দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বৃষ্টির সঙ্গে ঘন কুয়াশা, এমতাবস্থায় আটকে থাকা পর্যটকদের ফেরাতে হেলিকপ্টারের উপর ভরসা করতে পারছে না সিকিম প্রশাসন। উপরি টান পড়ছে মজুত খাবারে। লঙ্গরখানা খুলতে হয়েছে খুলতে হয়েছে লঙ্গড়খানা। রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা এবার আটক পর্যটকদের লাচুং থেকে হাঁটিয়েই ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
লাচুং থেকে পর্যটকেরা গাড়িতে টুং পর্যন্ত আসবেন। সেখান থেকে ১৭ কিলোমিটার পথ হেঁটে তাঁদের পৌঁছতে হবে মঙ্গনে। তারপর পর্যটন সংস্থার গাড়িতে চেপে তাঁদের গ্যাংটকে ফিরতে হবে।
প্রথমত, পাহাড়ি রাস্তায় ১৭ কিলোমিটার হেঁটে মঙ্গনে ফেরা আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান হলেও দুর্গতির সেখানেই শেষ হবে না। কেননা, লাগাতার বৃষ্টির জেরে রবিবার সকাল থেকে দফায় দফায় যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে। ফলে গ্যাংটক থেকে শিলিগুড়ি ফেরার জন্য কালিম্পং-লাভা-গোরুবাথানের ঘুরপথই ভরসা। তার পরেও দুর্ভোগের শেষ হবে বলা যায় না। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যাঁদের ট্রেন ও বিমানের টিকিট বাতিল হয়েছে, তাঁদের শিলিগুড়িতে এসে ফের অপেক্ষা করতে হবে।
তবে এই ব্যাপারে সরকারি ভাবে সিকিম রাজ্য প্রশাসনের কোনও কর্তাই কোনও বিবৃতি দেননি। লাচুং থেকে পর্যটকদের ফেরানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ সিকিমকে (টাস)। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রমেশ বসনেট বলেন, 'উত্তর সিকিমের আবহাওয়া খারাপ। এই অবস্থায় হেলিকপ্টার উড়তে পারছে না। আমরাই পর্যটকদের ফেরানোর ব্যবস্থা করব। যে সংস্থার গাড়িতে চড়ে পর্যটকেরা উত্তর সিকিমে গিয়েছিলেন তাঁদেরই পর্যটকদের মঙ্গন থেকে গ্যাংটকে ফেরার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশ সিকিমের সমস্ত পর্যটন সংস্থাকে মানতে হবে।'
গত ১০ জুন থেকে সিকিমে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। উত্তর সিকিমে সেতু ভেসে গিয়েছে। ধস নেমে বাড়ি ভেঙেছে। শতাধিক মানুষ নিরাশ্রয় হয়ে পড়েছে। ধসে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। আর প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ে ঘোর বিপাকে পড়েছেন উত্তর সিকিমে বেড়াতে যাওয়া ১২১৫ জন পর্যটক। তার মধ্যে অন্তত সাতশো বাঙালি রয়েছেন। যাঁরা লাচুংয়ে ছিলেন, তাঁরা হোটেলে রাত কাটিয়েছেন। যাঁরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে মাঝপথে আটকা পড়েছেন, তাঁরা হোটেল না-পেয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন চুঙথাঙের একটি গুরুদোয়ারায়।
গত কয়েকদিন তাঁরা গুরুদোয়ারার লঙ্গরখানার দেওয়া খাবার খেয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। সকলেই বাড়ি ফেরার জন্য উদগ্রীব। পর্যটকদের পরিবারের লোকেদের উৎকণ্ঠায় আরও চাপে পড়েছে সিকিম রাজ্য প্রশাসন। তার পরেই সোমবার হেঁটে ও গাড়িতে ফেরানোর পরিকল্পনা। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল মনে করেন, 'সিকিম রাজ্য প্রশাসনের বাস্তব পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেই পদক্ষেপ করা উচিত।'
প্রায় একই মন্তব্য করেছেন ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের কর্তা কল্পক দে। তিনি বলেন, 'পর্যটকদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু টুং থেকে মঙ্গন পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার পাহাড়ি পথে কতজন পর্যটক হাঁটতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।'
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের গ্যাংটক শাখা সূত্রে জানা গিয়েছে, সিকিমের আবহাওয়ার দ্রুত উন্নতির সম্ভাবনা কম। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সিকিমে লাল সঙ্কেত জারি করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে দার্জিলিং এবং কালিম্পংয়েও। শনিবার রাতেই ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয় দার্জিলিংয়ে। তার জেরে শিলিগুড়িতে মহানন্দা ও বালাসন নদী ফুলে উঠেছে।
গোটা দার্জিলিং পাহাড়ি এলাকা জুড়েই বিক্ষিপ্ত ভাবে ধস নেমেছে। কার্শিয়াংয়ের সিটংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ। এদিন দিনভর ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের লিকুবীরে উঁচু পাহাড় থেকে পাথর গড়িয়ে পড়ায় ওই এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।