দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ পূর্ব পুরুষদের এই ঐতিহ্য বজায় রেখে আজো পুজো হয় আদি কংস বণিক সম্প্রদায়ের দুর্গাপুজো। মালদহ শহরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী পুজো গুলোর মধ্যে এই পুজো অন্যতম।মালদহ শহরের দুর্গাবাড়ি মোড়ে প্রায় তিনশো পরিবার রয়েছেন আদি কংস বণিক সম্প্রদায়ের। পূর্বপুরুষ ধরেই এই তিনশোটি পরিবার পুজোর দায়িত্ব পালন করে আসছে। বাইরের কোনও ব্যাক্তির কাছে পুজোর চাঁদা আদায় করা হয় না। শুধুমাত্র কংস বণিক সম্প্রদায়ের পুরুষেরা পুজোর চাঁদা দেন। সম্প্রদায়ের কোন মহিলাদের থেকেও চাঁদা নেওয়া হয় না। তবে কেউ দান করলে তা গ্রহণ করা হয়।
পুজো কমিটির সদস্য জয়ন্ত কুমার দাস বলেন, পূর্বপুরুষের রীতি এখনও বহাল। আমাদের সম্প্রদায়ের পরিবারের পুরুষেরাই শুধুমাত্র চাঁদা দেন। বাইরের কোন চাঁদা আমরা নিই না এমনকি আমাদের সম্প্রদায়ের মহিলাদেরও চাঁদা নেওয়া হয় না পুজোর জন্য।
ঠাকুর দালানে ১৫৬ বছরে পা দিল আদি কংস বণিক দুর্গাবাড়ির দুর্গাপুজা। তবে এই পুজোর সূচনা প্রায় তিনশো বছর আগে।কথিত রয়েছে মহানন্দা নদীর নিমতলীপাড়া ঘাটে ভেসে আসে একটি পাথরচক্র। স্বপ্নাদেশে এক বৃদ্ধা সেটি লাভ করেন এবং নিজগৃহে নিয়ে গিয়ে দেবী চণ্ডী জ্ঞানে তার পুজা শুরু করেন । পরবর্তী সেই পুজোর দায়ভার নেন তৎকালীন জমিদার গিরিজাবাবু এবং সাড়ম্বরে তিনি দুর্গা পুজো শুরু করেন।
শেষ বয়সে তিনি ওই পাথরচক্রটি স্থানীয় কংস বনিক সম্প্রদায়ের হাতে তুলে দেন।ইংরেজি ১৮৬৮ সালে কংস বণিক সম্প্রদায় তাদের পূর্বপুরুষের দান করা জমিতে দুর্গা মন্দির নির্মাণ করেন। পুজো কমিটির সদস্য নবগোপাল মণ্ডল বলেন, পূর্বপুরুষদের মুখে আমরা শুনেছি স্বপ্নাদেশে এক বৃদ্ধা এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। মহানন্দা নদীর ঘাট থেকে একটি পাথরচক্র তিনি পান। সেটি চণ্ডী রূপে পুজা শুরু হয়। পরবর্তীতে এলাকার জমিদার সম্প্রদায়ের হাতে এই পুজোর দায়িত্বভার তুলে দিয়েছিলেন।
ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরকে ঘিরে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দুর্গা বাড়ি মোড়ের নামকরণ হয়।পূর্বপুরুষদের অনুসরণ করে একই পরম্পরায় মায়ের আরাধনায় মেতে ওঠেন আদি কংস বণিক সম্প্রদায়ের পরিবার গুলি। প্রতিবছর ঘটভরা থেকে শুরু করে পুষ্পাঞ্জলি, সন্ধি পুজা, সন্ধ্যা আরতি, বিসর্জন সবই চলে পুরনো প্রথা মেনে। দূর দুরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে পুজোর টানে, জাঁকজমকপূর্ণ আধুনিক যুগেও সমহিমায় দাঁড়িয়ে দুর্গা বাড়ি।
আজও পুজোতে সপ্তমীর সকালে ঘটকরা, সুসজ্জিত শোভাযাত্রা ও দশমীর দিন বিকেলে মাকে ঘাড়ে করে নিয়ে যাওয়া হয় নিমতলী ঘাটে এবং সেখান থেকে নৌকা করে মিশন ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। নৌকা ফিরে সদরঘাট এলাকায় ফিরে এসে দেবী প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। সময়ের স্রোতে অনেক কিছু বদলালেও বদলাইনি দুর্গা বাড়ির পরম্পরা। তাই আজও মন্দির প্রাঙ্গনে তৈরি করা হয় দেবী প্রতিমা। সাবেকি মূর্তির পুজো করা হয় দুর্গা বাড়ি মন্দিরে।