
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: প্রাথমিক ট্রেন্ডে বিহারে জয়ের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়ামাত্রই এবার পশ্চিমবঙ্গকে নিশানা করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং। জয়ের আভাস পেয়েই তিনি সপাটে হুঙ্কার ছেড়েছেন, "বিহারে আমরা জিতছি, এ বার আমাদের লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ।"
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেস খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ। তৃণমূল নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বিজেপি বিহারে এর আগেও জিতেছিল, তাই এটি কোনো নতুন অর্জন নয় এবং তাদের এই হুঙ্কারকে তারা পাত্তা দিচ্ছে না।
দুপুর পৌনে বারোটা পর্যন্ত পাওয়া ফলাফল অনুযায়ী, রীতিমতো ছুটছে এনডিএ-এর অশ্বমেধের ঘোড়া। সেখানে এখনও পর্যন্ত ম্যাজিক ফিগারের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনি মহাগঠবন্ধন। বুথ ফেরত সমীক্ষা মিলিয়ে এনডিএ শিবিরের জয় এখন সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।যদিও এসবকে গুরুত্ব দিতে রাজি নয় তৃণমূল। তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথায়, “বাংলায় শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভরসা।”
বাংলা দখলে গত কয়েকবছর ধরে মরিয়া লড়াই করছে বিজেপি। ২০২১-এর বিধানসভায় বাংলায় দু’শোর বেশি আসন জিতবে বলে আত্মবিশ্বাসী ছিল পদ্মশিবির। ভোট প্রচারে মোদি-শাহের মুখে বারবার শোনা গিয়েছিল সে কথাই। যদিও তা বাস্তবায়িত হয়নি। দু’শো তো দূর-অস্ত, বাংলায় একশো আসনের কাছাকাছিও পৌঁছতে পারেনি গেরুয়া শিবির। ছাব্বিশে শাসকদলকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তেও রাজি নয় বঙ্গ বিজেপি। তবে বিজেপির পক্ষে আদৌ বাংলায় আধিপত্য স্থাপন সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয়ে দলের নেতারাও। এসবের মাঝেই বিহারের এই ট্রেন্ড যে বঙ্গ বিজেপিকে অক্সিজেন দিচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুক্রবার বিহারের ফলাফল স্পষ্ট হতেই বাংলা দখলের ডাক দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং। তিনি বলেন, “আমরা বাংলাতেও জিতব। ওখানকার বর্তমান সরকার বাইরের শক্তির মদতে রাজ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। কিন্তু বাংলার মানুষ এবার সত্যটা বুঝতে পারবেন।”
কার্যত একই সুর বঙ্গ বিজেপির নেতাদের গলায়। বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, “বিহারে এসআইআর না হলেও বিজেপি সাফল্যের সঙ্গে ক্ষমতায় এসেছে আগে। এর কারণ, উন্নয়ন, ভয়মুক্ত বিহার ও ভোটার লিস্ট শুদ্ধিকরণ। তৃণমূল বলছে ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। সেটা কী করে সম্ভব? আসলে ওদের চিন্তা বাংলাদেশি, রোহিঙ্গাদের নিয়ে। ওরা জানে এদের নাম বাদ গেলে ওরা খড়কুটোর মতো ভেসে যাবে।” বিহারের ফলাফল কী হতে চলেছে, তা মোটামুটিভাবে স্পষ্ট হতেই এক্স হ্যান্ডেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নীতীশ কুমারকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। “চাকরি চোর, নারী আক্রমণকারীদের হারাব”, বলেন শুভেন্দু। অর্থাৎ বিহারের ফল যে বাংলায় লড়াইয়ের বাড়তি শক্তি জোগাবে, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।
যদিও গিরিরাজ সিং-সহ বিজেপি নেতাদের এই মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। দলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পালটা দিয়ে বলেন, “ওটা বিহারের সমীকরণ। বাংলার সঙ্গে সম্পর্ক নেই। বাংলায় প্রভাব পড়বে না। বাংলায় উন্নয়ন, ঐক্য, সম্প্রীতি, অধিকার, আত্মসম্মান ফ্যাক্টর। ২৫০+ আসন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন।” এখানেই শেষ নয়। তিনি আরও বলেন, “বিহার দেখিয়ে বাংলাকে হুমকি দিয়ে বিজেপির যে নেতারা বিবৃতি দিচ্ছেন, হুমকি দিচ্ছেন, তাঁরা অকারণ সময় নষ্ট করছেন। বাংলার মানুষের অধিকার, আত্মসম্মানকে আঘাত করে, শুধু অন্য রাজ্য দেখিয়ে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় না। এখানে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভরসা। বিহার-সহ বহু রাজ্য তাঁর উন্নয়নের মডেল ফলোও করছেন। বাংলার মানুষ সার্বিক স্বার্থেই তৃণমূলকে সমর্থন করেন এবং করবেন।” তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তীর কথায়, “ওদের রুখতে যা পরিকাঠামো প্রয়োজন, কংগ্রেস তা তৈরি করতে পারেনি। ওদের হারাতে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সফল। তা ওরা বারবার প্রমাণ করেছে। ভোটচুরিটা আটকাতে হয় ভোটের সময়। যেটা তৃণমূল পেরেছে। কংগ্রেস সেটা পারেনি, ওদের সেই পরিকাঠামো নেই। বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে দেশে একমাত্র ভরসাযোগ্য মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
এনডিএ ঝড় নিয়ে সিপিআইএম (এল)-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “বিহারে এসআইআরের পর অনেক প্রশ্ন আছে, কমিশন তার জবাব দেয়নি। এসআইআরের পর ৭ কোটি ৪২ লক্ষ ভোটার ছিল। কিন্তু কমিশনের প্রেস নোটে দেখা যাচ্ছে ৭ কোটি ৪৫ লক্ষ ভোটার ভোট দিয়েছে। তাই অনেক প্রশ্ন। কিন্তু সন্তোষজনক কোনও উত্তর নেই। আর রেজাল্ট এখনও অনেক কিছু হতে পারে। এটা একদমই প্রাথমিক ফল। তাই কিছু বলব না।” মহাগটবন্ধনে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়া প্রসঙ্গে কংগ্রেস মুখপাত্র কেতন জয়সওয়াল বললেন, “যদি এটাই ফাইনাল ফল হয়ে থাকে, তাহলে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে। আর এসআইআরের বিরোধিতা আমরা কোনওদিন করিনি। তবে কেন্দ্রের অঙ্গুলিহেলনে এসআইআরের বিরোধিতা করছি।” তৃণমূলকেও নিশানা করলেন তিনি। বললেন, “ভুয়ো ভোটার বাদ যাক, বৈধরা যেন বাদ না যায়।”
