দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক : মোবাইল কিংবা ট্যাবলেটের প্রতি শিশুদের অতিরিক্ত নির্ভরতা আজ বহু বাবা-মায়েরই মাথাব্যথার প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। দিনে দিনে বাড়ছে ‘স্ক্রিন টাইম’, আর তার সঙ্গেই জুড়ে যাচ্ছে নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার আশঙ্কা। কম বয়সেই চোখের সমস্যা, মনঃসংযোগের ঘাটতি, ঘুমের ব্যাঘাত—এসব যেন খুব সাধারণ হয়ে উঠছে।
এই পরিস্থিতিতে অনেকেই সন্তানের উপর রাগ ঝারেন, শাসন করেন। কিন্তু কঠোরতা বা শাস্তি খুব একটা ফলদায়ী হয় না—বরং অনেক সময় উল্টে প্রতিক্রিয়া হয় মারাত্মক। ফলে বাধ্য হয়েই অনেক সময় অভিভাবকদের নমনীয় হতে হয়, বা সন্তানের আবদারে হার মানতে হয়।
তবে এই সমস্যার একটা সমাধান আছে। শাসনের বদলে প্রয়োজন সচেতনতা ও পরিকল্পনা। বিকল্প কিছু পন্থা—যেমন শিশুদের জন্য বাস্তবিক খেলাধুলা, বই পড়ার অভ্যাস, সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা—তাদের মনোযোগ ভিন্নদিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। এতে শিশুরা ধীরে ধীরে স্ক্রিনের প্রতি আগ্রহ হারাতে শুরু করবে, এবং একটি সুস্থ, ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাত্রার দিকে ধাবিত হবে।
তবে এই সমস্যার সমাধানের জন্য অভিভাবকেরা কয়েকটি বিকল্প পথ বেছে নিতে পারেন।
১) স্কুলের বিজ্ঞানের পাঠ্যবইয়ে নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা থাকে, যা চাইলে বাড়িতেও করা সম্ভব। বাবা-মায়েরা সন্তানের জন্য হাতেকলমে এই ধরনের প্রজেক্ট তৈরি করতে পারেন। তার ফলে এক দিকে যেমন সে মোবাইল থেকে দূরে থাকবে, তেমনই পড়াশোনার প্রতিও আগ্রহ তৈরি হবে।
২) গোয়েন্দা গল্প বা ছবি শুধুই বড়়দের জন্য নয়। শিশুমনের মধ্যেও এক জন গোয়েন্দা বা অভিযাত্রী লুকিয়ে থাকে। বাড়িতে ছুটির দিনে তাদের জন্য বিভিন্ন ধাঁধা বা ‘ট্রেজ়ার হান্ট’-এর মতো খেলার আয়োজন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে সন্তানের বন্ধুদেরও এই খেলায় অংশ নেওয়ার জন্য বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানো যায়। তার ফলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটবে।
৩) বাড়িতে রান্নাঘরে বা বাগানের পরিচর্চায় ছোটদের অংশ নিতে বলা যেতে পারে। মোবাইল দূরে রেখে, বাড়ির এই ধরনের কাজে বড়দের সঙ্গে সে থাকলে তার মধ্যে সহজেই দায়িত্ববোধ তৈরি হবে। তবে রান্নাঘর বা বাগানের ক্ষেত্রে, ছোটরা যেন ধারালো কোনও জিনিস হাতে না নেয়, অভিভাবকদের তা খেয়াল রাখতে হবে।
৪) অল্প বয়স থেকে সন্তানকে বই পড়ানোর অভ্যাস তৈরি করা যেতে পারে। বইয়ের প্রতি আগ্রহ অনেকাংশে ছোটদের মোবাইল থেকে দূরে রাখতে পারে। একই সঙ্গে তাদের স্থানীয় গ্রন্থাগারের সদস্য করে দেওয়া যেতে পারে। তার ফলে বই পড়ার অভ্যাস টিকে থাকবে।
৫) মাঠে খেলাধুলোর পাশাপাশি বাড়িতে ছোটদের দাবা, পাজ়ল এবং অন্যান্য বোর্ড গেমের অভ্যাস করানো যেতে পারে। প্রয়োজনে বাবা-মায়েরা তাদের সঙ্গে খেলায় অংশ নিতে পারেন। মোবাইলের পর্দায় ভিডিয়ো গেমের তুলনায় এগুলি শিশুর মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে বেশি সহায়ক।