
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক:অনুশীলন শেষে ইডেন গার্ডেন্স (Eden Gardens) থেকে বেরিয়ে আসছিলেন ভারতীয় টেস্ট দলের অধিনায়ক শুভমান গিল। এমন সময় তিনি পরিচিত একটি ডাক শুনতে পান—'শুভি'। পাঞ্জাব দলে খেলার সময় তাঁর সতীর্থরা তাঁকে এই নামেই ডাকতেন।
সামনে তাকিয়েই শুভমান গিল দেখলেন দুই পুরনো সতীর্থ—গীতাংশ খেরা এবং বিনয় চৌধুরী। মুহূর্তে শুভমান তাঁদের দু'জনকেই উষ্ণ আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরেন। তাঁদের হঠাৎ দেখে তিনি নিজেও খানিকটা বিস্মিত হন। জানা যায়, একসময় পাঞ্জাবের হয়ে শুভমানের সঙ্গে খেলা এই দুই ক্রিকেটার বর্তমানে ভবানীপুর ক্লাবের হয়ে স্থানীয় ক্রিকেটে খেলছেন।শুভমান দু’জনকে জিজ্ঞেস করেন, তাঁরা এখানে কী করছেন? গীতাংশ জানান, তিনি কলকাতায় ক্লাব ক্রিকেট খেলছেন।শুভমান জিজ্ঞেস করেন, কোন ক্লাব?উত্তরে তাঁরা বলেন, ভবানীপুর।
ইডেনে যে ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে, সেটা হয়তো ভারতীয় অধিনায়ক নিজেও ভাবতে পারেননি। মিনিট পাঁচেক তাঁদের সঙ্গে আড্ডা চলল। অতীতের অনেক কথাই তখন মনে পড়ে যাচ্ছিল। বেশ কিছু বছর আগে গীতাংশ-শুভমান একসঙ্গে রনজি খেলে গিয়েছেন বাংলার বিরুদ্ধে। সল্টলেকে যাদবপুর ক্যাম্পাসের মাঠে যে ম্যাচে খেলেছিলেন যুবরাজ সিংও। প্রচুর স্মৃতি। তাঁদের কাছে শোনা গেল ভারত অধিনায়কের অনেক অজানা গল্পও। শুভমানকে খুব বেশি দিন রনজি খেলতে হয়নি। কয়েক বছর খেলার পরই জাতীয় দলে সুযোগ চলে আসে। তবে পাঞ্জাব ক্রিকেট আগেই বুঝতে পেরেছিল, ভারতীয় ক্রিকেট নতুন এক তারকাকে পেতে চলেছে। আমাদের এখানে যেমন ক্লাব ক্রিকেট, পাঞ্জাবে ডিস্ট্রিক্ট লিগ খুব জনপ্রিয়। শুভমান যে ম্যাচেই খেলতেন সেঞ্চুরি, ডবল সেঞ্চুরি ছাড়া আর কিছুই করতেন না। শুভমান খেলতেন মোহালির হয়ে। অভিষেক শর্মা অমৃতসরের হয়ে। একবার দুটো টিমের ম্যাচ চলছিল। সেই ম্যাচে শুভমান একাই চারশো রান করেছিলেন। পাঞ্জাবের ক্রিকেটে একটা সময় এমন ছিল, যখন স্কোর জানতে চেয়ে কেউ ফোন করলে আগে জিজ্ঞেস করতেন, ‘শুভমান আজও নির্ঘাত সেঞ্চুরি করেছে তো?’ বড় রানের ব্যাপারটা শুভমানের মধ্যে ছোটো থেকেই চলে এসেছিল। জেলা স্তরে শুভমান কোনও ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছিলেন, এমনটা মনে করতে পারছিলেন না গীতাংশরাও।
ছোট থেকেই ব্যাটিং অসম্ভব প্রিয় গিলের। ভোর সাড়ে পাঁচটা-ছ’টায় মাঠে চলে যেতেন। অন্যেরা যখন ট্রেনিং করতেন, শুভমান তখন নেটে ব্যাটিং। ভারত অধিনায়কের বয়স তখন নয় কিংবা দশ। তখন থেকেই তিন বেলা ব্যাটিং একেবারে রুটিনে পরিণত করে নিয়েছিলেন। সকাল-দুপুর আর বিকেল। প্রত্যেক দিন দেড় থেকে দু’হাজার ডেলিভারি খেলতেন। যে রুটিন এখনও একইরকম আছে।
শোনা গেল, বাড়িতে থাকলে এখনও রোজ মোহালি স্টেডিয়ামে চলে যান শুভমান। তারপর সারাদিন ধরে ব্যাটিং-পর্ব চলে। প্রত্যেকটা শট নিয়ে গিল ভীষণ খুঁতখুঁতে। যতক্ষণ না পর্যন্ত, সেটা পারফেক্ট হয়, ততক্ষণ নেটে ব্যাটিং করেই যাবেন তিনি।
এ তো গেল ক্রিকেটার শুভমান। ব্যক্তি শুভমানও ঠিক আগের মতোই রয়েছেন। ভারত অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পরও এতটুকু বদলাননি। নিজের পুরনো সতীর্থ কিংবা বন্ধুদের ভুলে যাননি। না হলে ইডেন ছাড়ার সময় গীতাংশদের বলে যান, ‘তোমরা হোটেলে চলে এসো, আড্ডা দেব।’
