দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ আসাম রাজ্যের গুয়াহাটির একটি পাহাড়ে অবস্থিত কামাখ্যা মন্দির। যা ৫১ টি সতীপীঠের মধ্যে অন্যতম একটি পীঠ। এখানে কামেশ্বরীর মায়ের পুজো হয়। কথিত আছে, এই মন্দির জাদুবিদ্যা, মোহিনীবিদ্যা, ডাকিনীবিদ্যা সহ একাধিক গুপ্তসাধনার পীঠস্থান এবং সেই তন্ত্রপীঠের বার্ষিক উদযাপন হয় অম্বুবাচীর উৎসবে। তবে এখানে মায়ের বিশেষ কোনো বিগ্রহ নেই। শুধু একটি পাথরের সরু গর্ত রয়েছে যা সবসময় ভূগর্ভস্থ জলে পূর্ণ থাকে।
কিন্তু অম্বুবাচী উৎসবে কি হয় ? অম্বুবাচী শব্দটি অম্বু এবং বাচী এই দুটি শব্দের সঙ্গে গঠিত যার অম্বু অর্থ হল জল এবং বাচী অর্থ হল বসন্ত। বছরের নির্দিষ্ট তিনদিন, মূলত আষাঢ় মাসেই পালিত হয় এই অম্বুবাচী ব্রত। শাস্ত্রমতে এই সময় দেবীর ঋতুকালিন অবস্থা। তাই এইসময় যে কোনও মাতৃমন্দির বন্ধ থাকে এই তিনদিন এবং ঢেকে দেওয়া হয় দেবীর মুখ। পঞ্জিকামতে বিশেষ সময় অম্বুবাচী শুরু হয় এবং তিনদিন পর নির্দিষ্ট সময় তা শেষ হয়।
প্রতি বছর জুন মাসে মা কামাখ্যার মন্দিরে এই সময় মেলা বসে। অম্বুবাচী উৎসবের সময় মা কামেশ্বরীর গর্ভগৃহের দরজা বন্ধ থাকে এবং দর্শনও নিষিদ্ধ এই সময়। কথিত আছে, অম্বুবাচীর সময় নাকি নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায় মন্দিরের দরজা। তিনদিন পর সেই দরজা খোলে।
এইসময় গর্ভগৃহে লাল তরল লক্ষ্য করা যায়। ভক্তরা সাদা কাপড় দিয়ে পুজো দেন অম্বুবাচীর আগে। ওই কাপড় রাখা থাকে কামাখ্যা মায়ের গর্ভগৃহের বিশেষ স্থানে। তিনদিন পর দেখা যায় সেখান থেকে আসা লাল তরলের জেরেই অমন হয়ে যায় সাদা কাপড়। স্থানীয়বাসিন্দাদের বিশ্বাস, অম্বুবাচীর পর কামাখ্যা মন্দির দর্শণ করলে বিশেষ মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। আর ওই লাল কাপড় কেউ যদি বাড়িতে রাখেন, তাহলে যাবতীয় দুর্ভোগ কেটে যায়।
শুধু তাই নয়, এ সময় ব্রহ্মপুত্র নদের জল তিন দিন লাল হয়ে যায়। আজ অবধি যার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি কেউ। করলেও তা নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। মনে করা হয়, দেবীর ঋতুকালের প্রভাবেই এই বিশেষ পরিবর্তন হয়।
এইসময় বাড়ির মহিলাদের ব্রত পালনের অনেক নিয়ম রয়েছে। পঞ্জিকা মতে, এই ব্রত অবশ্য পালন করতে হবে বিধবা ও ব্রাহ্মণদের। তবে সধবাদের জন্যও নিয়ম রয়েছে ।এইসময় মূলত পাকদ্রব্য খাওয়ায় নিষেধ থাকে। সেইসঙ্গে প্রকৃতি মায়ের বিশেষ যত্ন নেওয়ারও নিয়ম রয়েছে। কৃষকরা কোনওপ্রকার বীজ বপন বা মাটি খোঁড়ার কাজ এইসময় করেন না। ভক্তরা এই বিশ্বাসেই বছরের পর বছর ধরে অম্বুবাচী ব্রত পালন করে আসছেন । এই সময় প্রচুর ভক্তদের সমাগম হয়। প্রচন্ড ভিড় হয় মন্দির চত্বর। কামাখ্যা মন্দির চত্বর এই অম্বুবাচীর সময় বিশেষ উৎসবের আবহে সেজে ওঠে।