দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ শাস্ত্র মতে ষষ্ঠীর দিন দেবীর আবাহন হলেও, সপ্তমীতের নব পত্রিকা বা কলা বৌ স্নানের মধ্যে দিয়ে দেবীর বোধন হয়। কলাবৌ স্থাপন করা হয় গণেশের পাশে, কলাবৌ এর এই অবস্থান দেখে সকলের মনেই এই ধারনা বিরাজ করে কলাবৌ গণেশের স্ত্রী। আদতে তা কিন্তু নয়। কারণ পুরাণ অনুসারে, গণেশের দুই স্ত্রীয়ের নাম রিদ্ধি ও সিদ্ধি।
সমাজতাত্ত্বিকরা বলেন, দেবী দুর্গার পুজো আদতে ‘শাকম্ভরী’ মূর্তিকল্পনার আড়ালে নবপত্রিকার পুজো।বঙ্গদেশের দুর্গাপুজোয় এই ‘নবপত্রিকা’-ই ‘কলা-বৌ’ হিসেবে পুজিত হয়।বিভিন্ন পুরাণ থেকে পাওয়া তথ্য ও তত্ত্ব অনুসরণ করে দেবীর ৯টা রূপ স্থির করা হয়েছে এবং সেগুলোর প্রতীক হিসাবে ৯টা বিভিন্ন গাছের ডাল বা অংশ নিয়ে গড়া হয় ‘নবপত্রিকা। এতে কলাগাছ, কালোকচু, মানকচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, অশোক ও ধান ব্যবহার করা হয়। এগুলো শ্বেত-অপরাজিতা লতা ও হলুদ রঙের সুতো দিয়ে বেঁধে তৈরি হয় ‘নবপত্রিকা। এই গাছগুলোকে বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।আসুন জেনে নিই কোন গাছ কীসের প্রতীক।
কলাগাছ হল ব্রাহ্মণী-র প্রতীক,
কালোকচু কালিকা-র প্রতীক,
মানকচু চামুণ্ডা-র প্রতীক,
হলুদ দুর্গা-র প্রতীক,
জয়ন্তী কার্তিকী-র প্রতীক,
বেল শিব/শিবানী-র প্রতীক,
ডালিম রক্তদন্তিকা-র প্রতীক,
অশোক শোকরহিতা-র প্রতীক ও
ধান লক্ষ্মী-র প্রতীক।
মহাসপ্তমীর সকালে অনুষ্ঠিত হয় নবপত্রিকার স্নান পর্ব। বারোয়ারি, সর্বজনীন এবং কিছু কিছু পারিবারিক পুজোতে গঙ্গা স্নানপর্ব সারা হয়। কিন্তু বেশ কিছু পারিবারিক পুজোতে নবপত্রিকার ‘মহাস্নান’ অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাদালানেই।দুর্গাপুজোয় ‘কলা-বৌ’ বা ‘নবপত্রিকা’ স্নানের জন্য প্রয়োজন হয় অষ্টকলস, মাথাঘষা,তেল-হলুদ, পঞ্চামৃত (দুধ, দই, ঘি, চিনি, মধু), পঞ্চরত্নের জল (সোনা, রুপো, প্রবাল, মণি, মুক্তো ধোয়া জল), পঞ্চগব্য (গো-চোনা, গো-মল, দুধ, ঘি, দই), পঞ্চশস্য (ধান, যব, তিল, মুগ, মাসকলাই), পঞ্চকষায় (জাম, কুল, বকুল, বেড়েলা, শিমুলছালের রস), বৃষ্টির জল, ডাবের জল, শিশিরের জল, সমুদ্রের জল, উষ্ণ জল, তীর্থের জল, পদ্মরেণু রস, আখের রস, সবৌষধী, মহৌষধী, বরাহদন্ত মৃত্তিকা, বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা, চতুষ্পথ মৃত্তিকা (রাস্তার চার মাথার মোড়ের মাটি), অগুরু, চন্দন, ফুলনতেল। এই উপাচারে ‘নবপত্রিকা’ বা ‘কলা-বৌ’ স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে দুর্গার ডান পাশে স্থাপন করা হয়, যার অন্য নাম ‘পুষ্টি’। যেহেতু দুর্গা প্রতিমায় একেবারে ডান পাশে গণেশের ডান পাশে তাকে উপবেশন করা হয়। যেহেতু গনেশের পাশে ইনি অবস্থান করেন তাই অনেকেই কলাবৌকে গনেশের বউ বলে ভুল করে থাকেন।