দুরন্ত বার্তা
ডিজিটাল ডেস্কঃ- আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার বাকি, তারপরই কালীপুজোর আনন্দে মাতবে গোটা দেশবাসী।
দিকে দিকে শুরু হয়ে যাবে মা কালীর আরাধনা। শাস্ত্র মতে, দেবী কালি হলেন দশমহাবিদ্যার
প্রথম দেবী। শাক্তমতে কালী হল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদি কারণ।
বাড়ি থেকে বারোয়ারি,
এখন সর্বত্রই চলে কালীপুজোর আরাধনা। এর মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য বর্ধমান রাজবাড়ির
কালী মন্দিরের পুজো, যা লোকমুখে বর্ধমানের বিদ্যাসুন্দর কালী বাড়ির পুজো। এই বাড়িতে
আগে হত নরবলি। তবে সেই নরবলি বন্ধের নেপথ্যে রয়েছে এক প্রেম কাহিনী।
বর্ধমানের মহারাজা
তেজচাঁদের আমলের কথা। বর্ধমানের বেশিরভাগ এলাকা ছিল ঘন জঙ্গলে ভর্তি। বিশেষ করে দামোদর
তীরবর্তী তেজগঞ্জ এলাকায় ছিল আরও গভীর জঙ্গল। রাতের বেলা তো দূর, দিনের বেলায় গা ছমছমে
পরিবেশ থাকত। কেউ সাহাস পেত না একা ঐ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবার। সেখানে ছিল প্রাচীন
কালী মন্দির। সেখানে পুজো দিতে আসতেন রাজা।লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে এই কালী মন্দিরে নরবলি
দেওয়া হত। যারা অন্যায় অত্যাচার করত তাঁদের ধরে এনে মায়ের সামনে বলি দেওয়া হত। তাই
সেই সময় এই কালী দক্ষিণ শ্মশানকালী নামেও পরিচিত ছিল।
এই মন্দিরের
পূজারি ছিলেন সুন্দর নামে এক যুবক। রাজবাড়ি থেকে এই মন্দিরে পুজোর ফুল দিতে আসতেন
মালিনী মাসি।একদিন মালিনী মাসি মন্দিরে ফুলের মালা নিয়ে এসেছেন। সেই মালা দেখে পূজারি
সুন্দর মালীকে জিজ্ঞাসা করেন, এত সুন্দর ফুলের মালা কে গেঁথেছে ? যে মালা গেঁথেছে সেও
নিশ্চয়ই এমনই সুন্দর! তাকে কী একবার দেখা যাবে ? উত্তরে মালী বলে ওঠেন, এটা সম্ভব
নয়.. কেননা এই মালা গেঁথেছে স্বয়ং রাজকন্যা বিদ্যা। এই কথা শোনামাত্র পূজারি সুন্দরের
আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।
একদিন লুকিয়ে
সবার অন্তরালে গুপ্তপথ দিয়ে রাজকন্যাকে প্রথমবারের মত দেখলেন। তাঁর অপরূপ সৌন্দর্যে
মূর্ছা যাবার জোগাড় সুন্দরের। এভাবে তাঁরা লুকিয়ে প্রেম করতে লাগলেন দুজনে। এই গুপ্তপথের
কথা আর জানতে বেশি বাকি রইল না রাজার। রাজার কানে পৌঁছোতেই রেগে আগুন। রেগে গিয়ে রাজা নির্দেশ দেন রাজকন্যা বিদ্যা ও পূজারি
সুন্দর দুজনকেই বলি দেওয়া হবে। দিনও স্থির হয়ে যায়।
যেদিন বলি হবে
সেদিন দুজনকে নিয়ে কাপালিক উপস্থিত হল মা কালীর মন্দিরে। এদিকে সুন্দর ও বিদ্যা তাঁরা
শেষ আবেদনটুকু করে কাপালিককে। যেন তাঁদের যেন শেষবারের মত মাকে প্রণাম করতে দেওয়া হয়।
কাপালিকও রাজি হন। এরপর তাঁরা দুজনে মাথা ঠেকিয়ে মা কালীকে মনে মনে ডাকতে থাকে। তখনই
ঘটে এক অলৌকিক কান্ড। মেঘের ঘনঘটা তৈরি হয়। প্রচন্ড জোরে বিদুৎ এর শব্দ শোনা যায়। ঘুঁটঘুঁটে
অন্ধকারে চারিদিক ঢেকে যায়। বিদ্যা ও সুন্দর তাঁরা দুজনেই অদৃশ্য হয়ে যায়। এদিকে কাপালিক
এসব দেখে অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখেন সবকিছু স্বাভাবিক, কিন্তু সেখানে
নেই বিদ্যা ও সুন্দর। তাঁদের খোঁজ
কোথাও পাওয়া যায় নি। স্থানীয়দের বিশ্বাস মা কালী নিজের কাছে টেনে নিয়েছেন তাঁদের। এরপর
থেকেই রাজার আদেশে বন্ধ হয়ে যায় নরবলি।