kolkata

2 weeks ago

Tributes to Prafulla Chaki:প্রফুল্ল চাকীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি, যথোচিত মর্যাদায় পালিত বীর বিপ্লবীর প্রয়াণ দিবস

Tributes to Prafulla Chaki
Tributes to Prafulla Chaki

 

কলকাতা, ৩ মে : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবিভক্ত বাংলার অগ্নিযুগের প্রথম আত্মবলিদানকারী বীর বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী। প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করলো সংস্কার ভারতী ও ভারতীয় সংগ্রহালয়, কলকাতা। ২ মে আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী সভাগৃহে বীর বিপ্লবীর প্রয়াণদিবসে তাঁর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবর্গ। অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ বীর বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র বাংলার বুকে প্রথম প্রদর্শিত হলো।

অনুষ্ঠানের শুরুতে :" প্রফুল্ল চাকী- হুতাত্মা বাঙালি বীর" শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিপ্লবীর পৌত্র সুব্রত চাকি। আলোচকরূপে উপস্থিত ছিলেন ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের শিক্ষা আধিকারিক ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য, সমাজসেবী জয়ন্ত পাল, তথ্য চিত্র নির্মাতা সুমিত ঘোষ প্রমুখ।

দেশাত্মবোধক গান কবিতার মাধ্যমে বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে সংস্কার ভারতীর শিল্পীরা। পরিচালনায় পারমিতা নিয়োগী । কবিতা পাঠ করেন মল্লিকা রায়। আলোচনা চক্রের শুরুতে সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত তার স্বাগত ভাষনে বলেন, "সংস্কার ভারতী চায় প্রফুল্ল চাকীর আত্মাহুতি দেওয়া মোকামা স্টেশনের নামকরণ প্রফুল্ল চাকীর নামে হোক। তার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে সংস্কার ভারতী।

অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল তথ্য চিত্র প্রদর্শন। "বীর বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী" শীর্ষক তথ্যচিত্রটি প্রথম প্রদর্শন হল। ৩৩ মিনিটের তথ্য চিত্রটি নির্মাণ করেন সুমিত ঘোষ। সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত বলেন, "সংস্কার ভারতী সঙ্গীত নৃত্য নাটকের মত ফিল্ম নিয়েও তাদের কাজের ধারা অব্যাহত রেখেছে।তারই অঙ্গ স্বরূপ এই তথ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়। আগামীদিনে ফিল্ম ফেসটিভ্যাল এর উদ্যোগ নেওয়া হবে।"

প্রফুল্ল চাকী ১০ই ডিসেম্বর ১৮৮৮ সালে (বাংলা ২৭শে অগ্রহায়ণ ১২৯৫ সাল) বর্তমান বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার অধীন বিহার গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রাজনারায়ণ চাকী ও মাতা স্বর্ণময়ী দেবী। তিন দাদা প্রতাপ চাকী, জগৎ চাকী ও চারু চাকী এবং দুই দিদি কুসুম কামিনী ও সৌদামিনী। প্রফুল্ল চাকী ছিলেন সকলের ছোট। 'চাকী' কিন্তু উপাধি, প্রকৃত পদবী হলো 'বোস'। রাজনারায়ণ চাকী বগুড়ার নবার এস্টেটের কর্মচারী ছিলেন। প্রফুল্ল-র বাল্য নাম ছিল "ফুলো"। মাত্র ২ বৎসর বয়সে পিতা মারা যাওয়ার পরে বড়দা প্রতাপ চাকী-ই ছিলেন অভিভাবক। ১৯০২ সালে ১৪ বছর বয়সে তিনি রংপুর জেলা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। বাগুড়ার নামুজা জ্ঞানদা প্রসাদ মধ্য ইংরাজী বিদ্যালয়ে প্রথম শিক্ষাজীবন শুরু করেন এবং মাইনর পাশের পর ১৯০২- ১৯০৫ সাল পর্যন্ত রংপুর জেলা স্কুল এবং রংপুর জাতীয় স্কুলে ১৯০৫ সালের নভেম্বর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। কিন্তু অনেক ছাত্রের সঙ্গে মিলিতভাবে একটি স্বদেশী সভায় যোগদানের শাস্তি হিসাবে স্কুলে জরিমানা করায় তার প্রতিবাদে ২০০ জন ছাত্রসহ বিদেশী সরকারের স্কুল ছেড়ে রংপুর জাতীয় স্কুলে ভর্তি হন নবম শ্রেণীতে ১৯০৫ সালে। ছোটবেলায় নিজের এলাকায় তিনি ক্লাব, পাঠাগার, ব্যায়ামাগার এবং লাঠি ও ছোরা খেলার জন্য আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় থেকেই তিনি একটি গুপ্ত বৈপ্লবিক সমিতির সদস্য হন। ভারতবর্ষ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত বেশ কিছুকাল জামা ও জুতো পরা থেকে বিরত থাকেন। প্রফুল্ল চাকী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার দায়িত্ব নেবার পূর্বে ১৯০৬ সালে তদানীন্তন পূর্ববঙ্গের ছোট লাট স্যার ফুলারকে হত্যার চেষ্টা এবং ১৯০৭ সালে দু'বার বাংলাদেশের ছোটলাট ফ্রেজার-কে হত্যার চেষ্টা করেন কিন্তু সফল হননি। এরপর ১৯০৮ সালের ২৪শে এপ্রিল ক্ষুদিরাম বসুর সঙ্গে ৩টি পিস্তল ও বোমা নিয়ে কলকাতা থেকে মজঃফরপুর যাত্রা করেন। ১৯০৮ সালের ৩০শে এপ্রিল বৃহস্পতিবার প্রফুল্ল চাকী এবং ক্ষুদিরাম বসু ম্যাজিষ্টেট কিংসফোর্ড-এর ফিটন গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়েন কিন্তু কিংসফোর্ড সেই গাড়িতে ছিলেন না। মৃত্যু দুই মহিলা মিসেস ও মিস কেনেডি। ১৯০৮ সালের ২রা মে সকালবেলা, এক পুলিশ কর্মী নন্দলাল ব্যানার্জী -র চতুরতায় বিহারের মোকামাঘাট ষ্টেশনে প্রফুল্ল চাকী ধরা পড়েন কিন্তু পুলিশের কাছে ধরা না দিয়ে সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ বিহারের মোকামাঘাট ষ্টেশনের প্ল্যাটফর্মে নিজের রিভালবারের গুলিতে আত্মাহুতি দিয়ে দেশমাতৃকার কোলে লুটিয়ে পড়েন। তখন হুতাত্মা প্রফুল্ল চাকীর বয়স মাত্র ২০ বছর। অপর বিপ্লবী বীর ক্ষুদিরাম বসু পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এবং তাঁর ফাঁসি হয় ১১ আগষ্ট ১৯০৮ সালে।

এদিনের আলোচনায় উঠে আসে - "বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকীর দেহ থেকে মস্তক ছিন্ন করে ব্রিটিশ পুলিশ কলকাতায় নিয়ে এসেছিল। পরবর্তীকালে প্রফুল্ল চাকীর মাথাটিকে ১৩ নম্বর লর্ড সিনহা রোড এর গোয়েন্দা দপ্তরের প্রাঙ্গণে সমাধিস্থ করা হয়েছিল বলে জানা যায়।" এদিনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের অন্যতম সহ সভাপতি সুভাষ ভট্টাচার্য।


You might also like!