কালি প্রতিমার পায়ে রক্ত বার করেছিলেন অলৌকিক শক্তির অধিকারী সাধক কমলাকান্ত
সুজিত দত্ত, বর্ধমান, ১৩ অক্টোবরঃ মায়ের থেকে যাতে তাকে আলাদা না করা হয় সেটাই ছিল তার শেষ ইচ্ছা। তাই তন্ত্রসাধক ভক্তের মৃত্যুর পর তারই সমাধির উপর মাতৃমূর্তি স্থাপন করে দেন বর্ধমানের মহারাজা। সেই থেকে সাধক কমলাকান্তের নামানুসারেই পুজিতা হয়ে আসছেন বর্ধমানের অন্যতম ঐতিহাসিক 'কমলাকান্ত কালী'। মৃন্ময়ী মূর্তির মধ্যে মায়ের অস্তিত্ব প্রমান করতে মায়ের পায়ে বেল কাঁটা ফুটিয়ে রক্ত বার করেছিলেন কমলাকান্ত। এছাড়াও বিভিন্ন অলৌকিক কর্মকান্ড জড়িত আছে এই কালিমন্দিরকে ঘিরে। বর্ধমানে বিখ্যাত কিছু ঐতিহাসিক কালীমন্দির রয়েছে যার মধ্যে কমলাকান্ত কালীমন্দির অন্যতম। অলৌকিক জনশ্রুতি বংশপরম্পরায় ছড়িয়ে পরেছে ভক্তদের মাঝে, যা কমলাকান্ত কালীর আকর্ষনের মূল কারন। ভক্তের সমাধির উপর মায়ের মূর্তিস্থাপনের নজির যেমন বিরল, তেমনি ভক্তের নামেই মায়ের পরিচিতির বিষয়টিও অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না। সাধক কমলাকান্ত ভট্টাচার্য্য বর্ধমান শহরের কোটালহাটের ওই স্থানেই পঞ্চমুন্ডি স্থাপন করে মা কালীর তন্ত্রসাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন। তার ক্ষমতায় অভিভূত হয়ে তদানীন্তন বর্ধমান মহারাজ তেজচন্দ্র মহাতাব তাকে কোটালহাটে একটি জমি প্রদান করেন মায়ের আরাধনার জন্য। পরে কমলাকান্তের মৃত্যুর পর তার সমাধির উপরেই তিনি মন্দির নির্মান করেন। এই মন্দিরটির স্থাপন করা হয়েছিল ১২১৬ বঙ্গাব্দ তথা ১৮০৯ খ্রীস্টাব্দে। অর্থাৎ ২১৩ বছর ধরে কমলাকান্ত কালিবাড়িতে দেবী কালিকা ভক্তের নামে আরাধ্য হয়ে আসছেন। বর্ধমান শহরের বোরহাটে অবস্থিত ওই কালীমন্দিরটির মাতৃপ্রতিমা প্রায় সাড়ে ছয়ফুট কষ্টি পাথরের তৈরী। সাধারণত কষ্টি পাথরের তৈরী এতবড় কালি মূর্তি দেখা যায় না। এই কালিমূর্তির মধ্যে রয়েছে ভগবান শ্রীকৃষনের আদল। তাই রক্তবীজ বিনাসীনি সেই উগ্রমূর্তি এখানে নেই। তার পরিবর্তে শান্ত স্বভাবে দেবী যেন এখানে অভয় দিচ্ছেন সকলকে।