাঙার একটি বড় গাছের ডাল ঝুঁকে এসেছে জলের উপরে। সেই ডালটিকে জড়িয়ে ধরেন বিমল ও আশা। তখনও মোবাইল সমেত ছাতা এক হাতে উপরে তুলে রেখেছেন সাহসিনী।

গাছের ডালে চেপে ছাতার ভিতর থেকে মোবাইল বের করে একে একে পুলিশ ও বন দপ্তরে ফোন করেন তিনি। যোগাযোগ করেন বাড়িতে দাদাদের সঙ্গেও। এর পরে কিছু উৎকণ্ঠার প্রহর গোনার পরে উদ্ধার করা হয় দু’জনকে। পরপর দু’বার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে আশার। বললেন, ‘গত বছর তিতি নদীর ঘটনা যদি আমার মনে ৫০ শতাংশ দাগ কেটে থাকে, তবে মঙ্গলবার রাতের ঘটনার অভিঘাত ২০০ শতাংশ। ভোর চারটের পর বাড়ি ফিরেছি। বলতে পারেন এখনও বেঁচে আছি।’ দুর্যোগের কালো রাত পার হয়ে ভোর আসে। ‘শেষ চেষ্টা’তেই বেঁচে থাকে আশাটুকু!


You might also like!