কলকাতা, ২০ সেপ্টেম্বর : হুঁকোমুখো হ্যাংলা বাড়ি তার বাংলা মুখে তার হাসি নাই দেখেছ? কিংবা,“শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে-তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে গঙ্গারামকে পাত্র পেলে? জানতে চাও সে কেমন ছেলে?“— এ রকম অসংখ্য ছড়া আমরা প্রবীনরা পড়েছি শৈশবে। স্কৃুলেই পাঠ্যপুস্তক ছিল ‘আবোল তাবোল’।
ঠিক ১০০ বছর পূর্ণ হল সুকূমার রায়ের সেই ‘আবোল তাবোল’-এর। আজকের শৈশব অনেকখানি বদলে গিয়েছে। এখন যারা মা-বাবার হাত ধরে পুজো দেখতে যায়, তারা হয়তো অনেকেই সুকুমার রায়ের ছড়ার নানা চরিত্রর সঙ্গে পরিচিত নয়। সামগ্রিক ভাবে বাঙালির বই পড়ার অভ্যাসও কমেছে।এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনেকেই চিরকালীন এইসব ছড়ার সঙ্গে পরিচিত নয়। সুকুমারীয় জগতেই এবার সেজে উঠছে হাতিবাগান নবীন পল্লির শারদোৎসব।
বাঙালির দুর্গাপুজোর সঙ্গে সুকুমার-বন্ধন সেভাবে এর আগে দেখা যায়নি। রামগরুড়ের ছানা কিংবা হুঁকোমুখো হ্যাংলাদের সঙ্গে বাঙালির পরিচয় সেই শৈশবেই। বয়স যত বাড়ে সে সব চরিত্রের মাত্রা বদলে যায়। ছোটবেলার বোঝা না-বোঝার যে অনাবিল আনন্দের জগৎ যে কতখানি সামাজিক বার্তাবহ, আমরা ক্রমে তা অনুধাবন করি।
শৈশব তাই ফুরিয়ে যায়, সুকুমার ফুরোন না। একশো বছর পেরিয়েও ‘আবোল তাবোল’ বাঙালি সাংস্কৃতিক মানচিত্রে শুধু প্রাসঙ্গিক নয়, অনিবার্য দিকচিহ্ন হয়েই থেকে যায়। সেই সঙ্গে সুকুমারের প্রয়াণেরও এটি শতবর্ষ। অতএব বাঙালি যদি তাঁর সাংস্কৃতিক উদযাপনে মাতে, তবে সুকুমার-স্মরণ অবধারিত হয়ে ওঠে। সেই ভাবনা থেকেই সুকুমার-উদযাপনের আয়োজন উদ্যোক্তাদের।
উদ্যোক্তাদের আশা, এই সুকুমার-সেলিব্রেশন শুধু পুজোর পরিধিতে যেন আটকে না থাকে। তা যেন নতুন প্রজন্মের বাঙালির কাছে হয়ে ওঠে সুকুমার-হাতেখড়ি। আলো-ছায়ার মায়ায় সুকুমারীয়-ভুবনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে যদি কেউ বাড়ি ফিরে ‘আবোল তাবোল’-এর পাতা ওলটায়, তবে মন্দ কী! বাঙালির পুজো বরং এভাবেই এবছর হয়ে উঠুক সুকুমার-উৎসব।