দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ প্রাক্-পুজো প্রদর্শনীতে ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের অংশ নেওয়ার কথা ছিল,কিন্তু তাদের উপস্থিতি ছাড়াই কলকাতার প্রাক্-পুজো প্রদর্শনীর সূচনা হল বুধবার। আগামী চার দিন এই প্রদর্শনী চলার পাশাপাশি, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর পর্যন্ত কিছু বাছাই করা মণ্ডপ পরিদর্শনের কথা রয়েছে। তবে তাতেও ইউনেস্কোর কোনও প্রতিনিধির উপস্থিতির নিশ্চয়তা নেই বলেই খবর।
উল্লেখ্য, ২০ বছর আগে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে সাংস্কৃতিক পরম্পরা রক্ষায় উদ্যোগী হয়েছিল ইউনেস্কো। সেই সূত্রেই গত ২০ বছরে বিভিন্ন দেশের আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে চিহ্নিত করেছে তারা। তারই অন্যতম কলকাতার দুর্গাপুজো। সেই বিশেষ উদ্যোগের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত বারের মতো এ বারও ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা কলকাতায় আসবেন বলে প্রচার করা হয়েছিল। প্রাক্-পুজো প্রদর্শনীতেও তাঁদের অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
কেন ইউনেস্কোর কোনও প্রতিনিধি এলেন না? উদ্যোক্তাদের তরফে এর স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। প্রসঙ্গত, কলকাতার পুজো নিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে আগ্রহী ছিলেন ভারতে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি এরিক ফল্ট। কিন্তু এখন তিনি আর ওই পদে নেই। যদিও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে শহরের হাতে গোনা কয়েকটি পুজোকে বেছে নিয়ে এ ভাবে প্রাক্-পুজো প্রদর্শনী করার ব্যাপারে পুজো কর্তাদের একাংশের তরফেই প্রশ্ন উঠছে। কলকাতা পুলিশের সমন্বয় বৈঠকেও পুজো কর্তারা বলেছেন, ‘‘ইউনেস্কোর নাম করে কী ভাবে কয়েকটি পুজোকে বেছে নেওয়া যায়? এতে কি কলকাতার পুজোর মধ্যে বিভেদ করা হচ্ছে না?’’
এই বিতর্কের মধ্যেই এ দিনের প্রাক্-পুজো প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয় টাউন হলে। সেখানে নেপাল, মঙ্গোলিয়া, সাইপ্রাস এবং ফিজির রাষ্ট্রদূতেরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে পৌঁছে দেখা যায়, শিল্প প্রদর্শনীর বেশ কিছু স্টল বসানো হয়েছে। মঞ্চে চলছে বাংলার লোকশিল্পের প্রদর্শনী। নেপালের রাষ্ট্রদূত শঙ্করপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘‘আমরা নেপালে নবদুর্গা পালন করি। বেশির ভাগ মানুষ ভগবতী মন্দিরে যান। কিন্তু ওখানে এ রকম এত মণ্ডপ তৈরি হয় না। বাংলার শিল্পীদের থেকে আমরাও এখন মণ্ডপ বানানো শিখছি।’’ সাইপ্রাসের রাষ্ট্রদূত এভাগরাস ভ্রায়নাইডস বলেন, ‘‘এখানকার শিল্পীদের হাতের কাজ দেখে আমি অভিভূত।’’
টাউন হল থেকে রাষ্ট্রদূতদের এর পরে নিয়ে যাওয়া হয় টালা প্রত্যয়ের মণ্ডপে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মেয়র তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, পুরসভার মেয়র পারিষদ তথা বিধায়ক দেবাশিস কুমার এবং বিশ্বের আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় দুর্গাপুজোকে ঠাঁই দেওয়ার প্রস্তাবের লেখক তপতী গুহঠাকুরতা-সহ বিশিষ্টেরা। এর পরে চারটি দলে ভাগ হয়ে শহরের বাছাই করা কয়েকটি পুজো পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হয় অতিথিদের।
ভারতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডিরেক্টর অ্যালিসন ব্যারেট বলেন, ‘‘‘ক্রিয়েটিভ ইকনমি’র জন্য এই উৎসবের চেয়ে ভাল কিছু হতে পারে না। ব্রিটিশ কাউন্সিল পর্যটন দফতরের সঙ্গে যৌথ গবেষণায় দেখেছে, বাংলার মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) তিন শতাংশ আসে দুর্গাপুজো থেকে। বিশ্বাস ও ভরসার এই উৎসবকে সযত্নে গোপন করে রাখা হয়েছিল এত দিন। কিন্তু আমি এ বার আর এই উৎসবকে গোপন রাখতে দেব না।’’ মেয়র ফিরহাদ বলেন, ‘‘টোম্যাটিনা উৎসবের মতো উৎসব ছেড়ে দেশ-বিদেশের মানুষ এ বার থেকে দুর্গাপুজো দেখতে আসবেন।’’
তবে শুধু স্বীকৃতি নয়, উৎসবের আন্তর্জাতিক মান যাতে রক্ষা করা যায় সে দিকেও নজর রাখতে হবে প্রশাসনকে।