দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক : বয়স তখন মাত্র ৩৩। সুঠাম গড়ন, মেদহীন শরীর। ঘন কালো চুলে বয়সের ছাপ বলতে কিছু নেই। ত্বক ঝকঝকে, চোখে আত্মবিশ্বাসের ঝলক। এমন এক নায়ককে হঠাৎ ‘বৃদ্ধ’ দেখাতে হবে পর্দায়—পুরো এক সময়কাল জুড়ে বার্ধক্যের ছাপ ফুটিয়ে তোলা হবে চরিত্রে।
যেমনটা শোনা যায়, অনেক নায়িকাই ক্যারিয়ারের মাঝপথে পর্দায় মায়ের চরিত্রে আসতে চান না, ঠিক তেমনই এক সময় টলিউডের অনেক নায়কও বার্ধক্যের চরিত্র করতে কিছুটা সঙ্কোচবোধ করতেন। প্রায় ৯-১০ বছর আগেও ছিল সেই মানসিকতা।
সেই সময় এক নায়কের বুড়ো সাজায় কোনও আপত্তি নেই। চিত্রনাট্যের খাতিরে পর্দায় তাঁকে দেখানো হবে ৭৫। কী করে?
অবশ্যই প্রস্থেটিক মেকআপ এবং রূপটান শিল্পীর হাতযশে। শুধু এতেই কি বাজিমাত করা যায়! নায়ককে তার জন্য কতটা কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে? প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, অনেকটা।
ন’বছর আগে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ধূমকেতু’ ছবিতে এমনই কিছু ঘটেছিল। ৩৩-এর দেব চিত্রনাট্য মেনে ৭৫ হয়েছিলেন। তাঁকে ‘বৃদ্ধ’ বানাতে বলিউড থেকে উড়ে এসেছিলেন বিশিষ্ট রূপটান শিল্পী বিক্রম গায়কোয়াড়। এর জন্য ছবির নায়ককে কতটা কৃচ্ছ্রসাধন করতে হয়েছিল?সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক জানিয়েছেন, বৃদ্ধের রূপটান নেওয়ার আগে মধ্যরাতে খেয়ে নিতেন দেব। কারণ, মেকআপ নেওয়ার পর আর ভারী বা শক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। ভোর থেকে শুরু হত রূপটান। সকালের আলো ফুটলেই নায়ক ‘বৃদ্ধ’! ভীষণ সাবধানে হাঁটা চলা করতে হত তাঁকে। কথা বলার সময়েও খেয়াল রাখতে হত, রূপটান যেন নষ্ট না হয়। চোখে ভারী চশমা।
বার্ধক্য মানে শুধুই তো ত্বকে বলিরেখা বা কুঞ্চন নয়। চেহারাতেও বার্ধক্যের মেদ জমে। রূপটানে না হয় মুখের ভোল বদলে দেওয়া গেল, শরীর ভারিক্কি হবে কী করে? নায়ক তো ছিপছিপে, মেদহীন! খবর, নকল ভুঁড়ি লাগিয়ে উপরে জামা পরিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। পরানো হয়েছিল ভারী পোশাক। এতেও ক্যামেরায় চেহারা স্বাভাবিকের থেকে মেদবহুল দেখায়।
ছবির পুরো শুটিং নৈনিতালে হয়েছিল। তাই গরমে রূপটান গলে যাওয়ার সমস্যায় পড়তে হয়নি দেবকে। তার পরেও সারা ক্ষণ যথেষ্ট সাবধানে ছিলেন তিনি। সেটে সারা দিন তরল খাদ্যই ছিল ভরসা। যাতে শক্ত খাবার চিবোতে গিয়ে বিশেষ রূপটান ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দেব ভাল করে খাওয়া দাওয়া করতেন শুটিং শেষে। অর্থাৎ, কমবেশি ২৪ ঘণ্টা পর! এ ভাবে একদিন নয়, টানা অনেকগুলো দিন শুটিং করেছেন তিনি। তার পরেও কৌশিকের মনখারাপ, “বড় আফসোস, যিনি দেবকে এত সুন্দর সাজিয়েছিলেন সেই রূপটানশিল্পী বিক্রম গায়কোয়া প্রয়াত। ছবিমুক্তির দিন আমরা ওঁকে পাব না!”