কলকাতা, ২৭ ফেব্রুয়ারি: শৈলেন মান্না ভারতীয় ফুটবলের একজন প্রবাদপ্রতিম বাঙালি ফুটবলার। সকলের কাছে তিনি মান্নাদা বলেই পরিচিত। তিনিভারতীয় আন্তর্জাতিক ফুটবলের প্রবাদ প্রতীম ডিফেন্ডার ছিলেন। অলিম্পিক এবং এশিয়ান গেমসে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ভারতকে অনেক সম্মান এনে দিয়েছিলেন। তাঁর প্রিয় দল ছিল মোহনবাগান। শৈলেন মান্নাই এশিয়ার একমাত্র খেলোয়াড় ছিলেন যিনি ১৯৫৩ সালে ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচিত বিশ্বের ১০ জন সেরা অধিনায়কের তালিকায় ছিলেন।
খেলোয়াড় থেকে প্রশিক্ষক বা ক্লাবের কর্মকর্তা সব ভূমিকাতেই শৈলেন মান্নার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। হাওড়া জেলার ব্যাটরায় শৈলেন মান্নার জন্ম ১৯২৪ সালের ১লা সেপ্টেম্বর। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি ফুটবল খেলা শুরু করেন। ১৯৪২ সালে তিনি হাওড়া ইউনিয়ন ছেড়ে মোহনবাগানে যোগ দেন। দীর্ঘ আঠারো বছর তিনি এই ক্লাবে খেলে অবসর নেন। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি মোহনবাগান ক্লাবের অধিনায়ক ছিলেন। এই ক্লাবে খেলাকালীন কোনওরকম পারিশ্রমিক নেননি। তিনি তাঁর অধিনায়কত্ত্বে থাকা মোহনবাগান ৫ বার ডুরান্ড কাপ এবং ৬ বার আইএফএ শিল্ড জেতে। শুধু জাতীয়স্তরেই নয় আন্তর্জাতিক স্তরেও তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। ১৯৪৮ সালের লন্ডন অলিম্পিকে তিনি ভারতীয় জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। এই টুর্নামেন্টে তিনি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে একটা পেনাল্টি মিস করেন। সেবার ফ্রান্সের কাছে ২-১ গোলে হারলেও খালি পায়ে ফুটবল খেলে ভারতীয় টিম সবার নজর কেড়েছিল। এমনকি সেবার রাজকুমারী মার্গারেটও ভারতীয় ফুটবলারদের প্রভূত প্রশংসা করেন। বাকিংহাম প্যালেসে রাজকুমারী সরাসরি শৈলেন মান্নাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আপনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে খালি পায়ে খেলে কিভাবে এত ভাল রক্ষণ করতে পারেন। উত্তরে শৈলেন মান্না বলেছিলেন, খেলার আসল শক্তিটা থাকে মাথায়। স্বাধীনতার পরে ভারতের ফুটবলকে পুনরুত্থান ঘটাতে শৈলেন মান্নার অবদান ছিল অসামান্য।
তাঁর অধিনায়কত্ত্বে ১৯৫১ সালে ভারত এশিয়ান গেমসে সোনা পায়। ১৯৫২ সালে হেলসিংকি অলিম্পিকেও তিনি ভারতের অধিনায়ক ছিলেন এবং ১৯৫৪ সালের এশিয়ান গেমসে ভারতীয় দলের একজন সদস্যও ছিলেন। ১৯৬১ সালেই তিনি মোহনবাগান ক্লাবের প্রশিক্ষক হন। এরপর মোহনবাগান দলের প্রশাসনিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হন। ক্লাবের ফুটবল সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকের পদে ছিলেন। ১৯৭১ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। এছাড়া ২০০০ সালে এ আই এফ এফ শৈলেন মান্নাকে ফুটবলার অব দ্যা মিলেনিয়াম সম্মানে ভূষিত করে। ২০০১ সাল তিনি মোহনবাগান রত্ন পান। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পরে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ২০১২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আজকের দিনে ভারতীয় ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র হারিয়ে যান পৃথিবী থেকে। আজ এই উজ্জ্বল নক্ষত্রকে স্মরণ করার দিন।