ঢাকা, ৬ আগস্ট : শেখ হাসিনার পদত্যাগ, তারপরই দেশ-ত্যাগ। সেনাবাহিনীর হাতে বাংলাদেশের দায়িত্বভার। এরপর থেকেই উল্লসিত বাংলাদেশের শিক্ষার্থী, তথা যুবসমাজ। ঢাকা-সহ বাংলাদেশের সর্বত্র বিজয় উল্লাসে মেতেছে তথাকথিত এই যুবসমাজ। সবার মুখে একটাই কথা 'ফের স্বাধীন হল বাংলাদেশ'। আর এই উল্লাসের মধ্যেই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন, ভাঙচুর চলছে হিন্দু মন্দিরে, অভিযোগ এমনটাই। ভাঙচুর চালানো হচ্ছে দেব-দেবীর মূর্তিও। এখানেই শেষ নয়, হিন্দুদের বাড়ি-ঘর লুটপাট, মহিলাদের ওপর নির্যাতন চলছে উপর্যুপরি। এখন প্রশ্ন উঠছে, "মন্দির ভেঙে বিজয় উল্লাস। এটা আবার কেমন স্বাধীনতা!!"
কেউ ফেসবুকে কাঁদছেন, বলছেন বাঁচাও আমাদের। হিন্দুদের ওপর নির্মমভাবে চলছে অত্যাচার। বাংলাদেশের বরিশাল, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া-সর্বত্রই হিন্দুদের মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে, ভেঙে ফেলা হয়েছে হিন্দুদের মন্দির। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন মানুষজনকেও মারধর করা হয়েছে, কারণ সে হিন্দু। যেমন, বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার পাখিমারা শহীদ প্রফুল্ল মন ভৌমিক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রফুল্ল মন ভৌমিকের ছেলে মূল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়, তবুও 'হিন্দু হওয়ার অপরাধে' তাঁকে মারধর করা হয়।
সংরক্ষণ ইস্যুতে বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল এই জন-বিক্ষোভ। বারুদের গন্ধে দিন কাটছিল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা-সহ দেশের সর্বত্র। কিন্তু, এখন দেখা যাচ্ছে বিক্ষোভের নামে বাংলাদেশে আক্রান্ত হচ্ছেন হিন্দুরা। গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী তথা যুব সমাজের মুখে একটাই স্লোগান শোনা যাচ্ছিল, "সোনাবাহিনীর সরকার, এই মুহূর্তে দরকার।" শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরই সেনাবাহিনীর হাতেই এখন বাংলাদেশের দায়িত্ব। এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। হিন্দুদের ওপর নির্যাতন রুখতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এখনও কোনও সদর্থক ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।
এতো গেল, হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের কথা। বাংলাদেশে প্রায়ই নির্যাতনের শিকার হন হিন্দুরা। কিন্তু, এবার আরও একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশের তথাকথিত এই যুবসমাজ। আক্রান্ত হলেন স্বয়ং রাষ্ট্রপিতা শেখ মুজিবর রহমানও। আন্দোলনকারীরা বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবর রহমানের মূর্তিও ভেঙে ফেলেছে, কেউ জুতো, কেউ লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে মুজিবর রহমানের মূর্তিতে। নতুন করে যাঁরা স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে, তাদের মুখে এটাও বলতে শোনা যায়, "মার জুতো মার ওঁর মুখে।" এ কেমন স্বাধীনতা পেল বাংলাদেশ!