Livelihood message

1 year ago

প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা BYJU'S এর প্রতিষ্ঠাতার এই গল্প আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে

প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা BYJU'S এর প্রতিষ্ঠাতার এই গল্প আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে
প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা BYJU'S এর প্রতিষ্ঠাতার এই গল্প আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে

 

দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বন্ধুরা, আপনারা নিশ্চয়ই BYJU'S Learning App এর সম্পর্কে শুনেছেন, আজ আমরা BYJU'S Learning App এর প্রতিষ্ঠাতা বাইজু রবীন্দ্রনের সাধারণ শিক্ষক থেকে একজন সফল উদ্যোক্তা (Entrepreneur) হয়ে ওঠার গল্প জানবো।


বাইজু রবীন্দ্রন ১৯৮০ সালে কেরালার উপকূলবর্তী গ্রাম আজিকোডে একটি মালয়লি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং একটি যৌথ পরিবারে পিসি, কাকা এবং তাদের সন্তানদের সাথে বেড়ে ওঠেন। তার বাবা-মা দুজনেই শিক্ষক ছিলেন। তার বাবার নাম রবেন্দ্রন। তাঁর মায়ের নাম শোভনবল্লী। তার বাবা একজন কমিউনিস্ট এবং অবসরপ্রাপ্ত পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক এবং তার মা একজন অবসরপ্রাপ্ত গণিত শিক্ষক। স্বাভাবিক ভাবেই পরবর্তীকালে বাইজুও নিজের বাবা-মায়ের মতনই  শিক্ষকতার পথ অবলম্বন করেন। 


শুরুতে বাইজু রবীন্দ্রন কেরালার আজিকোডের একটি স্থানীয় মালায়লাম মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন যেখানে তার বাবা-মা দুজনেই শিক্ষক ছিলেন। এরপর তিনি কালিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের কান্নুরের একটি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি তার আগ্রহ ছিল। স্কুল এবং কলেজের দিন গুলিতে তিনি ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন এবং টেবিল টেনিস খেলতে পছন্দ করতেন। তার বাবা-মা তাকে সবসময় বিভিন্ন খেলাধুলা করার জন্য উৎসাহিত করতেন এবং খেলাধুলার গুরুত্বের ওপর জোর দিতেন। কিন্তু বাইজু রবীন্দ্রন কখনোই খেলা ধুলার পিছনে দৌড়ান নি। তার লক্ষ ছিল চিকিৎসা বা ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রেই তার ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করার পর একটি বহু-জাতীয় শিপিং ফার্মে একজন সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে চাকরি পান এবং কর্মসূত্রে সারা বিশ্বে ঘুরতে থাকেন। ছাত্র জীবনে তিনি ছিলেন মেধাবী। তিনি তার কিছু বন্ধুকে এম বি এ পরীক্ষার প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন, এবং গণিতে সাহায্য করেন। বাইজু গণিতে খুব ভালো ছিলেন ।


মজার ছলে বাইজু তার বন্ধুদের সাথে পরীক্ষা দেন। অবাক করার বিষয় ফাইনাল পরীক্ষায় তিনি ১০০ শতাংশ নম্বর পান, যেটি তার নিজের কাছেই অবাক করার বিষয় ছিল । তার এই আশ্চর্যজনক ফলাফল দেখার পর, তার বন্ধুরা একটি কোচিং ক্লাস শুরু করার, যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য ক্লাস নেওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি রাজি হন, তিনি তার উচ্চ বেতনের চাকরি থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তার কোচিং ক্লাস শুরু করেন। প্রাথমিক কালে বাইজু তার এক বন্ধুর বাড়ির ছাদে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে শুরু করেন এবং এখান থেকেই বাইজু একজন সফল উদ্যোক্তার(Entrepreneur)যাত্রা শুরু করেন।

প্রাথমিকভাবে, বাইজু শুধুমাত্র এমবিএ প্রার্থীদের পড়াতেন। তিনি এক সপ্তাহ বিনা পয়সায় শিক্ষার্থীদের পড়াতেন। শুরুতে তিনি একজন উদ্যোক্তা (Entrepreneur)হিসেবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হয়েছিলেন। 


শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে, তিনি ২০১১ সালে বাইজু (Think & Learn Pvt. Ltd.) নামে তার শিক্ষা প্রযুক্তি ফার্ম শুরু করেছিলেন যার ট্যাগলাইন হল "শিক্ষার প্রেমে পড়া" (Fall in love with learing)। তিনি, আইআইএম থেকে স্নাতক তার কিছু ছাত্রের সাহায্যে এই ফার্ম শুরু করেন যাদের লক্ষ্যে ছিল শিক্ষামূলক বিষয়বস্তু তৈরি করার।



