ডাঃ আশফাক্ আহমেদ : সাধারণ কথায় হার্টের রোগ বলে উল্লেখ করা হলেও হৃদয়ঘটিত সমস্যাগুলি সব ক্ষেত্রে একরকম হয় না। দুটি ক্ষেত্রে হৃৎপিন্ড সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করা হয়, তা হল হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেলিওর।
এই দুই-ই হৃদরোগের দুটি গুরুতর সমস্যা। তবে দুই ভিন্ন পরিস্থিতিতে দু-রকমের সমস্যার জন্ম
নেয়। রক্ত চলাচলের মাত্রা কমে গেলে তাকে হার্ট অ্যাটাক বলা হয় ও হার্ট যখন ব্লাড পাম্প
করে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পৌঁছে দিতে সক্ষম হয় না তখন তাকে হার্ট ফেলিওর বলা
হয়।
হার্টে যে করোনারি আর্টারি
বা যে ধমনীর সাহায্যে হৃৎপিন্ডে রক্ত চলাচল হয়, তা যদি কোন কারণে বন্ধ হয়ে যায় বা ধমনী
ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে, ব্লকেজ দেখা দেয় এবং নিঃশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয় তখন হার্ট
অ্যাটাক বলা হয়।
অন্যদিকে শরীরে যে পরিমাণ রক্ত চলাচলের প্রয়োজন তা যদি হার্ট পাম্প করতে না পারে তখন হার্ট ফেলিওর ঘটতে পারে। হার্টের পাম্পিং অ্যাকশনের গতি কমে যায় মাসলের দুর্বলতার কারণে যার অনেক কারণ থাকতে পারে। অর্থাৎ আর্টারি বা ধমনী ব্লক হলে তাকে হার্ট অ্যাটাক বলা হয় ও হার্টের পাম্পিং অ্যাকশন কমে গেলে তাকে হার্ট ফেলিওর বলা হয়।
জীবনযাত্রার কারণে হৃদপিন্ডে
নানাভাবে কোলেস্টেরল প্লাক জমা হতে থাকে। ফলে মাসলগুলি ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু
করে এবং এর থেকে পরবর্তীকালে হার্ট ফেলিওরের সম্ভাবনা থেকে যায়। একাধিকবার হার্ট অ্যাটাক
পরোক্ষে হার্ট ফেলিওরের সম্ভাবনাকে অনেকাংশেই বাড়িয়ে তোলে। করোনারি আটারি ডিজিজ মায়োকার্ডিয়াক
ইনফার্কশন ও ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজকে একসঙ্গে এ্যাকিউট করোনারি সিনড্রোম বলা হয়। এদের
সম্বন্ধে বলা যেতে পারে।
করোনারি আর্টারি ডিজিজের ক্ষেত্রে
হার্টের ভেতর কোলেস্টেরল জমে একধরণের প্লাক তৈরি হয় যা ফ্রাইবেবাসিসের জন্ম নেয়। এর
থেকে ধীরে ধীরে সমস্যার লক্ষণগুলো প্রকট হয়।
মায়োকার্ডিয়াক ইনফার্কশনকে
সাধারণ ভাষায় হার্ট অ্যাটাক বলা হয়। যখন কোন ব্লাড ক্লটের কারণে রক্ত চলাচলের স্বাভাবিক
গতি বাধা পায় এবং রক্তের অভাবে টিস্যুগুলি অক্সিজেন না পেয়ে নির্জীব হয়ে পড়ে, এই অবস্থাকে
বলা হয় হার্ট অ্যাটাক।
ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ অর্থাৎ
মূল ব্লাড ভেসেল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। কোলেস্টেরল জমার ফলে যে ব্লকের সৃষ্টি হয় তা করোনারী
ধমনীর পথকে সরু করে তোলে বা রক্ত চলাচলের স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হয়।
হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণ হলো, অনেকক্ষণ সময় ধরে বুকে বেশীমাত্রায় যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণা বা ব্যথা অনেক সময়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ও স্থায়ী থাকে। এর সাথে ঘাম হওয়া, ব্লাডপ্রেসার কমে যাওয়ার ফলে মাথা ঘোরা, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট হওয়া ইত্যাদি এগুলোর কোন একটি বা সবগুলিই হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হার্ট ফেলিওর তাদেরই হয়, যাদের আগে হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে বিছানায় শুতে গেলে বা ঘুমোতে গেলে শ্বাসকষ্ট হয়, সেইসময়ে উঠে বসলে একটু আরাম বোধ হয়। মাঝে মাঝেই হাঁফ ধরে - এগুলিই হার্ট ফেলিওরের সম্ভাবনা।
বুকে ব্যথা শুরু হলে অনেকেই
গ্যাসের ব্যথা ভেবে অ্যান্টাসিড খান। কিন্তু বেশিক্ষণ বুকে ব্যথা ফেলে না রেখে কাছাকাছি
হাসপাতালে দেখানোই ভালো। জীবনটা আনন্দে কাটান। আনন্দে বাঁচতে হলে সুস্থ জীবনধারা বজায়
রাখুন। এটা খুবই জরুরি। সুষম খাবার ও নেশাহীন জীবনযাপন রোগকে দূরে রাখে। আগামীদিনে
আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।