দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ- কথায় আছে, অহংকারই পতনের মূল। আর সেই বার্তা শুধু আজকের নয়, বার্তা আছে মহাভারতে। ভীম ছিল হনুমানের খুব প্ৰিয়। কিন্তু ভীম ছিল খুবই অহংকারী নিজের শক্তি নিয়ে। হনুমান ভাবলেন ভীমের এই অহংকার ওর পতন আনতে পারে। তাই তার শক্তিশালী অহংকার ভেঙে দেওয়ার ভাবনা ছিল হনুমানের মাথায়।
একদিন বনবাস কালে যখন অর্জুন দৈব অস্ত্রের সন্ধানে স্বর্গে অবস্থান করছেন, তখন একদিন ঈশান কোন থেকে একটি সহস্র পদ্ম বাতাসে ভাসতে ভাসতে দ্রৌপদীর হাতে এসে পরে। দ্রৌপদী এমন সুন্দর ফুল দেখে ভীমকে জানায় তিনি এমন অনেক পদ্ম যুধিষ্ঠিরকে উপহার দিতে চান। তাই সেই পদ্ম আরো এনে দেবার জন্য ভীমকে অনুরোধ করেন। বিনা আপত্তিতে ভীম সেই পদ্ম সংগ্রহের জন্য ঈশান কোণে এগিয়ে যেতে থাকেন। ভীমের প্রবল পদধ্বনিতে ভূমি কেঁপে ওঠে। গাছের পাখিরা ভয়ে আকাশে উড়ে যায়। হঠাৎ ভীম লক্ষ করে যে কিছু পাখির ডানা জলে ভেজা। তখন সে ভাবে ঐদিকে নিশ্চই সরোবর আছে, আর সেই সরোবরেই পাওয়া যাবে দ্রৌপদীর কাঙ্খিত পদ্ম। তখন সে সেই দিকেই এগোতে থাকে।
এই সুযোগেই অহংকার ভাঙার কথা ভাবেন হনুমান। এই ভেবেই হনুমান এক বৃদ্ধ জরাগ্রস্থ বানরের রূপ ধরে ভীমের পথে বসে থাকলেন। তার লেজটা রাস্তার উপর ছড়িয়ে দিলেন। ভীম সামনে এসে বললেন, ওহে বানর, তোমার লেজ সারাও আমি যাবো। বৃদ্ধ বানর বলে, লেজ সরাতে আমি পারবো না। ক্ষমতা থাকলে তুমি আমার লেজ সরিয়ে নাও। অহংকারী ভীম বলেন, তোমার লেজ আমি একটা আঙুল দিয়েই সরিয়ে দিতে পারি। এই বলেই ভীম একটা আঙুল দিয়ে লেজ সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। বানর বলেন, তাহলে পুরো হাত দিয়েও চেষ্টা করো। তাতেও ভীম পারলো না। বৃদ্ধ বানর বলেন, দুই হাত লাগিয়ে সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে আমার লেজ সরিয়ে নাও। কিন্তু সেই চেষ্টা করেও ভীম ব্যর্থ হলেন।
এবার ভীম বুঝতে পারলেন, এ কোনো সাধারণ বানর নয়, এ নিশ্চই রামভক্ত হনুমান। তিনি করজোড়ে তাঁর স্বরূপ জানতে চাইলে, হনুমান নিজের রূপ ধারণ করে বললেন, প্রবল শক্তিশালী হিসাবে তোমার এতো অহংকার একদিন তোমার পতনের কারণ হবে - যদিনা তুমি মন থেকে অহংকার দূর করো। তখন ভীম করজোড়ে হনুমানের কাছে বসে বললেন, আজ থেকে আমি আমার সমস্ত অহংকার তোমার পায়ে অর্পণ করে আমার মনকে অহংকার মুক্ত করলাম। তখন হনুমান হাসতে হাসতে ভীমকে সহস্র পদ্মের সরোবর দেখিয়ে দিলেন।