দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ চিকিৎসকদের মতে স্তনে মোটামুটি চার ধরনের ক্যান্সার হয়। একটির জন্য দায়ী ইস্ট্রোজেন রিসেপ্টর কোষ (ইআর টাইপ), একটির জন্য দায়ী প্রোজেস্টেরন রিসেপ্টার কোষ (পিআর টাইপ) এবং আর একটির জন্য দায়ী হিউম্যান এপিডার্মাল গ্রোথ রিসেপ্টর কোষ (এইচইআর টাইপ)।তবে এবার ব্যাঙের চামড়া আর লালা থেকে বেরোয় এক ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক বুফোটালিনের নিয়ন্ত্রিত ডোজ প্রয়োগ করে স্তন ক্যান্সারে অবনতি ঠেকানোর দিশা দেখাচ্ছেন দুই বিজ্ঞানী।
উপরিউক্ত তিন ধনের ক্যান্সারেরই প্রথাগত চিকিৎসা থাকলেও চতুর্থ এক প্রকার স্তন ক্যান্সার যা ট্রিপল নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার (টিএনবিসি) নামে পরিচিত তাতে কাজ করে না প্রথাগত সার্জারির পর কেমোথেরাপি কিংবা ইমিউনোথেরাপির মতো প্রচলিত চিকিৎসা। এবার সেই টিএনবিসি ক্যান্সার সারানোর ক্ষেত্রেই ‘বুফোটালিন’ নামে এই নতুন ওষুধের কার্যকারিতার হদিশ মিললো একটি দক্ষিণ কোরীয় গবেষণায়।
আসানের সান-মুন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুলের ওষুধ ও জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের দুই বিজ্ঞানীর সেই গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, বুফোটালিন টিএনবিসি স্তন ক্যান্সারের ছড়িয়ে পড়া ঠেকায় দারুণ সাফল্যের সঙ্গে। গবেষণাপত্রটি সদ্য প্রকাশিত হয়েছে ‘মলিকিউলস’ নামের বিখ্যাত জার্নালে। মুখ্য গবেষক সো জিন পার্ক জানিয়েছেন, টিএনবিসি গোত্রের স্তন ক্যান্সার খুব দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে পড়ার নেপথ্যে থাকে দু’ ধরনের শারীরবৃত্তীয় ঘটনা। দু’টি ফ্যাক্টরকেই কাবু করতে সক্ষম বুফোটালিন। ফলে আটকে দেওয়া যেতে পারে ক্যান্সারের ছড়িয়ে পড়াকে।
চিকিৎসকদের মতে স্তনের ক্যান্সার কোষগুলো মূলত এপিথেলিয়াম গোত্রের হয়। কিন্তু সেগুলো যখন রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তখন কোষগুলি মেসেনকাইমা গোত্রের কোষে রূপান্তরিত হয়ে যায়। একে বলে এপিথেলিয়াল মেসেনকাইমাল ট্রান্সফরমেশন। বুফোটালিন একদিকে যেমন এই রূপান্তরকে প্রতিহত করে, তেমনই অন্যদিকে আবার স্ট্যাট-থ্রি পাথওয়েকেও প্রতিরোধ করে। এই পাথওয়ের মাধ্যমেই ক্যান্সার কোষগুলি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে চলার সঙ্কেত পেয়ে আগ্রাসী হয়ে ওঠে।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের মতে যে ভাবে বুফোটালিন স্তন ক্যান্সারের আগ্রাসনকে থামিয়ে দিচ্ছে, তেমনটা বর্তমানে প্রচলিত কেমোথেরাপিতে সম্ভব নয়। তাই নতুন এই গবেষণালব্ধ ফলাফল দারুণ আশার সঞ্চার করছে, সন্দেহ নেই।ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনের ট্রাডিশনাল মেডিসিন বুফোটালিন হলো টোড ভেনম-ডিরাইভড এজেন্ট (টিভিএ)। এই রাসায়নিকটি আদতে বি.গার্গারিজান্স প্রজাতির ব্যাঙের চামড়া এবং প্যারোটিড ভেনম গ্ল্যান্ড থেকে ক্ষরিত হওয়া স্টেরোয়েড। সেল কালচার এবং অ্যানিম্যাল মডেলের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, টিভিএ একক ভাবে এবং অন্যান্য এজেন্টের সঙ্গে মিশে ব্রেস্ট ক্যান্সার, অ্যাকিউট মাইলয়েড লিউকেমিয়া, লাং ক্যান্সার, কোলো-রেক্টাল ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, ওরাল ক্যান্সার, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার, মেলানোমা, ন্যাসো-ফেরিঞ্জিয়াল কার্সিনোমা, অস্টিয়োসার্কোমা, কোলাঞ্জিও-কার্সিনোমা, মায়েলোমা ইত্যাদির মতো ক্যান্সারের চিকিৎসাতেও কাজ করে।