দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ঠাকুরবাড়ির হেঁশেল মানেই নানারকম নিত্যনতুন পদ। মাছ, মাংস, নিরামিষ সব ধরনের রান্নাতেই থাকত নতুনত্বের ছোঁয়া। আবার সাবেকি রান্নাকে নতুন ধাঁচে ফেলে বিভিন্ন ধরনের রন্ধন কৌশল আবিষ্কার করার তোড়জোড় চলত মাঝে মাঝে। আর এই আবিষ্কারের পিছনে হাত ছিল দ্বারকানাথ ঠাকুরের। জানা যায় তাঁকে দেখেই ঠাকুরবাড়ির অন্যান্য সদস্যরা বিশেষত ছোটরা সাহস পেত নতুন নতুন কৌশলে রান্না করতে। সেটা একটু ভিন্ন মশলার ব্যবহার হোক বা ভিন্ন পদ্ধতি।
বাংলার নবজাগরণের অন্যতম দূত ছিলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর। ব্যবসা ও পেশার কারণে প্রায়ই তাঁকে দেশ বিদেশের নানান জায়গায় যেতে হত। বহু মানুষের সঙ্গে ছিল তাঁর ওঠাবসা। বিদেশিদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের রন্ধনপ্রণালী শিখে নিয়ে বাঙালি রান্নায় সেই রন্ধনপ্রণালী প্রয়োগ করে দেখতেন।
সেইসময় ঠাকুরবাড়িতে বহু বিলেতি অতিথি আসতেন এবং তাঁরা বাঙালি খাবার খেতে খুব ভালবাসলেও হাত দিয়ে মাছের কাঁটা বেছে খেতে পারত না। ফলে ঠাকুরবাড়িতে এমনভাবে বাঙালি খাবারদাবার রান্না করা হত যাতে শুধু বিদেশি অতিথিরাই নন, বাড়ির সবারই খেতে ভাল লাগে। সেরকমই একটা পদ হল 'মাছের পোটলি'। কাঁটাছাড়া মাছের এই পদ এত ভাল খেতে যে একবার খেলে বারবার খেতে মন চাইবে। ঠাকুরবাড়িতে বেশিরভাগ সময় শোল মাছ দিয়েই রান্নাটা হত তবে রুই মাছও ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপকরণ -
শোল মাছ/ রুই মাছ/ ভেটকি মাছ (২৫০-৩০০ গ্রাম)
আদা বাটা (১-২ টেবিল চামচ)
পেঁয়াজ বাটা (২-৩ টেবিল চামচ)
লংকা বাটা (১ চা চামচ)
পটল (৫০০ গ্রাম)
নুন (স্বাদমতো)
চিনি (স্বাদমতো)
হলুদ (পরিমাণমতো)
সাদা তেল (প্রয়োজনমতো)
ঘি (২-৩ টেবিল চামচ)
গরমমশলা গুঁড়ো (১/২ টেবিল চামচ)
ময়দা (৩-৪ টেবিল চামচ)
পদ্ধতি -
প্রথমে মাছটা ভালকরে ধুয়ে নিন। যে মাছই নিন না কেন পেটির পিস নিলে ভাল। এবার মাছে নুন হলুদ মাখিয়ে কড়াইতে পরিমাণমতো তেল গরম করে মাছগুলোকে হালকা করে ভেজে তুলে নিতে হবে। মনে রাখবেন বেশি কড়া যেন না ভাজা হয়ে যায় তাতে মাছের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাবে।
এবার ভাজা মাছগুলোকে একটু ঠান্ডা করে হাত দিয়ে কাঁটা ছাড়িয়ে নিয়ে মেখে নিতে হবে। পুর বানানোর জন্য কড়াইতে ঘি গরম করে তাতে আদাবাটা, লঙ্কাবাটা আর পেঁয়াজবাটা দিয়ে দিন। বাটা মশলার কাঁচা গন্ধ গেলে তাতে মাছের পুরটা দিয়ে দিন। এবার প্রয়োজনমতো নুন, সামান্য চিনি, গরমমশলা গুঁড়ো আর খুব অল্প পরিমাণে হলুদ দিয়ে ভালমতো কষিয়ে নাড়াচাড়া করে পুরটা একটা পাত্রে তুলে রাখুন।
এবার পটলগুলো ভাল করে ধুয়ে নিন। পটলের যেকোনও একটা দিকের মুখ কেটে নিয়ে চামচের মাধ্যমে ভিতর থেকে বীজ বের করে নিন। এভাবে সবকটা পটলের ভিতরটা খালি করে নিন। তারপর কড়াইতে অল্প তেল গরম করে নুন হলুদ দিয়ে হালকা হালকা করে পটলগুলো ভেজে তুলে নিন। এবার পটলের পেটে মাছের পুর ভরে টাইট করে মুখটা আটকে দিন যাতে পুর বেরিয়ে না আসে।
একটা আলাদা বাটিতে ময়দা, ঘি, সামান্য নুন দিয়ে ব্যাটার তৈরি করে নিন। পুর ভরা পটলগুলোকে ওই ব্যাটারে চুবিয়ে ছাঁকা তেলে ভেজে নিতে হবে। ব্যস তৈরি মাছের পোটলি। একদম গরম গরম খেতে হবে এই পদ। মাছের পোটলির উপর একটু বিটনুন, গোলমরিচ ছড়িয়ে শসা-পেঁয়াজ কুচি আর কাসুন্দি দিয়ে পরিবেশন করুন ঠাকুরবাড়ি স্পেশ্যাল মাছের পোটলি।