দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: বর্ষা এলেই সঙ্গে চলে আসে একগুচ্ছ সমস্যা। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা হল মশার উপদ্রব। বৃষ্টির জমা জল, ড্রেন বা রাস্তাঘাটে আটকে থাকা জলই হয়ে ওঠে মশার বংশবিস্তার করার আদর্শ জায়গা। ফলে এই সময় ঘরেও মশার সংখ্যা বেড়ে যায় চোখে পড়ার মতো। মশার কামড়ে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়ার মতো মারণ রোগের সম্ভাবনা তো রয়েছেই, তার উপরে বারে বারে কামড় খাওয়ার যন্ত্রণা তো আছেই। এক্ষেত্রে আমরা সাধারণত ব্যবহার করি মশা তাড়ানোর স্প্রে, কয়েল, রেপেলেন্ট বা নানা ধরণের কেমিক্যালযুক্ত পণ্য। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরণের রাসায়নিক পণ্য শরীরের জন্য একেবারেই নিরাপদ নয়। অতিরিক্ত ব্যবহারে হতে পারে হাঁপানি, ত্বকে র্যাশ, চোখে জ্বালা বা এমনকি ফুসফুসের সমস্যাও।
তবে সুখবর হল—এই মশার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে। পরিবেশবান্ধব এবং স্বাস্থ্যকর এই উপায়ের অন্যতম হলো বাড়িতে কিছু বিশেষ গাছ রাখা, যা প্রাকৃতিকভাবে মশা তাড়াতে সাহায্য করে।
• তুলসীঃ তুলসীর ওষধি গুণের কথা কে না জানে? তুলসী পাতায় রয়েছে ইউজেনল যা একটি সুগন্ধ যুক্ত যৌগ। এর গন্ধে পকামাকড় দূর হয়। বাড়িতে তুলসী গাছ থাকলে মশা, মাছির উপদ্রব কমে।
• নিমঃ নিম পাতায় রয়েছে আজাদিরাচটিন নামক একটি যৌগ। নিমের তেল প্রাকৃতিক ভাবেই কীতপতঙ্গ দূর করতে সক্ষম। এমনকী নিমের এই উপাদান পোকামাকড়ের বৃদ্ধি ও প্রজননকে প্রভাবিত করে। তাই বাড়িতে নিম গাছ থাকলে সহজেই দূর হবে মশা। কমবে পোকামাকড়।
• লেমনগ্রাসঃ বাড়িতে এই গাছ থাকলে আলাদা করে রুম স্প্রের প্রয়োজন পড়ে না। লেমনগ্রাস গাছ বা এর তেল উভয়ই মশা তাড়াতে ব্যবহার করা হয়। এতে থাকা সিট্রোনেলা এবং অন্যান্য যৌগ মশা তাড়াতে সাহায্য করে।
• গাঁদাঃ মশা তাড়াতে গাঁদা ফুলের গাছ বেশ কার্যকর। গাঁদা গাছের বিশেষ গন্ধ মশা, পিঁপড়ে, মাছি সহ বিভিন্ন পোকামাকড়কে দূর করে। গাঁদা ফুলের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যার জন্য কীটপতঙ্গ এই গাছের কাছ ঘেঁষতে পারে না।
• সিট্রোনেলাঃ মশা, মাছি বা পিঁপড়ে তাড়াতে সিট্রোনেলা গাছের কোনও বিকল্প নেই। অনেকেই ঘর মোছার জন্য সিট্রোনেলার তেল ব্যবহার করেন। এতে কীটপতঙ্গ দূর হয়। আবার বেশির ভাগ ফিনাইলেও এই ভেষজের ব্যবহার হয়ে থাকে।
• পুদিনাঃ পুদিনার তীব্র সুগন্ধ মশা তাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে পুদিনা পাতার তেল এবং এর নির্যাস মশা তাড়ানোর প্রাকৃতিক উৎস হিসেবে কাজ করে। আপনি চাইলে ঘরের আশেপাশে বা জানলার পাশে পুদিনা গাছ লাগাতে পারেন। অথবা পুদিনা তেল ব্যবহার করতে পারেন।
কীভাবে যত্ন নেবেন?
• এই গাছগুলো এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস আসে।
• সপ্তাহে অন্তত ২–৩ দিন গাছের পাতা ও টব পরিষ্কার করুন যাতে অন্য কীটপতঙ্গ না বাসা বাঁধে।
• প্রয়োজনে এই গাছের পাতা থেঁতো করে ঘরের কোণে রাখতে পারেন, যাতে গন্ধ আরও ছড়ায়।
শরীরের ক্ষতি না করেই মশার উপদ্রব কমাতে চাইলে রাসায়নিক নয়, ভরসা রাখুন প্রকৃতির উপর। প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরকে করুন নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর এবং মশামুক্ত। চেষ্টা করে দেখুন, পার্থক্য নিজেই টের পাবেন!