রামপুরহাট, ২৩ জুন: শুক্রবার ভোর থেকে খুন্তি নেড়ে মায়ের ভোগ তৈরি করে চলেছেন কাপাস শেখ, বাসাই শেখ, বানুধন টুডু, সাবা হেমরম, দিলীপ মণ্ডল, বৃন্দাবন মণ্ডলরা। দুপুর থেকে বিকেল গড়িয়ে ঘন জঙ্গলের মধ্যে তাদের হাতে তৈরি ভোগই গ্রহণ করলেন হাজার ছয়েক মানুষ। এক সময়ের গা ছম ছম করা জঙ্গলে অম্বুবাচি পুজোয় ধরা পড়েছে সম্প্রীতির নিদর্শন।
রামপুরহাট থেকে ঝাড়খণ্ডের দুমকা রোড ধরে তিন কিলোমিটার গেলেই বাম দিকে মিলবে দেবীপুর গ্রাম। তার পাশেই সেচ কাঁদরের পাশে রয়েছে ঘন জঙ্গল। নাম ‘মাটি মহল’। সেখানে এক সময় ছোট্ট একটি ঢিপি দেখতে পান দেবীপুর গ্রামের মানুষ। উৎসুক মানুষ ওই ঢিপি নিয়ে ইতিহাস ঘাঁটতে শুরু করেন। পুজোর মুল উদ্যোক্তা স্বপন মণ্ডল বলেন, “ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গিয়েছে ১২৯২ সালে ঝাড়খণ্ডের মলুটির রাজা বাজ বসন্ত জমিদার ছিলেন। তাঁর ছেলে বান রায় ১৩০০ সালে ছোট্ট মন্দির তৈরি করেন। নাম দেওয়া হয় বাম রায় চণ্ডী। বর্তমানে মন্দিরের বাম বদলে দেওয়া হয়েছে ব্যাঘ্র চণ্ডী। আগে গ্রামবাসীরা প্রতিবছর ৭ আষাঢ় অম্বুবাচি পুজো করতেন ঢিপির উপর। পরবর্তীকালে ২০১১ সালে বনহাট গ্রামের বাসিন্দা স্বপন মণ্ডল মন্দির সংস্কার করেন। সুদৃশ্য মন্দির নির্মাণের পাশাপাশি রাজস্থান থেকে পাথরের ব্যাঘ্র চণ্ডী মূর্তি নিয়ে শেষ স্থাপন করা হয়। এবার একই জায়গায় শিব মন্দির উদ্বোধন করা হল। স্বপনবাবু বলেন, “বনহাট অঞ্চল এবং রামপুরহাট শহরের মানুষ এই পুজো অংশগ্রহণ করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি”। পুজো উপলক্ষে জঙ্গলের মধ্যে বসেছে মেলা। দুপুরে খিচুড়ি ভোগ গ্রহণ করে বিকেলে জিলিপি খেতে খেতে বাড়ি ফিরলেন সনমানি মুর্মু, চিত্তরঞ্জন মণ্ডল, বাসাই শেখরা। স্বপনবাবু বলেন, “এই পুজো সকলের। এই পুজোকে সম্প্রীতির উৎসব বললেও ভুল বলা হবে না। কারণ মেলায় বহু মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। এমনকি তারা পুজোর তদারকিতেও সামিল হয়েছেন”।