কলকাতা, ৮ ডিসেম্বর : চিকিৎসা করাতে এসে ভর্তির প্রক্রিয়াতেই যদি সময় চলে যায় তাহলে রোগীর কী হবে? বৃহস্পতিবার এসএসকেএম হাসপাতালে একাধিক পরিষেবার উদ্বোধন করতে গিয়ে বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
চিকিৎসাব্যবস্থায় ক্ষোভ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা অনেক খরচ সাপেক্ষ তাই মানুষ সরকারি হাসপাতালে আসেন। তাই তাদের দিকটা দেখতে হবে।“ ট্রমা কেয়ারের ব্যবস্থায় তিনি যে আদপেই খুশি নন, সেটা নিয়েও রাখঢাক করেননি মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, 'আমার খারাপ লাগল। যদি প্রসেসটা ভুল হয়ে থাকে, তা হলে ঠিক করতে হবে। ইতিমধ্যে বলেছি। সকালে ভর্তি হয়েছে, এখনও প্রসেস চলছে। কিন্তু প্রসেসটা পরে হবে, আগে তো রোগী চিকিৎসা পাবে। ট্রমা কেয়ারে গিয়ে দেখে এলাম, খারাপ লাগল। যদি কাজের পদ্ধতিতে ভুল তাকে তাহলে আমাদের তা ঠিক করতে হবে। একজন রোগী সকালে ভর্তি হয়েছে, এখনও প্রসেস চলছে। প্রসেস পরে হবে। আগে তো রোগী চিকিৎসা পাবে! সেই জন্যই তো আমাদের হাসপাতাল। অনেকে এমনভাব রক্ত নেয় যে গোটা হাত রক্তাক্ত করে দেয়। একবার এখানে আমি রক্ত দেওয়ার পর আমার হাতের একাংশ কালো হয়ে গিয়েছিল। তাই ভয়ে এখানে আর রক্ত পরীক্ষা করতে আসি না।“
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ট্রমা কেয়ার হাসপাতালটা অনেক কষ্ট করে করা হয়েছে। আপনারা জানেন, একটা ড্রাগ অ্যাডিকটেড ছেলে আজ উল্টোপাল্টা গাড়ি চালিয়ে ৭-৮ জনকে আহত করে ছেড়েছে। তাদের ৩ জন এখানে ভর্তি হয়েছে। ওদের দেখতে গিয়েছিলাম। ওদের ভালো যত্ন নেওয়া হয়েছে। তবে দু-একজনের সঙ্গে আমরা মনে হল, শুধুমাত্র লিউকো প্লাস্টার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটা ব্যান্ডেজ পর্যন্ত করা যায়নি।
দুপুরেও যদি ভর্তি হয়ে তাকে তাহলে প্রসেস চলছে চলবে! অ্যডমিশন হতেই নাকি সময় লাগে, কিন্তু ট্রমা সেন্টারে তা হওয়া উচিত নয়। ধরুন একজন গর্ভবতী মহিলা এল। প্রসেস করতেই যদি ৬ ঘণ্টা লাগে তাহলে তো রোগী মরেই যাবে! এগুলো তো ইমাজেন্সি কেস! পিজিটা হল সেন্টার অব একসেলেন্স।
এর পরই একের পর এক 'ত্রুটির' কথা বলতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিযোগ, স্যালাইন দিতে গিয়ে এমন ভাবে ফোঁটানো হয়েছে যে হাত দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে। এই প্রসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে মমতা বলেন, 'স্যালাইন কী ভাবে দিতে হয় এটা তো জানতে হবে।' স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে 'প্রসেস'-এর সময় নিয়েও বার্তা দেন তিনি। বললেন, 'ধরুন কোনও প্রসূতি এলেন। যদি তাঁর জন্য পরিষেবার ব্যবস্থা করতে ৬ ঘণ্টা সময় লেগে যায়, তা হলে তো উনি মারা যাবেন। এগুলি তো আপৎকালীন কেস।'
বৃহস্পতিবার এসএসকেএম এর পেডিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগের সংস্কারের পর তার নতুন করে খুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি এসএসকেএম-এ পূর্বভারতে প্রথম কোনও স্পোটর্স মেডিসিন বিভাগের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও বাঙুরে বেশকিছু সিটি স্ক্যান মেসিনের উদ্বোধন করা হয়। এর পাশাপাশি, একটি সাততল হোস্টেল ভবন ও দশতলা একটি ক্যান্সার হাব তৈরি করা হচ্ছে এসএসকেএম-এ। এখানে আধুনিক মানের ক্যান্সারের চিকিৎসা হবে।