শিলচর (অসম), ১৭ জুন : ম্যালেরিয়া মাসে কাছাড় জেলা স্বাস্থ্য সমিতির সভায় রোগ প্রতিরোধের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। রবিবার সিভিল হাসপাতালের কনফারেন্স হল-এ ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ মাসের সভা এবং ভেক্টরবাহিত রোগের ওপর আইইসি অভিযানের সূচনা হয়।
স্বাস্থ্য বিভাগের জয়েন্ট ডিরেক্টর ডা. আশুতোষ বর্মণের পৌরোহিত্যে আয়োজিত সভায় ডা. এমআই বড়ভুইয়াঁ, জুহি লস্কর, অরিজিৎ নাথ, অ্যাকাউন্টস অ্যাসিস্ট্যান্ট অজয় কর, সহ-ম্যালেরিয়া ইন্সপেক্টর এবং আরবান আশাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কাছাড় জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ২০২৪ সালের পুরো জুন মাস ম্যালেরিয়া বিরোধী মাস হিসাবে পালন করছে। ম্যালেরিয়ার লক্ষণ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, পরীক্ষা এবং চিকিৎসা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার উদ্দ্যেশ্যে এই সভার আয়োজন করা হয়।
সারা বছরব্যাপী নানারকমের জনহিতকর কর্মসূচি কাছাড় জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ চালিয়ে আসছে। জেলার প্রত্যেক আশাকর্মী, এএনএম, সার্ভেইলেন্স ইন্সপেক্টর, সিএইচও, ল্যাবটেক ও চিকিৎসক সহ সবাই মিলে বিভাগীয় প্রতিটি কর্মসূচির অগ্রগতিতে কাজ করছেন তার খতিয়ান তুলে ধরা হয় সভায়। যেহেতু এপ্রিল মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ সময়ে পুরো বিভাগ এই কাজে আরও বেশি মনোযোগী হয়ে কাজ করে থাকেন।
বক্তারা জানান, ম্যালেরিয়া এমন একটি রোগ যা এখনও প্রতি বছর বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্ষাকাল শুরু হলে ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য মশাবাহিত রোগ বা ভেক্টর বাহিত রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে এ সব রোগ ও প্রতিরোধের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে প্রচেষ্টা চালাতে উদ্বুদ্ধ করতে সরকার কর্তৃক অনেক মাসিক ও সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সরকারের এমন একটি প্রচেষ্টা হল "জাতীয় ম্যালেরিয়া বিরোধী মাস"। বিভাগীয় সার্ভেইলেন্স ইন্সপেক্টর প্রণব কুমার দে জানান, ম্যালেরিয়া রোগীদের অনুসন্ধান এবং এই রোগের বিস্তার রোধে সম্ভাব্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করার জন্য প্রতি বছর ১ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাতীয় ম্যালেরিয়া বিরোধী মাস পালন করা হয়। এই উদ্যোগের অধীনে, পুরো জুন মাসে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য সমস্ত শহর ও গ্রামাঞ্চলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি প্রচার অভিযান চালানো হয়। এ উপলক্ষে মশা নিধন, তাদের লার্ভা বৃদ্ধিতে বাধা দেওয়া এবং এই রোগের উপর নজরদারি করার মতো প্রচারাভিযানগুলি সংশ্লিষ্ট সরকারি ইউনিটগুলি দ্বারা পরিচালিত হয়৷
ম্যালেরিয়া বর্তমানে ভারতে তৃতীয় সর্বাধিক সাধারণ রোগ হিসাবে বিবেচিত হয়৷ ভারতে সারা বছর এই রোগ দেখা গেলেও বর্ষাকালে এর প্রকোপ বাড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মোট ম্যালেরিয়ার ৭৭ শতাংশ ভারতে শনাক্ত হয়েছে। ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, ভারতে প্রতি বছর প্রায় ২ মিলিয়ন ম্যালেরিয়ার ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে, এই রোগে প্রতি বছর প্রায় এক হাজার মৃত্যু ঘটে। দেশের বেশিরভাগ ম্যালেরিয়া মামলা ওড়িশা, ছত্তিশগড়, পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটক, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, অসম, গুজরাট এবং রাজস্থান রাজ্য থেকে আসে। কাছাড়ে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ জনেরও বেশি। আক্রান্তের বেশিরভাগ মিজোরামের অন্যান্য রাজ্যে ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে। ম্যালেরিয়ার বিস্তার কার্যকরভাবে বন্ধ করা গেলেও ব্যক্তিগত, সামাজিক ও সরকারি প্রচেষ্টার অভাব, সুযোগ-সুবিধার অভাব এবং আরও অনেক কারণে তা ঘটছে না।
ভারতের বেশিরভাগ গ্রামীণ/প্রত্যন্ত অঞ্চলে ম্যালেরিয়াকে একটি প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ভারত সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে ম্যালেরিয়া মুক্ত করার জন্য একটি রেজোলিউশন গ্রহণ করেছে এবং এই উদ্যোগের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রচারাভিযানের আয়োজন করেছে। এই প্রচারের অংশ হিসেবে জাতীয় অ্যান্টি-ম্যালেরিয়া মাসের অধীনে সরকারি ইউনিট এবং সরকারী ও বেসরকারি সংস্থাগুলি দ্বারা প্রতিটি রাজ্য, শহর এবং গ্রামে বিভিন্ন ধরণের সচেতনতা, পরিচ্ছন্নতা এবং পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি চালানো হয়।