দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ নববর্ষের সূচনায় পিঠে রোদ লাগিয়ে পরিবার নিয়ে ধারে-কাছে কোথাও একটু যেতে ইচ্ছা করছে, অথচ পকেটের টান আছে। বেশ তো! আপনার ঘরের পাশেই আছে দেয়ালটি গ্রাম। মনে আনন্দের রস উজাড় করে নিয়ে আসতে পারেন দু'এক দিনের জন্য।
শহরের কোলাহলে যখন মানুষ বিরক্ত হয়ে ওঠে, তখন দরকার দেউলটির মতো এক নিস্তব্ধ গ্রাম। রূপনারায়ণের কূলে অবস্থিত দেউলটি হতে পারে আদর্শ জায়গা। দেউলটির সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের এক চিরন্তন সম্পর্ক রয়েছে। এখানকার পানিত্রাসের সামতাবেড় গ্রামে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি। জীবনের শেষ কয়েক বছর তিনি এই গ্রামেই কাটিয়েছিলেন। দেউলটি গেলে শরৎচন্দ্রের বাড়ি দেখে আসতে ভুলবেন না। দেউলটি স্টেশন থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে। বছর কয়েক আগে রাজ্য সরকার এই বাড়িটির সংস্কার করেছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখন এই নিবাস পর্যটকের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। কথিত আছে এই বাড়িতে বসেই শেষ জীবনে কথাসাহিত্যিক তাঁর বেশ কয়েকটা মূল্যবান উপন্যাস লেখেন। কাঠের তৈরি আসবাবপত্রে সাজানো তাঁর বাড়ি। লেখার টেবিল থেকে শরৎচন্দ্রের ব্যবহৃত ঘড়ি— সবই সযত্নে রক্ষিত রয়েছে।এই বাড়ি থেকে দূরেই রূপনারায়ণ। রূপনারায়ন শীতে অবশ্য অনেক শান্ত।কিন্তু বর্ষায় হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর।
এছাড়াও দেউলটির অপর আকর্ষণ পাখি। অজস্র বহিরাগত পাখি শীতে এখানে এসে বাসাবাঁধে। রাস্তায় চলার ফাঁকেই হয়তো চোখে পড়বে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। তাঁদের রূপ, রঙের সমাহার মন কেড়ে নেবে। কলকাতা থেকে মাত্র ৬৩ কিলোমিটার দূরে গ্রামবাংলার এই অপরূপ দৃশ্য মনে গেঁথে যাবে সারা জীবনের জন্য। যেন গোটাটাই একটা ছবি। কোনও অচেনা শিল্পী রং আর তুলির আঁচড় কেটে যত্নে ক্যানভাস সাজিয়েছেন। মন ভোলানো গ্রাম। ক্ষেতে ক্ষেতে পাকা ধানের সুবাস। অল্প দূরেই হয়তো বছরের শেষ ফুলকপি তুলতে ব্যস্ত চাষীরা। পাশেই জড়ো করা আছে সদ্য ক্ষেত থেকে তোলা নতুন আলু। এমন দৃশ্য সব শহরবাসীর ভালো লাগবে। বাংলার এমন কোনো গ্রাম নেই,যেখানে মন্দির নেই। এখানেও আছে রাধা ও মদনগোপাল মন্দির। এই মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার কাজ মুগ্ধ করে। অনেকে মিলে গেলে শুধু ঘুরে চলে আসার চেয়ে, বনভোজন করতে পারেন। চড়ুইভাতির আসর বসাতে পারেন রূপনারায়ণের কূলে। মাতাল হাওয়া আর নদীর পরের চড়া রোদ বনভোজনের বাড়তি সংযোজন। তবে আমাদের মনে হয় অন্তত একটা রাত ওখানে কাটলে রাতের গ্রাম দেখেও আপনি মুগ্ধ হবেন।
যাওয়া - হাওড়া থেকে লোকাল ট্রেনে বড়জোর ২ ঘন্টায় দেয়ালটি। তারপর একটা অটো নিয়ে নিন। যেদিকে মন চায় চলে যান।
থাকা - অনেকেই সকালে গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসেন।তবে রাতের গ্রামের শোভা দেখার জন্য একটা রাত থেকে যান। স্টেশনের পাশে ও শরৎচন্দ্রের বাড়ির পাশে একাধিক রিসর্ট ও হোটেল হয়েছে। সবই এখন on line booking হয়।
তাই পরিবার নিয়ে চলুন শরৎচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত দেউলটির গ্রামে।