দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ দুই বাংলার মাঝে তিরতির করে বয়ে চলেছে ইছামতী, আর সেই নদীটিই দুর্গাপুজোর দশমীর দিন হয়ে ওঠে দুই বংলার মিলনক্ষেত্র। এই নদীতে দুই বাংলার দুর্গা বিসর্জন দেখার অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে অনন্য। তবে এই বিসর্জনের অভিজ্ঞতাই টাকির এক ক্ষুদের মধ্যে সৃষ্টির ভাবনার সূচনা করে। কথায় বলে শেষ বলে কিছু হয় না, শেষ থেকেই আবার শুরু হয় নব প্রানের। ঠিক সেই আক্ষরিক কথাগুলিই সত্যি হয়ে উঠেছে টাকির ছোট্ট কুণালের হাতে। টাকির কাহারপাড়ার বাসিন্দা কুণাল মণ্ডল। বাবা-মায়ের কাছে ইছামতীর ভাসানের গল্প শুনে আর দেখে তার অদম্য ইচ্ছা হয়, দেবী মূর্তি গড়ার। যেমন ইচ্ছে, তেমনই তার ইচ্ছেপূরণের কাহিনি এগিয়েছে সাফল্যের পথে। নদীর ধারের এঁটেল মাটি, বিচালি, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ধীরে ধীরে সে তৈরি করেছে দশভুজা। এখন স্বপ্ন একটাই। নিজের তৈরি মাতৃমূর্তি বিদেশে পাড়ি দিক।
কাঁচা হাতের কাজ নয়, টাকির সপ্তম শ্রেণির ছাত্র কুণালের হাতে তৈরি মৃন্ময়ীর রূপ পেশাদার শিল্পীর মতো।চতুর্থ শ্রেণি থেকেই খেলার ছলে হাতে মাটি নিয়ে তৈরি করতে থাকে একের পর এক ঠাকুর। এখন ছোট থেকে বড় সব প্রতিমাই অনায়াসে তৈরি করে ফেলছে এই ক্ষুদে শিল্পী। ইছামতী নদীর এঁটেল মাটি, বিচুলি, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি করে ফেলেছে চার ফুটের দুর্গাও। পেশাদার শিল্পীর মতই মৃন্ময়ী রূপ দিয়েছে তাকে। এবার অপেক্ষা রং-তুলি দিয়ে মৃন্ময়ী ময়ের চিন্ময়ী রূপ ফুটিয়ে তোলার।
স্কুল যাওয়া ও পড়াশোনার মাঝে যেটুকু সময় পায় কুণাল, সেই সময়ই সারা বছর কখনও দুর্গা, আবার কখনো কালী বা সরস্বতী তৈরিতে মেতে ওঠে। বিশ্বকর্মা থেকে কার্তিক ও গণেশ সব ধরনের ঠাকুরই এই খুদে শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় রাজ্যের বিভিন্ন মণ্ডপে পৌঁছে যাচ্ছে। বাবা তারক মণ্ডল আগে ভ্যান চালাতেন, এখন টোটো চালান। তা থেকেই সঞ্চয় করে ছেলেকে একটু অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন তিনি। কুণাল সেই অর্থ দিয়ে তিলতিল করে গড়ে তোলে বিভিন্ন প্রতিমা। আর তা থেকে উপার্জিত অর্থ তুলে দেয় মায়ের হাতে। মা চম্পা মণ্ডল গৃহবধূ, ছোট বোন তৃষা।
এই ছোট খুদের স্বপ্নের উড়ানে ভরুক নতুন রঙ, বছর বছর তার হাতের ছোঁয়ায় রুপ দান হোক মায়ের, সাথে একটাই আশা এই ক্ষুদের ইচ্ছা পূরণ করুক মা।