দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ইচ্ছে ছিল চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু, ছেলেকে সায়েন্সে পড়ানোর সাধ্য ছিল না বাবা মায়ের। তাই মাধ্যমিকের পর বাধ্য হয়ে আর্টসে পড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু, কলা বিভাগে পড়াশুনা করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় তাক লাগানো নম্বর নিয়ে এলেন বাঁকুড়ার বড়জোড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র নয়ন মণ্ডল। এবার উচ্চ মাধ্যমিকে নয়নের প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৮। প্রতিটি বিষয়ে ৯০ শতাংশের উপর নম্বর রয়েছে তাঁর।
ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন নয়ন। তাঁর বাবা গৌতম মণ্ডল খুচরো লটারি বিক্রি করে সংসার চালান। মা কাকলি মণ্ডল সাংসারিক কাজকর্মের পাশাপাশি বেলের মালা কেটে সামান্য রোজগার করেন। ফলে আর্থিক অনটনের কারণে ইচ্ছে থাকলেও উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে পারেননি নয়ন। কিন্তু, কলা বিভাগে পড়াশোনা করেও ভালো ফলাফল করা যায়, এই পড়ুয়াকে বরাবর এই উৎসাহ দিয়ে এসেছেন তাঁর শিক্ষকরা। নয়নও নতুন উদ্যমে পড়াশোনা শুরু করেন।
উচ্চ মাধ্যমিকের আগে দিন রাত এক করে পড়াশোনা করেছেন তিনি। নম্বরও এসেছে চোখ ধাঁধানো। এবার লক্ষ্য উচ্চ শিক্ষা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। কিন্তু, ছেলের পড়াশোনার খরচ কী ভাবে জোগাবেন? তা ভেবে ভেবেই অবাক হচ্ছেন বড়জোড়ার মণ্ডল দম্পতি। কৃতী ছাত্র নয়ন মণ্ডলের মা কাকলি মণ্ডল বলেন, 'আর্থিক অনটনের মধ্যেও ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। এখন যা পরিস্থিতি তাতে সরকারি , বেসরকারি সংস্থা বা কোনো সহৃদয় ব্যক্তির সাহায্য ছাড়া ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।'
মা-কে পাশে নিয়ে নয়ন মণ্ডল বলেন, 'বাবার লটারির টিকিট বিক্রির টাকায় আমাদের সংসার চলে। মা-ও বেলের মালা কেটে কিছুটা হলেও রোজগারের চেষ্টা করেন। আর্থিক সমস্যার কারণে সায়েন্স নিয়ে পড়তে পারিনি। এবার এবার নার্সিং নিয়ে পড়ার ইচ্ছে থাকলেও সেখানেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে টাকা। যদি কোনও সাহায্য পাই সেক্ষেত্রে এই স্বপ্ন পূরণ করব।’
এদিকে নয়নের চোখ ধাঁধানো ফলাফলে খুশি তাঁর বাবা-মা এবং প্রতিবেশীরাও। পাড়ার সকলের কথায়, ‘নয়নকে দেখে অনেকেই জীবনে শিখবেন যে কী ভাবে প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে জীবনে এগিয়ে যেতে হয়। ও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ালে আশেপাশের ছেলে মেয়েরাও শিখবে। তাঁদের মধ্যেও বড় হয়ে কিছু একটা করার ইচ্ছে আরও প্রবল হবে।