
থিম্পু/নয়াদিল্লি: দু'দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভুটানে থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লি বিস্ফোরণের (Delhi Blast) ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশে এক কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, এই ভয়াবহ ঘটনার নেপথ্যে থাকা কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার সকালে দু’দিনের সফরে ভুটানে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবেশী দেশে গিয়েও ভারতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিকতম ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। সে দেশের রাজধানী থিম্পুর এক অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকে মোদী বলেন, ‘‘আজ আমি খুব ভারাক্রান্ত মনে এখানে এসেছি। কাল সন্ধ্যায় দিল্লির ভয়াবহ ঘটনা আমাদের সকলকে ব্যথিত করেছে। কাল সারারাত ধরে আমি সমস্ত কেন্দ্রীয় এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলাম। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যগুলি নিয়ে আলোচনা চলছিল। আমাদের তদন্ত সংস্থাগুলি এই ষড়যন্ত্রের শিকড় পর্যন্ত যাবে। যারা যারা এই ষড়যন্ত্রের জন্য দায়ী, তাদের সকলকে বিচারের আওতায় আনা হবে। একজনকেও ছেড়ে দেওয়া হবে না।’’
পাশাপাশি, নিহতদের পরিজনদের প্রতি আরও একবার সমবেদনা জানিয়েছেন মোদী। জানিয়েছেন, এই দুঃসময়ে গোটা দেশ তাঁদের সঙ্গে রয়েছে। উল্লেখ্য, মোদীর বক্তৃতার ঠিক আগেই ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহও একই সুরে জানিয়ে দিয়েছিলেন, দিল্লির লালকেল্লার সামনে বিস্ফোরণে ১২ মৃত্যুর ঘটনায় জড়়িতদের কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। রাজনাথ বলেন, ‘‘আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।’’ বিস্ফোরণের নেপথ্যে কী কারণ, তা নিয়ে এখনও সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্তারিত তদন্তের পরেই এ বিষয়ে আলোকপাত করা হবে। তবে পর পর দুই নেতার বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, আপাতত নাশকতার তত্ত্বেই সিলমোহর দিতে চাইছে নয়াদিল্লি।
সোমবার সন্ধ্যায় লালকেল্লার সামনে সিগন্যালে দাঁড়ানো একটি হুন্ডাই আই২০ গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে এখনও পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আহত অন্তত ২০ জন। তার মধ্যে বেশ কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিহার ভোটের মাঝেই দেশের রাজধানীতে এমন বিস্ফোরণে নড়েচড়ে বসেছে গোটা দেশ। পুলিশের পাশাপাশি এনআইএ, এনএসজি-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় এজেন্সিও ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ওই গাড়ির মালিক মহম্মদ সলমনকে সোমবার রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে আরও চার জনকে। যদিও তাঁদের নাম-পরিচয় এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। তাঁরা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়।
ভুটানের চতুর্থ রাজার ৭০তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মঙ্গলবার ভুটানে গিয়েছেন মোদী। এ ছাড়া, দু’দিনে আরও নানা কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। সকালে পারো বিমানবন্দরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে মোদীকে স্বাগত জানান। সমাজমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে টোবগে এ-ও লেখেন, ‘‘সমগ্র জাতির সঙ্গে আমিও আমার দাদা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ভুটানে স্বাগত জানাচ্ছি।’’ সফরকালে ভুটানের বর্তমান রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক, চতুর্থ রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুক এবং প্রধানমন্ত্রী টোবগের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসার কথা রয়েছে মোদীর। ভুটানের রাজার সঙ্গে ভারত-ভুটান যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ১০২০ মেগাওয়াট পুনাতসাংচু-২ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধনও করবেন তিনি। দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে এই আলোচনাগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। নতুন এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন ভারত-ভুটান শক্তি সহযোগিতার ক্ষেত্রেও নতুন অধ্যায় খুলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। সফরের আগে এক্স-এ মোদী নিজেও লিখেছেন, ‘‘দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার বিশেষ বন্ধনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই এই সফর।’’ বিদেশ মন্ত্রকও জানিয়েছে, এই সফর ভুটান-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন প্রাণশক্তি যোগ করবে।
