দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বাঙালি বরাবরই উৎসব প্রিয়, বাংলার ১২ মাসের প্রতি মাসেই কোনো কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান পালিত হয়। এই সকল অনুষ্ঠান গুলির প্রত্যেকটিরই একটি ধর্মীয় গুরুত্ব থাকলেও কিছু কিছু অনুষ্ঠানের সামাজিক গুরুত্ব ও রয়েছে। তেমনই সামাজিক রুপে গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষ্ঠান হল জামাই ষষ্ঠী। সাধারনত কন্যার সুখী সংসারের কামনায় জামাইষষ্ঠী করে থাকেন কন্যার মা। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে ষষ্ঠী দেবীর পুজো করা হয়। বিবাহিত মেয়ে এবং জামাইকে আমন্ত্রণ করে জামাইয়ের কপালে মা ষষ্ঠীর ফোঁটা এবং হাতে হলুদ মাখানো সুতো বেঁধে মঙ্গল কামনা করেন শাশুড়ি মায়েরা।
তবে এখানেই শেষ নয় এর সাথে সমান্তরাল ভাবে চলতে থেকে জামাই আপ্যায়ন ও। সকালে ফলাহার দিয়ে শুরু করে , জল খাবারে নানা বিধ মিষ্টি ও সাথে লুচি সবজির পালা মিটতে না মিটতে দুপুরের ভূরিভোজ প্রস্তুত হয় আমিষ নিরামিষের ষোড়শ ব্যাঞ্জনে। যদি ও এই লোকাচারের এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিকা শাশুড়িরা এখন বিবিধ রেস্তেঁরাতে ও আজকাল জামাই ষষ্ঠী পালনের জন্য টেবিল বা লাউঞ্চ বুক করছেন, সেখানেই পালিত হচ্ছে জামাই ষষ্ঠী।
জামাই ষষ্ঠীর ক্ষেত্রে ধর্মীয় কারনের থেকে লকিক তথা সামাজিক কারনই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারনত পুরাকালে বাংলার মেয়েদের কাছে ঘরকন্যাই ছিল তাদের সমস্ত পৃথিবী। তবে সেই সময় সমাজ ছিল বহুবিবাহের মতো কুসংস্কারের নাগপাশে আবদ্ধ। এই অবস্থায় জামাইকে খুশি রাখার চেষ্টা করতেন মেয়ের বাড়ির লোকজন। তৎকালিন সময়ে সামাজিক নানা বাধানিষেধের দরুন সারাবছর মেয়েকে দেখতে পেতেন না মা-বাবারা, ফলে জামাইকে আমন্ত্রণ করলে বছরে অন্তত একটিবার মেয়ের দেখাও মেলে। এই সব কারণে ষষ্ঠীপুজোর লৌকিক প্রথাই হয়ে উঠল বাঙালির জষ্টি মাসের উৎসব। জ্যৈষ্ঠ মাসের ষষ্ঠী তিথিতে প্রথম প্রহরে ষষ্ঠী পুজো করা হয়। তবে এর একটি ধর্মীয় দিক ও আছে, মনে করা হয় যে মা ষষ্ঠীর কৃপায় মেয়ে জামাই-র সংসারে সন্তান লাভ হবে এই ব্রতের মাধ্যমে।
এ বছরের জামাই ষষ্ঠীর দিনক্ষন
তারিখ- ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ (বাংলা), ২৫ মে (ইংরেজি)
বার-বৃহস্পতিবার
ষষ্ঠীর সময় নির্ঘণ্ট
ষষ্ঠী শুরু ৩২৮ মিনিটে (রাত্রি), ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
ষষ্ঠী শেষ ৫২৬ মিনটে (বিকাল) ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০।
জামাই ষষ্ঠী পূজার রীতি
জামাইষষ্ঠীর দিন জামাইয়ের হাতে হলুদ মাখানো সুতো বেঁধে দেন শাশুড়ি মা। এরপর মঙ্গল কামনায় তেল-হলুদের ফোঁটা কপালে দিয়ে তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করেন। মাথায় ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করেন মেয়ের মা। সেই সঙ্গে থালায় সাজিয়ে দেওয়া হয় পাঁচ রকমের গোটা ফল , মিষ্টি । পরে দুপুরে জামাইয়ের জন্য শাশুড়ি মায়ের নিজের হাতে রান্না করা নিরামিষ আমিষ পদের সমাহারে ষোড়শ পদ সাজিয়ে দেওয়া হয় জামাই-র জন্য। সাথে উপঢৌকন হিসাবে নতুন বস্ত্র ও সোনা ও দেওয়া হয়ে থাকে।