ডাঃ আশফাক্ আহমেদ কলমে লিখেছেন :সমীক্ষায় দেখা গেছে যাদের হার্ট ডিজিজ আছে তারা ডায়াবেটিস নাও হতে পারেন, কিন্তু যারা ডায়াবেটিস রোগী তাদের হার্ট ডিজিজ বা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের অনেক সম্ভাবনা থাকে। হার্ট ডিজিজ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে অবশ্যই প্রয়োজন- ওজন নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন, তেল, ঝাল, মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা, ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত পরিশ্রম, প্রচুর ফল খাওয়া ও শাক-সবজি খাওয়া, জীবনের পরিবর্তন ও স্ট্রেস কম করা, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়া। উল্লেখিত পদ্ধতিগুলি অবলম্বন করেও এবং নতুন ওরাল অ্যান্টিবায়োটিক মেডিসিন নেওয়া সত্বেও যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না আসে তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন নেওয়া আবশ্যক। ইনসুলিন থেকে মানুষের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। পরবর্তীকালে এর থেকে অন্যান্য শারীরিক জটিলতা (কিডনি, নার্ভ, চোখের সমস্যা) দেখা দিতে পারে।
যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা ৩-৪ গুণ বৃদ্ধি পায়। যেসব মহিলাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের অনেক কম বয়সে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও ডায়াবেটিস থাকলে হার্ট ফেলিওর, করোনারি হার্ট ডিজিজ, কার্ডিওমায়োপ্যাথি ইত্যাদির সম্ভাবনা থাকে। যেসব ডায়াবেটিক মানুষের হার্ট ডিজিজ রয়েছে তাদের অনেকসময় কোনও উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু যে উপসর্গগুলি দেখা যায় তা হল ---
- বুকে ভারী কিছু অনুভব করা।
- হাঁচির সময় নিচের চোয়ালে, বুকে,বাঁ হাতে ব্যথা হওয়া।
- শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা।
- অতিরিক্ত ঘাম হওয়া বা দুর্বলতা অনুভব করা।
এই উপসর্গগুলিকে অনেকে হজমের সমস্যা ভেবে ভুল করে থাকেন। যার ফলে সেটা দীর্ঘদিন অবহেলিত থেকে যায়। সেহেতু প্রাথমিক অবস্থাতেই এইসব উপসর্গ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের (কার্ডিওলজিস্ট) পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ডায়াবেটিসের কারণে যদি হার্ট ডিজিজ দেখা যায় সেক্ষেত্রে প্রথমেই রোগীর সম্পূর্ণ কার্ডিয় চেক আপ করানো হয়। এছাড়াও প্রয়োজন হলে ইকো-কার্ডিওগ্রাফি, ট্রেডমিল টেস্ট করার কথাও বলা হয়। যদি ট্রেডমিল টেস্টে রিপোর্ট পজিটিভ আসে সেক্ষেত্রে চিকিৎসক করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ডায়াবেটিস এবং হার্ট ডিজিজ প্রতিরোধে কিছু জরুরি সতর্কতার প্রয়োজন। যেমন ---
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে প্রত্যেকের উচিত ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করা।
হার্ট ডিজিজ থাকলে ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন।
- ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন।
- প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি খাওয়া।
- প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা ও যোগব্যায়ামের অভ্যাস।
- চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়া।
পরিশেষে বলা যায়, ডায়াবেটিস বা হার্ট ডিজিজ নিয়ে অযথা ভয় না পেয়ে প্রাথমিক অবস্থাতেই সচেতনতার প্রয়োজন।