দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ- আধুনিকতার ছোঁয়ায় চাপা পড়ে গেছে বাংলার নানান প্রাচীন দুর্গাপুজোর ইতিহাস । তবুও হাওড়া জেলার শহরাঞ্চলে যে সমস্ত প্রাচীন বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোগুলো এখনও পর্যন্ত সেই প্রাচীন প্রথা মেনে ঐতিহ্যের সাথে চলে আসছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো শিবপুরের পাল বাড়ির দুর্গাপুজো । দেশে ব্রিটিশ শাসনেরও আগে থেকে শুরু হওয়া এই পুজো নির্দিষ্টভাবে কত বছরের পুরনো তা বলা সম্ভব না হলেও আনুমানিক প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে পাল বাড়ির বংশধরদের হাত ধরে চলে আসছে এই পুজো । বাড়ির তিন খিলানের প্রাচীন অপ্রশস্ত ঠাকুরদালানটিই তার প্রমাণ ।
প্রতিটি বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোর আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকলেও পালবাড়ির দুর্গাপুজো অন্যান্য বনেদি বাড়িগুলির থেকে অনেকটাই আলাদা ।শুক্লা তিথিতে মায়ের হয় বোধন। সপ্তমীতে কলাবউ বা নবপত্রিকা স্নান গঙ্গায় নয় বাড়িতেই হয়। এই পুজোতে এখনও চালু রয়েছে পশুবলি! মায়ের প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর অর্থাৎ সপ্তমীর দিনেই হয় পাঁঠা বলি! তবে অষ্টমীর পুজোতে বলি দেওয়া হয় না। পরিবারের ৩০-৪০ জন মহিলাকে নিয়ে ধুনোপোড়ানো হয়। তার পরই সন্ধিপুজো। সেই সময় আরও একটি পাঁঠাবলি রীতি আছে। নবমীর দিন সকালে বাড়ির ভোগ হয়। সেই সময় আরও একটি পাঁঠাবলি হয়। তার পর ৫টি ফলের বলি। শেষে একটি মহিষ বলি! হ্যাঁ, মহিষ বলি এখনও চালু হাওড়ার পাল বাড়িতে। বলি যাঁরা দেন তাঁরাই দেহটি নিয়ে যান। মহিষের মাথা নিয়ে যাওয়া হয় গঙ্গায়।
তবে পুজোর শুরুর বছরগুলিতে মোষ বলির প্রথা ছিল না। কথিত আছে, বহুদিন আগে শিবপুরের রায়চৌধুরি পরিবারে দুর্গাপুজো হত। এই পালবাড়ির দেবী ‘অভয়া’র বোন ‘মায়া’কে দুর্গারূপে পুজো করা হয়। সেই রায়চৌধুরি বাড়িতে মোষ বলির প্রথা ছিল। একবার নাকি সেখান থেকেই একটি মোষ হাঁড়ি কাঠে মাথা দিয়ে শিবপুরের পাল বাড়িতে চলে আসে। সেই থেকেই পাল বাড়িতে শুরু মহিষ বলি।
নবমীর পুজোর পর মায়ের হোম দক্ষিণান্তর হয়। তার পরই শুরু বিসর্জনের প্রস্তুতি। বিজয়া দশমীর দিন বাড়ির মহিলারা সিঁদুর খেলেন।
হাওড়ার অন্যতম প্রাচীন এই পুজো শুরু করেন সর্বেশ্বর পাল। ধুমধাম করে পুজো হত। পরে সর্বেশ্বরবাবু পুজোর দায়ভার দেন বটকৃষ্ণ পালকে। সেই থেকে তিনি ও তাঁর বংশধরেরা পুজো করে আসছেন। এক সময়কার সেরা এই পুজো এখন কিছুটা জৌলুস হারিয়েছে। পরিবারের তরফ থেকে একটি ট্রাস্ট তৈরি করা হয়েছে। সেই তহবিলে জমানো টাকা থেকেই পুজোর খরচ হয়।