দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃএবারের লোকসভা ভোটে সব বুথে ওয়েব কাস্টিংয়ের পাশাপাশি ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানোর কথা জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ধুমধাম করে সে কথা প্রচারও ঘাটতি রাখা হয়নি। এই ‘জুটি’-র উপর কমিশনের ভরসাও ছিল বিস্তর।
প্রথম দফায় উত্তরবঙ্গের একটি বুথে প্রিসাইডিং অফিসারের কিছু গতিবিধি কমিশনের নজরে এনেছিল এআই। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, ওই এআই-সংকেত পেয়ে তাঁরা দেখেন, ভোটারের কানে কিছু বলছেন সেই প্রিসাইডিং অফিসার। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, প্রিসাইডিং অফিসার এ কাজ করতেই পারেন না। সঙ্গে সঙ্গে সেই অফিসারকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অন্য আধিকারিককে প্রিসাইডিং অফিসার করা হয়। অপসারিত আধিকারিককে কারণ দর্শানোর নোটিস ধরানো হয়েছে। সিইও দফতর সূত্রের বক্তব্য, সংশ্লিষ্টের জবাব সন্তোষজনক বা যুক্তিসঙ্গত না হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ হতে পারে। ভিডিয়ো ফুটেজ এবং তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হলে সাসপেন্ডও করা হতে পারে তাঁকে।
কমিশনের এক কর্তার কথায়, ‘‘ভোটারকে প্রভাবিত করা অপরাধ। এমন ঘটনা নিশ্চিত ভাবে বাকিদের সতর্ক করবে।’’ তবে এআই-এর সক্রিয়তা কমিশন-কর্তাদের কপালে ভাঁজও ফেলছে। সূত্রের দাবি, সংশ্লিষ্ট ‘প্রোগ্রামিং’ হয়ে থাকে কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে। যেমন ক্যামেরার অবস্থান বদল হলে, বুথের মধ্যে ভিড় হলে অথবা নির্দিষ্ট সূচকের উপরে আওয়াজ থাকলে এআই সতর্ক করে। ‘কুইক রেসপন্স টিম’ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি না দেখা পর্যন্ত সেই ‘অ্যালার্ম’ বাজতেই থাকে। প্রথম দফার পরে কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ক্যামেরার অবস্থান নিয়ে কোনও সংকেত থাকছে না। কারণ, তা নির্দিষ্ট অবস্থানে অনড় ভাবে বসানো থাকে। রোদের হাত থেকে বাঁচতে এক জায়গায় অনেকে জড়ো হলেও সংকেত ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে যাচ্ছে। তাই খতিয়ে দেখতে হচ্ছে পরিস্থিতি।
এর পাশাপাশি এআই অপব্যবহার করে কয়েকটি সংগঠন এবং কিছু এআই ‘অপরাধী’ (সাইবার অপরাধের ভাষায় এআই গুনস) যে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির স্বার্থসিদ্ধিতেও মদত দেবে তাও ভাবেনি কমিশন। দিন কয়েক আগে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী দলের দুই পরিচিত প্রার্থীর নাম করে একটি বিতর্কিত অডিয়ো ক্লিপ বিভিন্ন সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি)। সেই ফোনালাপের বিতর্ক এখন বিবিধ ‘মিম’ হয়ে সমাজমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে। এমনই অন্তত ১৯টি ভিডিয়ো এবং অডিয়ো ক্লিপ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা পরস্পরের দিকে আঙুল তুলে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে।
এ সবই কি এআই-এর ফসল? উড়িয়ে দিচ্ছে না কমিশন। বরং কমিশনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘ভোটের মুখে এআই-এর সাহায্যে ওই অডিয়ো ক্লিপের মতোই বিবিধ বিতর্ক সমাজমাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে। সাধারণের মধ্যে বিবিধ প্রার্থী সম্পর্কে ভুল বার্তা ছড়ানোই যার উদ্দেশ্য।’’