বাড়ির ছাদ থেকে একটি শ্রেণীকক্ষে স্থানান্তর করে, মাত্র ২ লাখ টাকা দিয়ে কোচিং ক্লাস শুরু করেন বাইজু। এরপর বাইজু  ২০০৯ সালে সর্ব প্রথম প্রজুক্তির অন্তর্ভুক্ত করে CAT-এর জন্য একটি অনলাইন ভিডিও-ভিত্তিক শেখার প্রোগ্রাম শুরু করেন। তার কোচিং পদ্ধতি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে মুম্বাই, দিল্লি, পুনে, ব্যাঙ্গালোর এবং চেন্নাই সহ বিভিন্ন দেশের রাজ্যে বাইজু রভেন্দ্রনের ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অর্জন করেন।


দীর্ঘ ৪ বছরের কষ্টের ফলস্বরূপ তিনি ২০১৫ সালে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য BYJU'S Learning App - একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশান চালু করেন, যা তার ফ্ল্যাগশিপ প্রোডাক্ট, যা ছাত্র-ছাত্রীদের এই অ্যাপ এর শিক্ষাগত উপাদানগুলিতে অ্যাক্সেস পেতে সাহায্য করবে। 



এই লার্নিং অ্যাপটি CAT, NEET, GMAT, JEE, GRE - এর মতন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশিক্ষণ দেয় ।

এই লার্নিং অ্যাপের লক্ষ ছিল চতুর্থ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অনলাইন কোচিং প্রদান করা। বাইজু এটিকে কার্যকর করার পাশাপাশি আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করেছে।

BYJU's Learning Mobile App জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে এবং ছাত্র সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই লার্নিং অ্যাপের ৩.৫০ লাখের বেশি বার্ষিক সাবস্ক্রিপশন হয় যা প্রতিদিন গড়ে ৪০ মিনিটের জন্য লার্নিং অ্যাপ ব্যবহার এবং ৬০ লাখের বেশি ডাউনলোড এর সাফল্য অর্জন করে।

BYJU's Mobile App ভারতের ২০০০ এর বেশি মেট্রো এবং  ছোট শহরগুলির ছাত্রদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে যেখানে শিক্ষা এবং যোগাযোগের বিস্তার খুবই কম ।


BYJU'S Learning App হল ভারতের বৃহত্তম শিক্ষা সংস্থা যা ৪ থেকে ১২ শ্রেণীর ছাত্রদের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী, আকর্ষক এবং অভিযোজিত শিক্ষার প্রোগ্রাম অফার করে। শিক্ষামূলক অ্যাপটি CAT, IAS, JEE, NEET, GRE এবং GMAT এর মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাও প্রদান করে।

BYJU's এর লার্নিং অ্যাপটি সব বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে পছন্দের শিক্ষাগত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন হয়ে উঠেছে। এই অ্যাপটির অ্যানিমেশন, আকর্ষক ভিডিও, ইন্টারেক্টিভ সিমুলেশন, আসল বিষয়বস্তু এবং ভারতের সেরা শিক্ষকদের পাঠ অডিও, ভিজুয়ালাইজেশানের মাধ্যমে প্রচার করে।

এবার আসা যাক বিনিয়োগের দিকেঃ মোহনদাস পাই এবং রঞ্জন পাই ২০১৩ সালে বাইজুস ক্লাসে ৫০ কোটি টাকা (৫০০ মিলিয়ন রুপি) বিনিয়োগ করেন। এটিই প্রথম বিনিয়োগ যা ২০১৩ সালে এসেছিল।

BYJU's এশিয়ার একমাত্র স্টার্টআপ যা মার্ক জুকারবার্গ দ্বারা অর্থায়ন করা হয়। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে, বাইজু, চ্যান জুকারবার্গ ইনিশিয়েটিভ (CZI), Facebook এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ এবং তার স্ত্রী ডাঃ প্রিসিলা, টাইমস ইন্টারনেট লিমিটেড, লাইটস্পিড ভেঞ্চারস এবং সোফিনা দ্বারা তৈরি একটি জনহিতকর সংস্থা থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার অর্জন করেন।


একটি শিক্ষামূলক অ্যাপ হয়েও,  BYJU's এর আয় ২০১১-১২ অর্থবর্ষে ৪ কোটি, ২০১২-২০১৩ অর্থবর্ষে ১২ কোটি, ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে ২০ কোটি, ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে ৪৮ কোটি এবং ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে ১২০ কোটি আয় করেছিল, ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে  যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬০ কোটি টাকায়। 

বর্তমানে, BYJU's ৭০০ টিরও বেশি উচ্চ-মানের প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট টিম, ২০০ জন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর যারা কন্টেন্ট তৈরি করে এবং আকর্ষণীয় ভিডিও তৈরি করতে ১৫০টি সৃজনশীল মিডিয়া টিম এবং ১০০ টিরও বেশি টেকনোলজি টিমের সম্মিলিত সংস্থা হয়ে উঠেছে।

বাইজু রবীন্দ্রন তার এই অ্যাপের মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার দক্ষিণ আফ্রিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং আরও বিভিন্ন কমনওয়েলথ বাজারে বিস্তৃত করার লক্ষ নিয়েছেন।

You might also like!