
কলকাতা, ২৩ ডিসেম্বর : রাজনীতি, খেলা, সিনেমা সব মিলিয়ে ২০২৫ ছিল ঘটনাবহুল এক বছর। বছরের শেষ লগ্নে দাঁড়িয়ে ফিরে দেখা ২০২৫-এর সেই সব মুহূর্ত, যা খবরের শিরোনামে এসেছে। দেশজুড়ে সেইসব সাড়া জাগানো কিছু ঘটনাবলী:
পহেলগাম হামলা: ধর্ম জিজ্ঞেস করে করে হত্যা, হাহাকার, কান্নার রোল। ২০২৫ সালের ফিরে দেখার শুরুতেই উল্লেখ করতে হয় উপত্যকার বুকে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক অতীতের সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গি হামলার কথা। পহেলগামে পাক জঙ্গিদের হামলায় ২৬ নিরীহ নাগরিকের মৃত্যু ভারতের ইতিহাসে স্থায়ী ক্ষত তৈরি করে ফেলেছে।
অপারেশন সিঁদুর: পহেলগামের বদলা। পাকিস্তানে ঢুকে পাক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে ভারতীয় সেনা। তছনছ হয় পাকিস্তানের একাধিক বায়ুসেনা ঘাঁটি। ভারতীয় সেনার অভিযানে নিহত হয় ১০০ জনের বেশি জঙ্গি ও ৩৫-৪০ জন পাক সেনা। শেষ পর্যন্ত ইসলামাবাদের আর্জিতে সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয় নয়াদিল্লি।
দিল্লি বিস্ফোরণ: আরও এক জঙ্গি হামলা। এবার রাজধানী দিল্লিতে লালকেল্লার কাছে। একটি গাড়িতে করে বিস্ফোরক এনে রাজধানীর বুকে হামলা চালায় জঙ্গিরা। মৃত্যু হয় ৯ জনের। রাজধানীতে এত বড় বিস্ফোরণ দেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
মহাকুম্ভ মেলা: ১৪৪ বছর পরে প্রয়াগরাজে আয়োজিত হল মহাকুম্ভ। তার মধ্যে মহাশিবরাত্রি উপলক্ষে পুণ্যার্থীদের বাড়তি আগ্রহ তৈরি হয়। উত্তর প্রদেশ সরকারের দাবি, এবারের মহাকুম্ভে এক কোটিরও বেশি মানুষ পুণ্যস্নান করেছেন।
মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ: মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৫-এ দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে ভারতীয় দল। ফাইনালে জয় তুলে নিয়ে ইতিহাস গড়ে তারা প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়, যা ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের জন্য এক স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকে।
আরসিবি-র আইপিএল ট্রফি: ১৭ বছরের খরা কাটিয়ে ১৮তম এডিশনে এসে আইপিএল ২০২৫-এ প্রথম ট্রফি জিতল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। ফাইনাল ম্যাচ ছিল পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে। ২০২৫-এর আগে একবারও খেতাব জেতেনি আরসিবি। নতুন দল তৈরি হয়েছে, অনেক তারকা ক্রিকেটার এসেছেন-গিয়েছেন, কোচ ছাঁটাই হয়েছে, নতুন হাই প্রোফাইল কোচ গদিতে বসেছেন। কিন্তু আইপিএলে আরসিবির মন্দভাগ্য কিছুতেই ঘোচেনি! ২০২৫-ই ছিল আরসিবির ইতিহাসে মোড় ঘোরানো বছর।
বেঙ্গালুরুতে আইপিএল বিজয়োৎসবে পদপিষ্ট: ১৮-তম বছরে এ বছর আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। কিন্তু সেই সাফল্যের বিজয়োৎসব পরিণত হয় বিষাদের মঞ্চে। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১১ জনের। আহত হন ৪৭ জন। যার অবধারিত ফল হিসাবে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
কারুরে নেতা-অভিনেতা বিজয়ের সভায় পদপিষ্ট: তামিলনাড়ুর কারুরে নেতা তথা অভিনেতা বিজয়ের টিভিকে দলের রাজনৈতিক জনসভায় মর্মান্তিক পদপিষ্টের ঘটনায় প্রাণ হারান অন্তত ৪১ জন, আহত হন ১০০ জনেরও বেশি। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বিজয়ের জনসভায় প্রাথমিকভাবে ৩০ হাজার সমাগমের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাজির হন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। উদ্যোক্তারা এত মানুষের উপস্থিতি আঁচ করতে পারেননি। বিজয় মঞ্চে উঠতেই ভিড় আরও বেড়ে যায় এবং অস্থিরতা শুরু হয়। ৫০০ পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকলেও দুর্ঘটনা আটকানো সম্ভব হয়নি।
আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা: চলতি বছরের সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আহমেদাবাদে বিমান ভেঙে পড়া। আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং বিমান আকাশে ওড়ার কয়েক সেকেন্ড পর ভেঙে পড়ে একটি মেডিক্যাল কলেজের উপর। দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যু হয় ২৬০ জনের। ঘটনার তদন্তে এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর প্রাথমিক রিপোর্টে দাবি করা হয়, আহমেদাবাদ দুর্ঘটনার আগের মুহূর্তে বিমানটি যখন উপরে ওঠার জন্য গতি পাচ্ছে, তখনই দু’টি ইঞ্জিনের জ্বালানি ‘কাটঅফ’ মোডে চলে যায়। ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
ইন্ডিগো বিমান বিভ্রাট: বিমান বিপর্যয় আরও হয়েছে। কেন্দ্রের নয়া নীতি মানতে গিয়ে কার্যত অচল হয়ে পড়ে দেশের বৃহত্তম ডোমেস্টিক পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ইন্ডিগো। পাঁচ দিনে বাতিল করে দিতে হয় অসংখ্য বিমান। ভোগান্তির শিকার হন বহু যাত্রী। যা রীতিমতো বিভীষিকার শামিল। শাস্তিস্বরূপ কেন্দ্র ইন্ডিগোকে বড় অঙ্কের জরিমানা করে। তাঁদের পরিষেবা আংশিকভাবে বন্ধ করে দেয়। চলতি বছর একাধিক প্রযুক্তিগত সমস্যা ও বিমান দেরির কারণে বারবার শিরোনামে আসে ইন্ডিগো। একই সঙ্গে নতুন রুট ও বিমানের ঘোষণা করে সংস্থাটি জানায়, সমস্যা কাটিয়ে তারা পরিষেবার মান উন্নত করার চেষ্টা করছে।
ওয়াকফ আইন: এ বছর পুরনো ওয়াকফ আইন বদলে নতুন করে ওয়াকফ আইন পাশ করায় কেন্দ্র। যাতে স্পষ্ট বলা হয়, সব ওয়াকফ আইনের হিসাব দিতে হবে ওয়াকফ বোর্ডকে। যে কোনও সম্পত্তিতে ওয়াকফ বোর্ডের একাধিপত্য ছিল, সেটা আর থাকবে না। কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ বোর্ডের কিনা ঠিক করার অধিকার থাকবে আদালতের।
পথকুকুর নিয়ে আদালতের রায়: রাজপথ থেকে সরাতে হবে সব পথকুকুর। চাঞ্চল্যকর রায় দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। যার জেরে রাজপথে নেমে আন্দোলন শুরু করেন পশুপ্রেমীরা। পরে সেই রায় সামান্য বদল করে সুপ্রিম কোর্ট। এবার শীর্ষ আদালত জানায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, খেলার মাঠের মতো জায়গাগুলি একেবারে পথকুকুরমুক্ত করতে হবে। ডগ শেল্টারে পাঠিয়ে দিতে হবে পথকুকুরগুলিকে। সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যে এলাকা থেকে পথকুকুরদের শেল্টারে পাঠানো হবে, ওই এলাকায় আর ফেরানো যাবে না।
এসআইআর: ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন। বৈধ ভোটার শনাক্তকরণ এবং অবৈধ ভোটার দূরীকরণের উদ্দেশ্যে দু'দশকের বেশি সময় পর এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। যা নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক হয়েছে, মামলা হয়েছে, এমনকী পথে নেমে আন্দোলনও হয়েছে। যদিও শেষমেশ বিহারের এসআইআর প্রক্রিয়া শেষ করেছে কমিশন। বাংলা-সহ আরও ১২ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এই প্রক্রিয়া চলছে।
আরআরআর অস্কার: এস এস রাজামৌলির ‘আরআরআর’ ছবিটি অস্কারে বড় সাফল্য পায়। ভারতীয় সিনেমা বিশ্বমঞ্চে নতুন করে স্বীকৃতি পায় এই ছবির হাত ধরে। ‘নাটু নাটু’-র পর এটি হয়ে ওঠে দেশের গর্বের মুহূর্ত।
মহাকাশ গবেষণায় সাফল্য: ২০২৫ সালে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো একাধিক সফল মহাকাশ মিশনের মাধ্যমে বিশ্বে নিজের অবস্থান আরও মজবুত করে। নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও গভীর মহাকাশ গবেষণায় সাফল্য ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়।
ভারতের ওপর ট্রাম্প ট্যারিফ: রাশিয়ার থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাওয়ার অপরাধে ভারতের উপর দু'দফায় শুল্ক চাপায় আমেরিকা। প্রথম দফায় ২৫ শতাংশ, পরে আরও ২৫ শতাংশের শুল্ক বোঝা চাপান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে ভারতের উপর মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। মার্কিন শুল্কবাণের ভালো প্রভাব পড়ে দেশীয় বাজারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের পোশাক উৎপাদন ক্ষেত্রগুলি।
