শান্তিনিকেতন(বীরভূম), ২৯ জানুয়ারি : নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে জমি নিয়ে দড়ি টানাটানির নিরসণ চায় বিশ্বভারতী। রবিবার প্রেস বিবৃতি দিয়ে অধ্যাপক অমর্ত্য সেনকে হয় আইনি পথে কিংবা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে খোলামনে আলোচনার মাধ্যমে জমি সংক্রান্ত যাবতীয় জট কাটানোর আবেদন জানিয়েছে বিশ্বভারতী ।
এদিন বিশ্বভারতীর তরফে প্রকাশিত প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘বিশ্বভারতী তার জমি দখলের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে এবং রেকর্ড অনুয়ায়ী অধ্যাপক সেনকে পদক্ষেপ করতে আবেদন করা হচ্ছে। প্রফেসর অমর্ত্য সেন নিজের এবং বিশ্বভারতীর সুনাম রক্ষার জন্য যা করার দরকার তাই করবেন বলে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’
প্রেস বিবিৃতিতে আরও লেখা আছে, যে ‘এখন দু’টি বিকল্প পথ খোলা রয়েছে, প্রথমটি হল প্রফেসর সেন এই মহূর্তে যে ধারণা নিয়ে বসে রয়েছেন সেটি আইনের গণ্ডিতে আদালতে গিয়ে প্রমাণ করুন। অথবা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এবিষয়ে অবাধে এবং খোলামেলাভাবে সমাধানের জন্য যা করার দরকার সেটা করুন।’ বিশ্বভারতীর দাবি, ১৯৪৩ সালের চুক্তি অনুযায়ী, আশুতোষকে ১.২৫ একর জমি লিজ় দিয়েছিল বিশ্বভারতী। ১.৩৮ একর নয়। এই বিষয়টি আগের দুই চিঠিতেই অমর্ত্যকে জানানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ১৯৪৩ সালের সেই চুক্তি এবং ২০০৬ সালের কর্মসমিতির প্রস্তাব, কোথাও আশুতোষ বা অমর্ত্যকে বিশ্বভারতীর কোনও জমিরই মালিক হিসাবে ঘোষণা করা হয়নি। প্রেস বিবৃতিতেও কর্তৃপক্ষের দাবি, অমর্ত্যের ‘প্রতীচী’ বাড়ির প্রকৃত জমি ১.২৫ একর। ১৩ শতক জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন অর্থনীতিবিদ।
পাশাপাশি অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে জমি দখলের অভিযোগ কার্যত অস্বীকার করেছে বীরভূমের জেলা প্রশাসন। এ ব্যাপারে একটি সরকারি নথিও প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, শান্তিনিকেতনের ১.৩৮ একর জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ় দেওয়া হয়েছিল অমর্ত্যের বাবা আশুতোষ সেনকে।
প্রকাশ্যে আসা সরকারি নথির প্রেক্ষিতে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বলেছেন, ‘‘প্রশাসনের কাছে যে নথি রয়েছে, সেই অনুযায়ী অমর্ত্য সেনের পরিবারের নামে ১ একর ৩৮ শতক জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজে রয়েছে।’’ জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক সূত্রেরও দাবি, সেন পরিবারকে যে ১.২৫ একর জমিই লিজ় দেওয়া হয়েছিল, তার সপক্ষে কোনও ‘রেকর্ড’ নেই।তা নিয়ে তরজার মধ্যে এ বার প্রেস বিবৃতি দিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দাবি করলেন, অমর্ত্যের শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’ যে জমিতে তৈরি হয়েছে, তা বিশ্ববিদ্যালয়েরই।এব্যাপারে জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের যে পরচা অনুযায়ী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে, তা উনিশ শো তেতাল্লিশ সালের লিজের। দুই হাজার ছয় সালে তদানীন্তন বিশ্বভারতী উপাচার্য রজত কান্তি রায়কে হাভার্ড থেকে অধ্যাপক সেন চিঠি লেখেন। তারপর বিশ্বভারতীর অনুমতিতে সেন পরিবারের নামে এক একর পঁচিশ শতক জায়গার মিউটেশন করতে দেওয়া হয়। বাকি তেরো ডেসিম্যাল জায়গার কোনো মিউটেশন হয় নি। তাই ওই জায়গা ফেরত দিতে হবে।
রবিবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিধ্যালয়ের তরফে প্রকাশিত এই প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যে বিশ্বভারতীর ১১৩৪ একর জমি রয়েছে। যার মধ্যে ৭৭ একর জমি দখল করা হয়েছিল। গত চার বছরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে ১৫ একর জমি পুনরুদ্ধার করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশের পরেই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে বিশ্বভারতী অভিযানে নামে।বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, বেদখল হওয়া ৭৭ একর জমি ইতিমধ্যেই পুনরুদ্ধারে নেমেছে বিশ্বভারতী। সেই সূত্রেই চিঠি দেওয়া হয়েছে অমর্ত্যকে। শুধু তাই নয় চিঠিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বোল্ড অক্ষরে লিখেছে যে অমর্ত্য সেনের বাসভবন প্রতীচী যে জায়গায় অবস্থিত তার মালিক বিশ্বভারতী। বর্তমানে ওই জায়গার সংশ্লিষ্ট ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের নথিতে অমর্ত্য সেনের নামে নেই। তার পিতার নামে আছে। তাই ছেলের অধিকার নেই। চিঠিতে এমন হাস্যকর যুক্তি তুলে ধরছে বিশ্বভারতী।