
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যপাল কোনও বিল অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখতে পারেন না—এমনটাই স্পষ্ট জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। আদালত বলেছে, রাজ্যপালকে হয় বিলটিতে সম্মতি দিতে হবে, নয়তো তা ফের বিধানসভায় পাঠাতে হবে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ আরও জানিয়েছে, রাজ্যপাল কোনও বিল আটকে রাখলে তা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। তবে একই সঙ্গে আদালত এ-ও জানিয়েছে যে বিল পাশের জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয়।
গত ১২ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেয়, আইনসভায় পাশ করা কোনও বিল রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি কেউই অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখতে পারেন না। ওই বিল নিয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের। কিন্তু প্রশ্ন উঠছিল, সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতিকে এভাবে ‘নির্দেশ’ দিতে পারে কি? সুপ্রিম কোর্ট পালটা যুক্তিতে বলে, সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শীর্ষ আদালত ‘সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে’ আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে বিশেষ রায় দিতেই পারে। কিন্তু শীর্ষ আদালতের সেই রায়ে আপত্তি জানান খোদ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। সংবিধানের ১৪৩ ধারা প্রদত্ত বিশেষ অধিকার বলে শীর্ষ আদালতের ওই রায় নিয়ে ১৪টি প্রশ্ন তুলে দেন তিনি। যার ফলে ওই রায় পর্যালোচনার জন্য পাঁচ সদস্যের প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স বেঞ্চ তৈরি হয়। প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের নেতৃত্বের পাঁচ সদস্যের ওই বেঞ্চ জানিয়ে দিল, বিলে সম্মতি না দিলে সেই বিল বিধানসভায় ফেরত পাঠাতে হবে। কোনওভাবেই বিল পাশের পথে বাধা হতে পারেন না রাজ্যপাল। প্রধান বিচারপতি ছাড়া ওই বেঞ্চে রয়েছেন, বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি পিএস নরসিমা এবং বিচারপতি এএস চন্দরকর। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, রাজ্যপাল যারা সাংবিধানিক পদে রয়েছেন, তাঁদের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে।
প্রধান বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ বলছেন, একটা সিস্টেমে দু’জন চালকের আসনে থাকতে পারেন না। এক্ষেত্রে চালকের আসনে একমাত্র নির্বাচিত সরকার থাকতে পারেন। রাজ্যপাল নন। সাংবিধানিক বেঞ্চের সাফ কথা, “বিল আটকে বসে থাকার অধিকার নেই রাজ্যপালের। তিনি সম্মতি দিতে পারেন, বিধানসভায় বিল ফেরত দিতে পারেন বা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন।” তাঁর আরও পর্যবেক্ষণ, সুপ্রিম কোর্ট বা বিচারব্যবস্থা রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের জন্য কোনও সময়সীমা নির্ধারণ করে দিতে পারে না—তা হলে তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে। তবে একই সঙ্গে আদালত স্পষ্ট করেছে, যদি রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি কোনও বিলের বিষয়ে অনির্দিষ্টকাল সময় নেন, তাহলে বিচারব্যবস্থার হস্তক্ষেপ করা ছাড়া উপায় থাকে না।
